শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ই স লা মী বি শ্ব বি দ্যা ল য়

হেমন্তের স্নিগ্ধ ক্যাম্পাস

নতুনধারা
  ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

শাহীন আলম

হালকা কুয়াশার চাদরে ডাকা স্নিগ্ধ ভোর, কচি সবুজ ঘাসের ডগায় জমা বিন্দু বিন্দু শিশিরকণা। শিউলি আর বকুলের মিষ্টি গন্ধের মোহনীয়তায় মত্ত ভোরের প্রথম প্রহর। আর এমন দৃশ্যই মনে করিয়ে দেয় হেমন্ত এসে কড়া নাড়ছে বাঙালির দরজায়।

নদীর ধারে নুইয়ে পড়া শরতের কাশফুলের পরপরই আগমন ঘটে হেমন্তের। স্নিগ্ধ হেমন্তের এমন অপরূপ সৌন্দর্য স্বভাবতই আকৃষ্ট করে প্রতিটি প্রকৃতি প্রেমিকে। স্বচ্ছ মেঘমুক্ত আকাশ আর সেই সঙ্গে গাছের পাতার ফাঁকে গলেপড়া ভোরের সোনালি আলো এ যেন প্রকৃতিকে মোহনীয় করতে অতিরিক্ত এক উপকরণ। মনে হয় যেন প্রকৃতি হাসছে তার আপন খেয়ালে। সেই সঙ্গে পাতায় জমে থাকা প্রতিটি শিশিরকণা সোনালি আলোয় মুক্তোর দানা হয়ে জ্বলে ওঠে জানান দেয় হেমন্তের আরেক ঝলক সৌন্দর্যের।

তাই তো কবি সুফিয়া কামাল হেমন্তের রূপ বর্ণনায় বলেছেন-

'সবুজ পাতার খামের ভেতর

হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে

\হকোন পাথারের ওপার থেকে

আনল ডেকে হেমন্তকে?'

ফুল মানেই সৌন্দর্য এবং পবিত্রতার প্রতীক। তাই তো হেমন্তে ফুলের বাহার সেও কম নয়। আর প্রকৃতি সাজাতে তাই দায়িত্বটাও যেন শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মলিস্নকা, ছাতিম, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি কিংবা রাজ অশোকের ওপরেই বর্তানো হয়েছে। আর হেমন্তের সকালে শিউলির সৌরভ সে তো বাঙালির প্রাণে স্নিগ্ধতার আমেজ। সেই সঙ্গে হেমন্তকে পূর্ণতা দিতে বাহারি স্বাদ নিয়ে আসে কামরাঙা, চালতা, আমলকী ও ডালিমের মতো দেশীয় ফলগুলো।

বাংলা বর্ষের ষড়চক্রের চতুর্থ ঋতু হেমন্তের আগমন কার্তিকের সঙ্গে হলেও ব্যাপ্তিটা অগ্রহায়ণের শেষ অবধি। 'কৃত্তিকা' ও 'আর্দ্রা' এ দুটি তারার নামেই হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণের নাম। শুভ্র শরতের পর শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে হেমন্ত। তাই হেমন্তকে শীতের পূর্বাভাসও বলা চলে। বাঙালি সংস্কৃতি ও ইতিহাসেও রয়েছে হেমন্তের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অগ্র ও হায়ণ শব্দ দ্বারা মূলত 'ধান' ও 'কাটার মৌসুম' বুঝায়। তাই তো সম্রাট আকবর খাজনা আদায়ের জন্য অগ্রহায়ণকেই বাংলা সনের প্রথম মাস হিসেবে ঘোষণা করে ছিলেন।

মরা কার্তিকের পর লৌকিক নবান্ন নিয়ে আসে অগ্রহায়ণ। এ যেন কৃষি প্রধান বাঙালির কাছে লক্ষ্ণী দেবীর এক অনন্য আশীর্বাদ। নবান্ন যার অর্থ নতুন অন্ন। এটি মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কৃষিজীবী গ্রামীণ ঐতিহ্যের শস্যোৎসব।

নবান্ন মানে কৃষানির অসম্ভব ব্যস্ত এক সময়। নবান্ন মানেই বাপের বাড়িতে নাইওর আসবে মেয়ে সঙ্গে জামাই। তার জন্যও যেন কমতি নেই ব্যস্ততার। তাই তো নতুন ধানের চালে তৈরি করতে হবে পিঠা, পুলি, ফিরনি, পায়েশ কিংবা ক্ষীরের মতো নানা মুখরোচক খাবার। আর দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনা লাঠিখেলা, বাউলগান ও গ্রাম্য মেলার আয়োজন ছাড়া যেন নবান্ন অপরিপূর্ণ। তাই তো হেমন্তকে উৎসবের ঋতু বললেও হয়তো ভুল হবে না।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসেও চলে হেমন্তের নানা আয়োজন। পিঠা-পুলি, ফিরনি-পায়েসসহ নানারকম মুখরোচক খাবারের গন্ধে মৌ মৌ করতে থাকে ক্যাম্পাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75914 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1