মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
সহযোগিতা করেনি কৃষি অফিস, ১৫ লাখ টাকা বিক্রির আশা

ঝিনাইদহে আঙ্গুর চাষে সফল কৃষক রশিদ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
  ২০ মে ২০২৫, ১৬:০৬
ঝিনাইদহে আঙ্গুর চাষে সফল কৃষক রশিদ
ছবি: যায়যায়দিন

বিদেশী ফল আঙ্গুর চাষে সফল হয়েছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের আব্দুর রশিদ নামের এক কৃষক। তিনি তিন বিঘা জমিতে ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের ১০ থেকে ১২ জাতের প্রায় ৫০০ গাছ চাষ করছেন। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা লাল, খয়েরি ও কালো আঙ্গুর দেখতে শত শত দর্শনার্থী তার বাগানে ভিড় করছে।

রশিদের বাগানে উৎপাদিত আঙ্গুরের স্বাদও বাজারের বিক্রি হওয়া আঙ্গুরের থেকে ভালো। আব্দুর রশিদ পেশায় একজন আপাদমস্তক কৃষক। শখ কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন সবজি, ফল ও ফসলের চাষ করা। তার শখ দেশের যে কোন প্রান্তে নতুন কোন চাষের সংবাদ পেলে মাসে একদিন সময় করে সেখান থেকে ঘুরে আসা।

1

আব্দুর রশিদ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যুগিহুদা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। মহেশপুর উপজেলা শহরের পাশ ঘেষে বেয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদীর তীরে বেড়ে উঠা রশিদ ছাত্র জীবনে অত্যান্ত মেধাবী হলেও লেখাপড়া করা হয়নি। কর্ম জীবনের শুরু থেকে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও অন্যদের সহযোগীতায় কৃষি কাজ শুরু করেন। সব সময়ই তিনি চাষে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছেন। তবে, আঙ্গুর চাষে সরকারের কৃষি বিভাগ থেকে কোন সহযোগীতা পাননি বলে জানান রশিদ।

আব্দুর রশিদের আঙ্গুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতায় ঢাকা চালার নিচে ঝুলে আছে হাজার হাজার খয়েরী ও কালো রঙের রসালো আঙ্গুর। প্রথমে সবুজ থাকলেও ধীরে ধীরে খয়েরী ও কালো রং ধারন করে। এরপর সেগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এক সপ্তাহ হলো আঙ্গুর সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ ক্যারেট আঙ্গুর সংগ্রহ করছেন। প্রতি ক্যারেটে ১০ থেকে ১২ কেজি আঙ্গুর থাকে। প্রতি কেজি আঙ্গুর পাইকারী ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা বিক্রি করছেন। স্থানীয় ও ঢাকার ব্যাপারীরা ক্ষেতে এসে নিয়ে যাচ্ছেন। সামনে এখনো ১৫ থেকে ২০ দিন একইভাবে আঙ্গুর বিক্রি করা যাবে। সে হিসাবে এবছর তিনি ১৩ তেকে ১৫ লাখ টাকা আঙ্গুর বিক্রি করতে পারবেন। গেল বছর এই তিন বিঘা জমি থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার আঙ্গুর বিক্রি করেছিলেন।

আঙ্গুরের পাশাপাশি তার পাঁচ বিঘা জমিতে রয়েছে মাল্টা ও কমলা লেবুর চাষ। জেলায় তিনিই প্রথম আঙ্গুর চাষে সফলতা দেখান। যদিও সম্প্রতি জেলায় আরো কয়েকজন চাষি এ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। ২০২০ সালে প্রথম ১০ কাঠা জমিতে ছমছম ও সুপার সনিকা জাতের ৭৫ টি আঙ্গুরের গাছ রোপন করেন।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও ইউরোপের ইটালি থেকে এসব চারা সংগ্রহ করেন। বর্তমানে তার তিন বিঘা জমিতে ইতালি ও ইউক্রেনে চাষ হওয়া বাইকুনুর এবং ট্রাসফিগারেশন চিনের ডাসুনিয়া সহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫ শত আঙ্গুরের গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ বছর ফল পাবেন বলে আশা করছেন কৃষক আব্দুর রশিদ।

প্রথম আঙ্গুর চাষ করতে বিঘা প্রতি তার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। এ পরিমাণ টাকা চারা ক্রয়, বেড়া দেওয়া, বাগানের উপর নেট দেওয়া ও পরিচর্যার কাজে খরচ হয়। বর্তমানে তার বাগান পরিচর্যা করতে প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়।

আঙ্গুরচাষী আব্দুর রশিদ জানান, বিভিন্ন সময় ইউটিবে কৃষি কাজ সংক্রান্ত অনেক ভিডিও দেখতাম। এছাড়া বিভিন্ন কৃষকদের মাধ্যমে খোজ রাখতাম কোথায় কোন চাষ হচ্ছে। নতুন কিছু মনে হলেই সেখানে ছুটে যেতাম। সেখান থেকে চাষ পদ্ধতি রপ্ত করে নিজে চাষ করতাম। এভাবে চলছে আমার চাষকর্ম। এভাবেই ২০২০ সালে আমার এক পরিচিতজনের মাধ্যমে ইতালি থেকে কয়েকটি আঙ্গুরের চারা সংগ্রহ করি।

ভলো পরিচর্যার কারনে মাত্র এক বছর পরেই গাছে আঙ্গুর ধরে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে পাক ধওে, মিষ্টিও হয়। এরপর আমার আঙ্গুরের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। এ চাষ বৃদ্ধি করতে থাকি। বাগানের গাছ থেকে চারা উৎপাদন করে এবং বাইরে থেকে নতুন জাতের চারা এনে তিন বিঘা জমিতে চাষ করি। গেল বছর প্রায় ১০ লাখ টাকার আঙ্গুর বিক্রি করি। যা ছিল আশার থেকেও অনেক বেশি। এ বছর প্রায় ১৫ রাখ টাকার আঙ্গুর বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

প্রতিদিনই আমার আঙ্গুর বাগান দেখতে দুই শতাধিক দর্শনার্থী আসে। মাঝে মাঝে বিরক্ত হলেও প্রত্যেককে আঙ্গুর খাওয়ানো চেষ্টা করি। সব মিলিয়ে দারুণ ভালো লাগে বলে যোগ করেন এ সফল আঙ্গুর চাষি।

আব্দুর রশিদের বাগান পরিদর্শনে আসা মহেশপুর সামান্তা এলাকার মাদরাসা শিক্ষিকা মোছা. উরিদা খাতুন জানান, আমরা এতদিন আঙ্গুর কিনে খেয়েছি। অনেক সময় আঙ্গুর বাগানে ছবি ও ভিডিও দেখি কিন্তু সত্যি সত্যি এমন বাগার দেখবো চিন্তাও করিনি। আমার এলাকায় হওয়া আঙ্গুর বাগানে এসে আঙ্গুর খেয়ে স্বাদ নিচ্ছি এটা বিশাল এক অনুভতি যা ভাষায় প্রকাশ করার নয়।

মহেশপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা শারমিন আরা জানান, আব্দুর রশিদ বিদেশী ফল আঙ্গুর চাষে সফল হয়েছেন। এটা ভালো, এ ধরনের চাষ বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিকভাবে কৃষকরা লাভবান হতে পারে। তবে এ চাষে আমরা কাউকে উৎসাতি বা নিরুৎসাহিত করছি না।

তবে কেউ পরামর্শ চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয় অল্প করে চাষ করতে। ফলাফল ভালো হলে চাষ বৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়। আমরা চাই না অনভিজ্ঞ কোন কৃষক লোভে পড়ে বিদেশী ফল চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে