শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
জাতীয় শোক দিবস পালন

শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকরের দাবি। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হাজারো মানুষের ঢল। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ আ'লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা -যাযাদি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের রাস্তায় জমায়েত হতে থাকেন।

সকালে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। পরে সারাদিন সারাদেশের মানুষ শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে ইতিহাসের এই মহানায়ককে।

সকাল সাড়ে ৬টায় জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। দলের সভাপতি হিসেবেও শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৪ দলের অন্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও আবুল মাল আবদুল মুহিত, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম ও আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এনামুল হক শামীম, তথ্যমন্ত্রী এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির ভেতরে যান। সেখানে ঘুরে ঘুরে তার পিতার স্মৃতিচিহ্ন পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রায় আধাঘণ্টা সময় কাটান তিনি। এরপর তিনি বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রওনা হন।

সকাল ৬টার মধ্যেই অগণিত মানুষের পদচারণে ভরে ওঠে ৩২ নম্বর সড়ক। কালো ব্যানার ও বুকে কালো ব্যাজ পরিধান করেন নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। সবাই পরম শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির জনককে স্মরণ করেন।

সকাল ৭টা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো শুরু করেন। শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যেও জোরাল কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- 'বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে।'

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ১৪ দল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

পরে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাসদ এবং দলীয় সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ পড়ে ছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে প্রধানমন্ত্রী তার মা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রীসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তাদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। এরপর পবিত্র ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর

সমাধিতে শ্রদ্ধা

এরপর টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এর পরপরই তিনি সমাধি বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

স্বশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় সশস্ত্র সালাম জানায়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী সমাধি বেদির পাশে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করেন। তার মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ হোসেনও তার সঙ্গে ছিলেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বেলা ১১টার দিকে সমাধিসৌধ কমপেস্নক্সে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে মিলাদ মাহফিলের মোনাজাতে অংশ নেন।

প্রতিবারের মতো প্রধানমন্ত্রী দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ছাড়ার পর সমাধি প্রাঙ্গণ সবার জন্য খুলে দেয়া হবে। সর্বস্তরের মানুষ এরপর বঙ্গবন্ধুর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

১৯৭৫ সালের এ দিনে সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট সরকারি ছুটির দিন। সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচিতে দিনটি পালন করছে।

প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে

বিএফইউজের শ্রদ্ধা

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সাংবাদিক সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)। বৃহস্পতিবার সকালে সংগঠনের সভাপতি মোলস্না জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদের নেতৃত্বে নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে নেতারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৫ আগস্টের সব শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন। দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব।

দোয়া ও মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সভাপতি মোলস্না জালাল, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, বিএফইউজের সদস্য শেখ মামুন, ইসতিয়াক রেজা, ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাব-এডিটর কাউন্সিলসহ কয়েকটি সাংবাদিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62477 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1