শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তির যুগে কিশোরী-তরুণীরা কোন পথে?

ঐন্দ্রিলা বড়ুুয়া
  ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বতর্মান আধুনিক প্রযুক্তির এবং স্যাটেলাইট চ্যানেলের যুগ। কোনো কিছু জানার প্রয়োজন পড়লে হাতে থাকা রিমোট টিপলেই চোখের সামনে সবকিছু দেখা যায় নিমেষেই। বলতে গেলে এক কথায় পুরো বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। টিভি খুললেই আমরা দেশীয় চ্যানেল পুরোপুরি বাদ দিয়ে ডুবে যাই বিদেশি চ্যানেলেÑ বিশেষ করে ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেলের সিরিয়ালে। জি-বাংলা এবং স্টার প্লাসের সিরিয়ালগুলো বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। এ জনপ্রিয়তার কারণে স্যাটেলাইট চ্যানেলের বদৌলতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পেঁৗছে গেছে এসব চ্যানেলের সিরিয়ালের প্রভাব। বাংলাদেশের ৯০% পরিবার এ চ্যানেলগুলোর সিরিয়াল ভাইরাসে আক্রান্ত। আমরা কখনো কি চিন্তা করি, এ ভাইরাসের প্রভাব আমাদের কীভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে? অনেকে এক মত হবেন, আবার অনেকে দ্বিমত পোষণ করবেন। আমরা বাংলাদেশিরা এখনো অনেক রক্ষণশীল। স্যাটেলাইট চ্যানেলের প্রভাবে আমাদের রক্ষণশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে। এখন বিভিন্ন চ্যানেল দেখে দেখে তাদের ফ্যাশন অনুকরণ করতে গিয়ে উঠতি বয়সের কিশোরী ও তরুণীরা কী রকম আধুনিক ডিজাইনসমৃদ্ধ কাপড় ব্যবহার করছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যার দরুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ইভ টিজিংয়ের মতো সামাজিক ব্যাধি। শুধু তাই নয়, ফ্যাশনের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। যার মাশুল দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের। যেমন একজন পিতা সরকারি চাকরিজীবী। মধ্যবিত্ত সংসার। তার মধ্যে ২ মেয়েকে ডজন ডজন ফ্যাশনেবল দামি জামা কিনে দেয়া কতটুকু সম্ভব? সন্তানরা অভিভাবকের অপারগতা কখনো বুঝতে চায় না। তাদের যা প্রয়োজন তা তাদের দিতেই হবে। যদি তাদের চাহিদা পূরণ করতে না পারে মা-বাবা হয়ে যায় তাদের জন্য শত্রæস্বরূপ। যার বড় প্রমাণ ঐশী। আজ ঐশী যা করেছে তাকে তো এক কথায় অপসংস্কৃতির প্রভাব ছাড়া আর কী বলা যায়? এরকম অপসংস্কৃতির প্রভাবে সন্তানরা বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীরা যারা সহজেই অনুকরণপ্রিয় তারা প্রভাবিত হচ্ছে। প্রভাবিত হয়ে বিপথে পরিচালিত হচ্ছেÑ যা সহজেই অনুমেয়। মা-বাবার কথা শুনছে না তারা। ইচ্ছামতো চলাফেরা করছে। এসব স্যাটেলাইট চ্যানেল থেকে শিক্ষণীয় কিছুই চোখে পড়ে না। এসব সিরিয়ালে দেখা যায়, শুধুই পারিবারিক দ্ব›দ্ব, হিংসা-বিদ্বেষ, সম্পত্তির লোভে খুন, মারামারি, সবসময় পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন এবং মা-বাবাকে অসম্মান করা। এসব স্যাটেলাইট চ্যানেলের সিরিয়াল দেখে দেখে আমরাও নিজের অজান্তে এরকম আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি, যা আমাদের চেতনার ভীত নষ্ট করে দিচ্ছে। আমাদের সন্তানরা বিপথে পা বাড়াচ্ছে। দেখা যাচ্ছে কাল একটি গুরুত্বপূণর্ পরীক্ষা আছে। যদি পড়তে বসতে বলেনÑ জবাব আসবে আগে সিরিয়ালটা দেখে নিই, তারপর পড়তে বসব। তোমরা সারাদিন শুধু পড়তে বলো। অথার্ৎ পড়ালেখা করার সময়ও এখন স্যাটেলাইট চ্যানেলের সিরিয়ালের ওপর নিভর্রশীল। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় পরকীয়ার কারণে স্বামী খুন বা স্ত্রীকে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া মেয়ের আত্মহত্যা, ইভ টিজিংয়ের কারণে আত্মহত্যা। এসব কেন হচ্ছে?

অনেক অভিভাবক আছেন যারা নিজেরাও এসব সিরিয়ালে আসক্ত। যার দরুণ নিজের সন্তানের দিকে নজর দেয়ার সময় তাদের হয় না। সিরিয়ালপ্রীতির কারণে সন্তানদের লেখাপড়ায় মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হচ্ছে আর অভিভাবকরা হতাশায় ভুগছে। অন্যদিকে এসব কিশোরী ও তরুণীরা তাদের আবেগময় সিদ্ধান্তের কারণে তাদের জীবনকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অনেকে মাদকাসক্ত কিংবা ইয়াবা সেবন করে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। সময় থাকতে সচেষ্ট না হলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরো ভয়াবহ দিন। যেদিন আসবেÑ হাজারো ঐশী সৃষ্টি হয়ে সমাজ তথা পরিবারকে বিপযর্স্ত করে তুলবে। তখন আমাদের কিছুই করার থাকবে না। তাই অভিভাবকদের এক্ষুনি সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। এসব স্যাটেলাইট চ্যানেলের সিরিয়ালপ্রীতি কমানোর জন্য অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সন্তানদের ধমীর্য় কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে পাশাপাশি সৃজনশীল কাজ করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করতে যাতে ওরা এগিয়ে আসে সেরকম ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যাতে কিশোরী ও তরুণীরা নিজেদের মনমানসিকতায় সুন্দর মানুষরূপে গড়ে তুলতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22044 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1