রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিবচরে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছে না চাষিরা

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
  ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৫

মাদারীপুর জেলার শিবচরে পানির অভাবে পাট পচাতে জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। খালে বিলে পানি না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পাট চাষিরা। বর্ষার ভরা মৌসুমেও খাল-বিলে পানি না থাকায় জলাশয়, ডোবা, পুকুরে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক খরচের চেয়ে বেশি খরচ হওয়াসহ পাটের গুনগত মান কমছে। পাটে কালো রং ধারন করেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এ বছর চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। শিবচরের পাটের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পানি না থাকায় কৃষকরাই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। উপজেলার নদী, মাছ চাষের পুকুর, খাল, বিলে, কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছে না তারা। কোনো উপায় না পেয়ে কৃষকরা পাট কেটে ক্ষেতেই ফেলে রাখছেন। অনেকে বন্যার পানির আশায় পাট না কেটে রেখে দিচ্ছেন।

আবার কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জাগ দিচ্ছেন । তবে পাটের ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাটের আঁশ আর সোনালি না থেকে কালো রঙের ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এতে পাটের বাজারমূল্য অনেক কম হবে বলে আশংকা কৃষকদের।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ জমির পাট কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মাঠে পানি জমেনি। জমি থেকে নদী বা খালের দূরত্ব অনেক দূর। যে কারণে সেখানে পাট নেয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নছিমন ও ভ্যানে বোঝাই করে নদী বা খালে নিয়ে ফেলছে। তবে কিছু কিছু জমির পাট কেটে মাথায় করে খালে, বাড়ির পুকুরে জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। জমি থেকে অনেক দূরে পাট নিয়ে জাগ দেওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কাদিরপুর ইউনিয়নরে সামসুল আলম নামে এক কৃষক জানান, এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবি কম, শ্রাবণ মাস শেষ হয়ে গেছে। এখনও কোথাও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমছে সেখানে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে আঁশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

ইদ্রিস আলী নামের এক কৃষক জানান, পাট চাষে কোনো লাভ নেই। অনেক খরচে জমি প্রস্তুত করা, বীজ বোপন, সেঁচ দেওয়া, সার দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাট ধোয়া পর্যন্ত যে খরচ হয়, হিসাব করলে কৃষকদের লোকসান।

পাট চাষি মোতালেব সরদার বলেন, এবার স্বাভাবিক ফলন হয়েছে। বাজার দর ভালো আছে। কিন্তু পানি না থাকার কারণে পাট কাটা সম্ভব হচ্ছে না। জমি থেকে বিভিন্ন পুকুরে পাট জাগ দেওয়ার কারণ পুকুরের মাছ মারা যাচ্ছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম হীরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় খাল-বিল ও পাড়ে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই পাট চাষে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে কৃষকের। তাদের ফিতা রেটিং সিস্টেম পাটের পচন ভালো। উপজেলা কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম জানান, খালে বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। জমি থেকে অনেক দূরে বহন করে নিয়ে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে বলে কৃষকদের পাট উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পাটের ভালো দাম না পেলে লোকশান গুনতে হবে কৃষকদের।

তিনি বলেন, পাট চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে আমাদের বিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে