রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

সীতাকুণ্ডে গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, জড়িতদের শাস্তির দাবি

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ২১ জুন ২০২৫, ২০:৫০
সীতাকুণ্ডে গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, জড়িতদের শাস্তির দাবি
ছবি: যায়যায়দিন

সীতাকুণ্ডে গৃহবধূ ফাতেমা আক্তারকে আগুন দিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী মুসলিম উদ্দিনের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী।

তবে এ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত ফাতেমার শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার (২১ জুন) সকালে সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ ৫টি দাবি তুলে ধরেন তারা। এর আগে সৈয়দপুর উত্তর বগাচতর এলাকাবাসী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান, উত্তর বগাচতর একালার বাসিন্দা মহিবুর রহমার শওকত, খাইরুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিন ও নেছার উদ্দিন মেজবা।

এদিকে উত্তর বগাচতর এলাকার বাসিন্দা ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল যাকারিয়া সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, গৃহবধু ফাতেমা আক্তার মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন দক্ষিণ সোনা পাহাড় এলাকার নুরুল আবছারের মেয়ে। ১০ বছর আগে সীতাকুণ্ড উপজেলার ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর গ্রামের নুরুল মোস্তফার ছেলের সাথে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে মুসলিম উদ্দিনের বিবাহ হয়।

এরপর থেকে তার স্বামী ও শাশুড়ি কর্তৃক শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন ফাতেমা আক্তার।সর্বশেষ গত ১৪ জুন স্বামী মুসলিম উদ্দিন আবারও ফাতেমাকে মারধর করে এবং একপর্যায়ে ফাতেমাকে গৃহবন্দি করে শিরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়।

অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করান।আগুনে দগ্ধ হওয়ার ৫দিন মৃত্যুর সাথে অভিরাম লড়াই করে গত ১৮ জুন বুধবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক)হাসপাতালে তিনটি ছেলে সন্তান রেখে মারা যান তিনি ফাতেমা।তার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ অংশ পুড়ে গিয়েছিল ।

স্বামী মুসলিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, আশপাশের প্রতিবেশীদের তথ্যে আমরা জেনেছি যে, মারধরের এক পর্যায়ে ফাতেমাকে গৃহবন্দী করে আগুন লাগিয়ে দেয় স্বামী মুসলিম। আগুনের তীব্রতায় ফাতেমার চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসে, ততক্ষণে শরীরের বেশির ভাগ পুড়ে যায়। ঘটনার সময় মুসলিম প্রথমে দাবি করে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগেছে ফাতেমার।

এরপর দাবি করে স্ত্রী নিজেই শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অথাৎ তার কথাবার্তা আমাদের মনে সন্ধেহ হয়। তিনি বলেন, ঘটনার পর এলাকার কয়েকজন যুবক মুসলিমের বাড়িতে যান। তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান হাতে টেনে তোলা মুষ্টিবদ্ধ চুল।সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগার কোনো কোনো চিহ্ন খুঁজে পাননি তারা। মুসলিমের বড় ছেলে বলেছে, ঘটনার দিন মাকে তার বাবা মেরেছে। গলাও টিপে ধরছিল। এলাকাবাসীর ধারণা, সম্প্রতি মুসলিম গোপনে দ্বিতীয় বিবাহ করেছে।

হত্যার রহস্য উন্মোচনের কথা জানিয়ে যাকারিয়া আরো বলেন, ফাতেমা অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছিল। প্রতিবেশীরা বলছে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে মুসলিম ও তার মা। অনেকে বলছে, ওইদিন মারধরের মাত্রা চরম মাত্রায় ছিল। তাই সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে ৫টি দাবি তুলে ধরেন এলাকাবাসী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আনদোলনের ছাত্ররা।

সেসব দাবিগুলো হচ্ছে,অভিযুক্ত মুসলিমকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আনগত বিচার প্রক্রিয়া আওতায় আনতে হবে,দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, ফাতেমার পরিবারকে আইনি ও মানসিক সহায়তা প্রদান করতে হবে ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা আরও জোরদার করতে হবে।

এবিষয়ে ফাতেমার ভাই নুর নবী ও বাবা নুরুল আবছারের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান,ফাতেমা বিভিন্ন সময় স্বামীর মারধর ও শাশুড়ির অত্যাচার সইতে না পেরে বাড়িতে চলে আসতো।কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও সে চলে যেতো স্বামীর বাড়ি উত্তর বগাচতর গ্রামে।

শত অত্যাচারেও তিন ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ফাতেমা মুসলিমের সংসার করে আসছে। বৃহস্পতিবার যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে ফাতেমার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হয়, তখন থেকে মুসলিম আত্মগোপনে চলে যায়। এমন কি স্ত্রীর জানাজায়ও উপস্থিত ছিল না মুসলিম। পাষণ্ড মুসলিমকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন হবে।

এঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফাতেমার বাবা নুরুল আবছার বাদি হয়ে ফাতেমার স্বামী মুসলিম উদ্দিন ও তার শাশুড়িকে আসামি করে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।সেই মামলায় ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত ফাতেমার শাশুড়ি সাজেদা বেগম(৫৫)কে গ্রেপ্তার করেছেন বলে জানান সীতাকুণ্ড মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোহাম্মদ আলমগীর।তিনি বলেন অভিযুক্ত মুসলিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে