সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও গঠণতন্ত্রভঙ্গের অভিযোগ

একযোগে পদত্যাগ করলেন ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা

ঢাবি প্রতিনিধি
  ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৮:১৬

ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিবের বিরুদ্ধে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ও গঠণতন্ত্রবহির্ভূত কর্মকান্ডের অভিযোগ তুলে একযোগে পদত্যাগ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা।রবিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দলটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাবি শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ সজীব, সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুমসহ সংগঠনটির বিভিন্ন হল এবং সেলের ২১ নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ (লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য) এর ১নং ধারায় দলীয় দাসত্ব ও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির বাইরে স্বাধী ধারায় ছাত্র রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভুমিকা পালন করার কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ২০২০ সালের ১০ জুলাই ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ ৮ এর ১ নং ধারা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক গণঅধিকার পরিষদের লেজুড়বৃত্তি করার অভিযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এছাড়াও লিখিতঅভিযোগ জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদ।

গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করায়, গঠনতান্ত্রিকভাবে পদ শুন্য হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব। অভিযোগ পরবর্তী গত দীর্ঘ দুই সপ্তাহেও কেন্দ্রীয় পরিষদ উক্ত বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র ও ছাত্র সমাজের প্রতি প্রতিশ্রুত আদর্শের বিচ্যুতি ঘটেছে বলে দলটির ঢাবি শাখার নেতারা মনে করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতিআরো বলেন, ‘আমরা মনে করি ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্র অধিকার পরিষদ যে প্রতিশ্রুতি এবং আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তা ভঙ্গ হয়েছে। আমাদের জাতীয় ছাত্ৰ সংগঠন প্রতিষ্ঠার যে প্রতিশ্রুতিছিলো তা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাধারন সম্পাদকের গণ অধিকার পরিষদের পদ নেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে এবং লেজুড়বৃত্তি করার মাধ্যমে সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদ ছাত্রলীগ ছাত্রদলের মতো একটি জাতীয় দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এটা ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা সম্ভব না। গণঅধিকার পরিষদ বা রেজা-নুরের রাজনীতি বাঁচানো এগুলো কখনোই আমাদের রাজনীতিতে আসার উদ্দেশ্য ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে তথাকথিত ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতি রক্ষা করার চাইতে আমাদের গঠনতন্ত্র ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।’

সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আমরা ছাত্র অধিকার পরিষদ যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিলাম- শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা, তাদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকা, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণের পক্ষে কথা বলাসহ ইত্যাদি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছি না। যে কারণে আমাদের মনে হয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় দুই নেতা তাদের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করেননি এবং লেজুড়বৃত্তিক কার্যক্রম বন্ধ করতে পারেননি। সে পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করাকেই আমরা সমাধান মনে করছি।

তবে দল থেকে পদত্যাগের করলেও শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাবেন বলে জানান দলটির নেতারা জানান।

উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাবি শাখার অন্তঃকোন্দলের কথা শোনা যাচ্ছিল। কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিলে তাদের কেন্দ্রীয় পদ শূন্য হয়েছে মর্মে জানতে চায় ঢাবি কমিটির নেতারা। পরবর্তী সময়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করতে চাইলেও কেন্দ্রীয় কমিটির অবহেলা ও সিদ্ধান্ত জানাতে সময়ক্ষেপণ করায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে