শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাগ তৈরি শিল্প বদলে দিয়েছে নারীর ভাগ্য

প্রেরণা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে নিজেরাই ব্যাগ তৈরির প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। তাদের তৈরি ব্যাগ সাতক্ষীরা শহরসহ জেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হচ্ছে। স্বামী পরিত্যক্তা ও সুবিধাবঞ্চিত নারীরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন শপিং ব্যাগ তৈরির কাজ করে
নতুনধারা
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

নন্দিনী ডেস্ক

সাতক্ষীরা জেলার অসহায়, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও সুবিধাবঞ্চিত নারীরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন শপিং ব্যাগ তৈরির কাজ করে। আর এ ব্যাগ তৈরির কাজে তাদের সহযোগিতা করছে জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রেরণা মহিলা সমবায় সমিতি নামের একটি নারী সংগঠন।

এখানে কাজ করছেন শতাধিক নারী। তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। প্রেরণার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে নিজেরাই ব্যাগ তৈরির প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। তাদের তৈরি ব্যাগ সাতক্ষীরা শহরসহ জেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হচ্ছে।

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার স্কুল শিক্ষিকা শম্পা গোস্বামী সমাজের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ২০১৫ সালে উপজেলা মহিলা অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে প্রেরণা মহিলা সমবায় সমিতির ব্যানারে এ কাজ শুরু করেন।

প্রথমে তিনজন নারীকে নিয়ে তিনি কাগজের ব্যাগ তৈরি করা শুরু করেন। আর এ সংগঠনের নাম দেন প্রেরণা। এরপর তারা কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করা শুরু করেন। চার বছরের ব্যবধানে এ প্রেরণার সদস্য সংখ্যা এখন শতাধিক।

তাদের তৈরি কাপড়ের ব্যাগ বিক্রি হয় জেলার প্রায় সব দোকানে। সাতক্ষীরা শহরের লেক ভিউ, ভাগ্যকুল, আল-বারাকা, প্রিয় গোপাল, মাওয়া চাইনিজ, নুসরাত ফ্যাশন, জায়হুন, আদি ঘোষ, সাগর সুইটসসহ ৩০টি নামকরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রেরণার তৈরি ব্যাগে তাদের পণ্য বিক্রি করছেন।

নিজেদের দোকানের লেভেল লাগিয়ে তারা এ ব্যাগ তৈরি করে থাকেন। প্রতি পিস ব্যাগ তৈরি করতে তাদের খরচ হয় ২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে শুরু করে ১৩ টাকা পর্যন্ত। আর প্রতি পিস ব্যাগ তারা বিক্রি করেন ৩ টাকা থেকে শুরু করে ১৪ টাকা পর্যন্ত। প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই লাখ পিস ব্যাগ তৈরি করেন প্রেরণার নারীরা।

তারা কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রেরণা কার্যালয়ে বসে এ সব কাজ করেন। আর এ কাজে তারা ব্যস্ত সময় পার করেন। কাপড় কাটা, লেভেল লাগানো, মেশিনে সেলাই করাসহ নানা কাজে তাদের দম ফেলার সময় নেই। এখানে কাজ করে শতাধিক নারী এখন স্বাবলম্বী।

কাজের ব্যস্ততার মধ্যে রেহানা পারভীন জানান, ছয় বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। সেই থেকে আর স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। কাজ করার ক্ষমতা হারান। এখন তার দিন বদলে গেছে। প্রেরণা তাকে কাজ দিয়েছে।

ফাতেমা পারভীন জানান, স্বামী তিন বছর আগে তালাক দিয়েছে। একটি বাচ্চা আছে। প্রেরণায় কাজ করে তিনি সংসার চালান। আর প্রেরণার দিদি তাকে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন।

কথা হয় মহিমা পারভীনের সাথে।

সে বলল তার পিতামাতা গরিব মানুষ। লেখাপড়া করতে পারছিল না। তার শিক্ষিকা শম্পা গোস্বামীর কথামতো অবসর সময় এখানে কাজ করেন। এখন পড়াশোনা চলছে আবার পিতামাতাকে সহযোগিতা করছে সে। তার পাশে বসা নাছিমা খাতুন জানালেন তার স্বামী সামান্য কাজ করে। সামান্য উপার্জন দিয়ে আগে সংসার চলতো না। প্রেরণায় কাজ পেয়ে সে তার স্বামীকে সহযোগিতা করছে।

উপজেলার বাজার গ্রাম রহিমপুরের মঞ্জুয়ার রহমান জানান, পরিবারের লোকজন বাড়িতে বসে ব্যাগ তৈরি করে। এজন্য তিনি এসেছেন ব্যাগ তৈরির সরঞ্জাম নিতে।

প্রেরণার ব্যবস্থাপক মেহেরুন নেছা জুথি জানান, জেলার বিপণি দোকানগুলো তাদের কাছ থেকে ব্যাগ কেনার জন্য আগেই অর্ডার দিয়ে থাকে।

প্রেরণার পরিচালক শম্পা গোস্বামী জানান, যাদের বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই তারা এখানে কাজ করে। প্রেরণা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে।

সুবিধাবঞ্চিত এসব নারী প্রেরণায় কাজ করে টিকে আছে। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি-বেসরকারি সহযোহিতার প্রয়োজন। তবেই হাজার হাজার নারীর কর্মসংস্থান করা সম্ভব।

কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, প্রেরণা একটি স্বেচ্ছাসেবী নারী উন্নয়ন সংগঠন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা এখানে কাজ করে। অসহায় নারীদের বেঁচে থাকার একটি অবলম্বন করে দিয়েছে প্রেরণা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<87609 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1