শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচ্ছেদ

শফিকুল ইসলাম শফিক
  ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

জীবনের বঁাক বদলের খেলায় অদৃষ্টের লিখন প্রতিটি পরতে পরতে সাজানো থাকে। নদীর স্রোতের মতো চলে প্রতিনিয়ত জীবনের গতি। কারও আছে শান্তি, কারও আছে যন্ত্রণা। সুখ-দুঃখে দোসর হয় প্রতিটি জীবন। কেউ সইতে পারে, কেউ পারে না। সইতে সইতে কারও মন পাথর হয়ে যায়। পাথর মন তবু প্রেম-ভালোবাসার স্মৃতি বুকে আগলে রাখে। পেয়েও হারানোর বেদনা উঁকি মারে অহনির্শ। বিচ্ছেদের কশাঘাতে খঁা-খঁা করে বুকের জমিন। রাশেদ তেমনি আজ বিচ্ছেদের অনলে জ্বলে পুড়ে ক্ষত-বিক্ষত।

রাশেদের পরিবারিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। যতদূর সম্ভব পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। বেতনও কম না। মহল্লার এক আঙ্কেলের বাসায় থাকা-খাওয়া। আঙ্কেলের বাসা থেকে কয়েক বাসা পর তানিয়াদের বাসা। রাশেদ গত ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতে পারেনি। কাজের ঝুট-ঝামেলায় একটুও নড়াচড়ার সুযোগ পায় না। রোববার সাপ্তাহিক ছুটি। অবশ্য সেদিনটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কেটে যায়। তবু কোত্থাও যেতে ভাল্লাগে না। কথা ছিল কোরবানি ঈদে সে বাড়ি যাবে। বেশ কিছু দিন আগেই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। হঠাৎ একদিন জানতে পারল, মা-বাবা তার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে। তারা ছেলের বউয়ের মুখ দেখার জন্য সদা ব্যাকুল থাকে। খবরাখবর পেয়ে রাশেদ এবার ঈদেও বাড়ি গেল না। বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেল। মা-বাবাকে কাজের অজুহাতে বশ করে ফেলল। আজও তারা ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখে বেড়ায়।

তানিয়ারা তিন বোন। সোনিয়া, জিনিয়া ও তানিয়া। তানিয়া সবার ছোট। সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। খুব মেধাবী ছাত্রী। প্রতি শ্রেণিতে বরাবরই ফাস্টর্ হয়। রূপবতী, গুণবতী। এক সঙ্গে দুটি গুণ ক’জনের থাকে রাশেদের সঙ্গে তিন বছরের গভীর সম্পকর্। তানিয়ার সম্পকের্র কথা জানার আগে তার বোনদের কথা শুনতে হবে। বড় বোনের শ^শুরবাড়ি ময়মনসিংহে। সে স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকে। আজ অবধি শ^শুর বাড়িতে যেতে পারেনি। জামাই একদম অকেজো। প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। কেউই আজেবাজে কথা বলতে সংকোচ করে না। শ^শুর-শাশুড়ি দিন দিন তাদের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। জামাই তবু শ^শুরবাড়ি ছাড়ে না।

মেজ বোনের শ^শুরবাড়ি জামালপুরে। ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে। টাকা-পয়সার কোনো অভাব নেই। তানিয়ার মা-বাবা মেজ জামাইকে খুব সম্মান করে। জামাইয়ের কথায় ওঠা-বসা করে। জামাই বাড়িতে এলে ভীষণ খুশি। হরেক রকম মাছ-গোশত রান্না। জামাই কোনটা ছেড়ে কোনটা খায় খেতে খেতে পেটের নাজেহাল অবস্থা। এবার আসি তানিয়ার কথায়। একদিন হুট করে তানিয়ার মেজ বোন-দুলাভাই তাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে গেল। তানিয়া রাশেদকে বলেও আসতে পারেনি। রাশেদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ।

এমনকি তাদের পছন্দমতো জোর করে বিয়ে দিতে চায়। তানিয়া রাশেদের স্থলে অন্য কাউকে মেনে নিতে পারবে না। এটিই তার সাফ সাফ কথা। প্রয়োজনে জীবনটা বিসজর্ন দিতে কোনো দ্বিধা নেই। কারণ তার মা-বাবা রাশেদকে খুব পছন্দ করত। তাদের সম্মতিতেই ভালোবাসা এত দূর এগিয়েছে। তারাও বলত, রাশেদই আমাদের একমাত্র ছোট জামাই হওয়ার যোগ্য ছেলে। এতদিনে রাশেদের আচার-ব্যবহারে তার যথেষ্ট নমুনাও পেয়েছে। মেজ জামাই শুধু বসে বসে খায়। তানিয়ার বাবা শহরের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। জামাই কোনোদিন শ্বশুরের ব্যবসা দেখভাল করে না।

হঠাৎ একদিন রাশেদ জানতে পারল, তানিয়ার বাবা মেয়ের বিয়ের জন্য ছেলে দেখছেন। রাশেদ একদিন তার আঙ্কেল মারফত বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল। তানিয়ার বাবা বললেন, ঘর জামাই থাকলে বিয়ে দেব। আঙ্কেল কিছুতেই রাজি হতে পারলেন না। তানিয়ার বাবা আঙ্কেলকে খুব অপমান করে তাড়িয়ে দিলেন। বললেন, রাশেদ যেন এক সপ্তার মধ্যে গাজীপুর ছেড়ে চলে যায়। অন্যথায় আমি তাকে গাজীপুর ছাড়া করব। অবশেষে আঙ্কেল মুখ বুজে প্রস্থান করেন।

অতঃপর আঙ্কেল রাশেদকে সব ঘটনা খুলে বললেন। রাশেদ থ মেরে যায়। সে বুঝতে পারল, তানিয়ার বাবা চিট করার জন্যই মেয়েকে অন্যত্র পাঠিয়েছেন। আঙ্কেল বললেন, আমি ইচ্ছা করলে তানিয়ার বাবার ঠ্যাং ভেঙে গাছে ঝুলিয়ে দিতে পারি। ভদ্র লোক হয়তো আমার ক্ষমতা টেরই পায়নি। যা হোক, মেজ বোন তানিয়াকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। তানিয়া একদিন চুপি চুপি ফোনে রাশেদের সঙ্গে কিছু কথা বলল। রাশেদও জানান দিল সেদিনের কথা। তানিয়ার বোন-দুলাভাই তাকে ভুল শুনিয়েছে। তানিয়া কখনও তা বিশ^াস করেনি।

রাশেদ বলল, তুমি সবার সঙ্গে হাসিখুশিতে দিন কাটাবে। সবাইকে বোঝাবেÑ তুমি আমাকে ভুলে গেছ। হয়তো তোমার বাবা আবার ঢাকায় নিয়ে আসতে পারে। যেখানেই থাকো, টেনশন কর না। আমি তোমার আছি, তোমারি থাকব। তুমি পড়াশোনা কর। আঠারো বছর অবধি অপেক্ষা কর। তুমি রাজি থাকলে সেদিন তোমার বাসা থেকে হাত ধরে নিয়ে আসব। তোমার বাবাকে বলব, আজ আমিই আপনার মেয়েকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গেলাম। সেদিন আর কোনো শক্তি আটকে রাখতে পারবে না। আমি জানি, তুমি পরিস্থিতির শিকার। আমাকে কোনোদিন ভুলতে পারবে না। এখন না হয় জ¦লছি, বিচ্ছেদের অনলে পুড়ছি!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<16487 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1