রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নতুন যে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ( বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) তৈরি করেছে, তাতে আগের তুলনায় আয়তন কমেছে ৪০ ভাগ এমন অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। এমন অবস্থায় তারা অনতিবিলম্বে নতুন ওই ড্যাপ সংশোধন অথবা আগের ড্যাপে ফিরে যাওয়ার দাবী জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ,নতুন ড্যাপের খসড়া পরিকল্পনায় ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (এফএআর) ভিত্তিতে ভবনের আয়তন নির্ধারণের সুপারিশ করে রাজউক। এতে ঢাকার গুলশান, বনানী কিংবা ধানমন্ডির মতো পরিকল্পিত এলাকার তুলনায় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, বাসাবোসহ অপরিকল্পিত এলাকায় ভবনের আয়তন কম নির্ধারণ করা হয়েছে।৷ এতে বেশির ভাগ এলাকায় আগের তুলনায় ফ্ল্যাট তৈরির আয়তন বা জায়গা কমেছে ৪০ ভাগ।
এমন অবস্থায় জমির মালিক, ডেভেলপার কোম্পানি ও ক্রেতা সবাই ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) নেতাদের অভিযোগ, নতুন ড্যাপ শুধু বৈষম্যমূলকই নয় বরং তা আবাসনশিল্প বিকাশে প্রধান সমস্যা ।
অভিযোগে জানা যায়, নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, আবাসন খাতের জন্য ভবন নির্মাণে পরিকল্পিত এলাকা যেমন ঢাকার গুলশানে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও বেশি ধরা হয়। ফলে গুলশানে উঁচু ভবন করা যাবে। ফ্ল্যাট সংখ্যা বেশি হবে। পক্ষান্তরে অপরিকল্পিত এলাকা যেমন- বাসাবোতে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও কম থাকায় বাসাবোতে সবোর্চ্চ চার থেকে পাঁচ তলার বেশি ভবন করা যাবে না। ফলে ফ্ল্যাট সংখ্যাও কম হবে। অর্থাৎ যেসব এলাকায় যত বেশি এফএআর, সেখানে ভবনের আয়তন তত বেশি পাওয়া যায়। ফলে ফ্ল্যাট সংখ্যাও বেশি হবে। অপরদিকে যেসব এলাকায় যত কম এফএআর, সেখানে ভবনের আয়তন তত কম পাওয়া যায়। ফলে ফ্ল্যাট সংখ্যাও কম হবে।
এমন পরিস্থিতিতে রিহ্যাব নেতাদের অভিযোগ, কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় নতুন ড্যাপ করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা দাবী করেন, নতুন ড্যাপের কারণে জমির মালিকরা ভবন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে নতুন প্রকল্প নেওয়ার হার কমেছে।
এবিষয়ে রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি তানভীরুল হক প্রবাল বলেন, ঢাকা শহরে ৯০ শতাংশই অপরিকল্পিত এলাকা। নতুন ড্যাপ অনুযায়ী বসুন্ধরা, ধানমন্ডিসহ পরিকল্পিত এলাকায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও বেশি। ফলে ওই সব এলাকায় উচ্চ ভবন করা গেলেও মিরপুর, বাড্ডাসহ ঢাকার ৯০ ভাগ অপরিকল্পিত এলাকায় পাঁচতলার বেশি উঁচু ভবন করা যাবে না।’
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজউক কর্তৃপক্ষর দাবী, ঢাকা শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব কমানোর জন্য অপরিকল্পিত এলাকায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও কমানো হয়েছে।
তবে ওই দাবী অস্বীকার করে রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি তানভীরুল হক প্রবাল বলেন,ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করে জনসংখ্যার ঘনত্ব কমানো যাবে না। তার দাবী, ‘ড্যাপ সংশোধন করলে আবাসন খাত চাঙা হবে। এতে জমির মালিক, ডেভেলপার ও ক্রেতা সবাই উপকৃত হবেন।’
রিহ্যাবের সহসভাপতি আবদুল লতিফ জানান , নতুন ড্যাপের কারণে গত দুই বছর ধরে আবাসন ব্যবসায় স্থবিরতা চলছে। নতুন ড্যাপ বাতিল বা সংশোধনের মাধ্যমে সেক্টরটি আবার চাঙা করার আহবান জানান তিনি।
রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘ঢাকায় আবাসন শিল্প বিকাশে নতুন ড্যাপ সংশোধন অথবা আগের নিয়মে ফিরে যাওয়া জরুরী।
তিনি বিশ্বের উন্নত দেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘বিশ্বের সব দেশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ড্যাপ সংশোধন বা আগের নিয়মে ফিরলে ঢাকা শহর আরও বেশি বাসযোগ্য হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. হারুনর রশিদ বলেন, আবাসন ব্যবসার বিভিন্ন সমস্যা/সংকটের কারণে ঢাকার আবাসন শিল্প ও এ খাতের প্রায় ২০০ লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিগুলোও এখন সর্বসংকটে।
তিনি দাবী করেন,পাশের দেশ ভারতের দিল্লিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৬২ জন বসবাস করে। অপরদিকে ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করছে ১ হাজার ১১৯ জন। ফলে প্রয়োজনীয় আবাসনে আমাদের কম জায়গায় বেশি ফ্ল্যাট প্রয়োজন যা নতুন ড্যাপে অসম্ভব। এব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের আশু পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, রাজউক ২০২০ সালে দ্বিতীয় ড্যাপের (২০২২-৩৫) খসড়া প্রকাশ করে। গত বছরের আগস্টে তা পাস হয়। এই ড্যাপ ছয়টি স্বতন্ত্র অঞ্চলে বিভক্ত। সেগুলো হচ্ছে কেন্দ্রীয় অঞ্চল: ঢাকা শহর, উত্তর অঞ্চল: গাজীপুর সিটি করপোরেশন, পূর্ব অঞ্চল: কালীগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ অঞ্চল: নারায়ণগঞ্জ, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল: কেরানীগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিম অঞ্চল: সাভার উপজেলা।