শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকিত নারী মমতাজ

তারার মেলা রিপোর্ট
  ০৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০
মমতাজ

রূপকথার সেই কল্প-কাহিনীকেও যেন হার মানায় তার গল্প। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে কখনো লাখ টাকার স্বপ্ন দেখেননি তিনি। বরং স্বপ্ন না দেখেই যা পেয়েছেন- তা কখনো কল্পনাতেও ছিল না তার। অনেকটা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো নাম, যশ, খ্যাতি পেয়ে যান তিনি। গান গেয়ে গিনেস বুকে নাম লেখানো, নিজের জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ, আন্তর্জাতিক মহলে দেশের সুনাম অর্জন করা- সব মিলিয়ে মমতাজ যেন এক অবাক বিস্ময়ের নাম। ধলেশ্বরী পাড়ের সেই পালাগানের শিল্পী মমতাজ আজ সংসদ সদস্য। তাও আবার একবার-দুইবারের জন্য নয়, তিন তিনবারের সংসদ সদস্য তিনি। কনসার্ট, রেডিও-টেলিভিশনের বাইরে প্রায় সংসদে গান গেয়ে মাতিয়ে তোলেন তিনি। গেল সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গান করেন তিনি।

মমতাজ বেগম। এক দরিদ্র বাউল পরিবারে জন্ম। শৈশব-কৈশোর-যৌবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে চরম অভাব আর দৈন্যতায়। বাবা মধু বয়াতির ছিল 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' অবস্থা। ঘরহীন, সংসারহীন বাউল বাবার হাত ধরেই শিল্পী মমতাজের গানের ভুবনে পথ চলা। গানকে সঙ্গী করেই জীবনের সমস্ত ক্ষুধা নিবারণের এক জীবন্ত উদাহরণ কিংবদন্তি মমতাজ। কোনো বাধা-প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে রাখতে পারেনি গানপাগল মমতাজের স্বপ্নকে। গান দিয়েই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিনি। হাজারো দুঃখের মাঝে গান গেয়েই আনন্দ খুঁজে পান। গানেই প্রেম-ভালোবাসা, গানেই বিরহ অনুভূত করে চলছেন। ফলে সংসার জীবনের অস্থিরতা থাকলেও তা সংগীত জীবনের কোনো ছন্দপতন ঘটাতে পারেনি। বরং নিজের সুর আর ব্যক্তি স্বতন্ত্রতায় জনমানুষের আজ অতি কাছে মমতাজ। পালাগানে শুরু হলেও প্রতিষ্ঠা পান বিচ্ছেদ আর মুশির্দী গানে। কেবল দেশেই নয়, দেশের বাইরেও মেলে ধরেছেন তার এই অসাধারণ প্রতিভা। চার দশকের ক্যারিয়ারে প্রায় ৭০০-এর অধিক গান গেয়ে রেকর্ড গড়েছেন। তাকে নিয়ে বলতে গেলে অবশ্য শুরুতে বলতে হবে হানিফ সংকেতের কথা। কারণ তিনিই ২০০০ সালে গ্রাম-গ্রামান্তরের লুকিয়ে থাকা এই প্রতিভাবান শিল্পীকে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'ইত্যাদি'র মঞ্চে উন্মোচন করে দর্শকদের সামনে নিয়ে এসেছিলেন। পালাগান করে বেশ জনপ্রিয় এই গায়িকার কাছে ইত্যাদি টিম গেলে শুরুতে নাকচ করে দেন মমতাজ। বলেন, টিভিতে গান করার কোনো ইচ্ছা নেই তার। পরে হানিফ সংকেত অনেক বুঝিয়ে তাকে রাজি করান। এরপর মোহাম্মদ রফিকুজ্জামানের কথায় ও সোহেল আজিজের সুরে 'ইত্যাদি'র মঞ্চে বেজে উঠল সেই গান 'রিটার্ন টিকেট হাতে লইয়া আইসাছি এই দুনিয়ায়, টাইম হলে যাইতে হবে যাওয়া ছাড়া নাই যে উপায়'। অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পরপরই চারিদিকে ধুম পড়ে যায়। সবাই মমতাজকে খুঁজতে শুরু করেন। আর সেই দিন থেকে তিনি বনে যান দর্শকদের পছন্দের শিল্পী। আর মানিকগঞ্জের সেই পালাগানের গায়িকা থেকে সারা বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় তার জনপ্রিয়তা। মমতাজ সংগীত জীবনের বিশালতায় ঠাঁই দিয়েছেন রাজনীতি আর সামাজিক কমর্কান্ডকেও। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মমতাজ। ২০১৪ সালের নিবার্চনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাকে। সরাসরি এমপি হয়ে শত কোটি টাকা ব্যয়ে হরিরামপুর উপজেলার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, আড়াই শ' কোটি টাকা ব্যয়ে হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়ককে আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীতকরণ ও কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট ও কাঁচা-পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ, অধিকাংশ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণসহ শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। সেই ধারাবহিকতায় সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়র পেয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি।

মমতাজ বলেন, 'এলাকার মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে, তা আমি জানি। আমি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি তাদের জন্য। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ আগের যে কোনো সময়ের থেকে এখন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। ২০০৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ভালোবেসে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি বানিয়েছিলেন। এমপি হয়ে দলের ভেতর দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও বিভেদ দূর করে সংগঠনকে সুসংগঠিত করেছি। নিরলসভাবে কাজ করেছি এলাকার অবহেলিত জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে।'

রাজনৈতিক ব্যস্ততার চাপেও দেশ-বিদেশে গান করে যাচ্ছেন মমতাজ। অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন সংসদ সদস্য হওয়ার পর মমতাজ হয়তো গান থেকে অনেকটাই দূরে চলে যাবেন। কিন্তু মমতাজ বলেন, 'গান ছাড়া মমতাজ কোনো দিন থাকতে পারবে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<91153 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1