শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ চাষিদের কাছে কালো সোনা ’

ফরিদপুর প্রতিনিধি
  ১০ এপ্রিল ২০২১, ১৮:২৭

পেঁয়াজ বীজ চাষে হাসি ফুটেছে ফরিদপুরের কৃষকদের। গত কয়েক বছরে ভালো দাম পাওয়ায় এবার স্বপ্নটাও বড়। আর তাই একে তুলনা করছেন সোনার সঙ্গে। এখন পেঁয়াজ বীজ চাষিরা ব্যস্ত বীজ ঘরে তোলার কাজে। সকাল থেকেই পরিবারের বিভিন্ন বয়সিদের নিয়ে সবাই ক্ষেত থেকে বীজ তোলার কাজ করে সময় পার করছেন চাষিরা।

ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সাড়ে ১৭শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে এই বীজ। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে পেঁয়াজ বীজের চাষ। চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় ১ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী বলেন, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর অঞ্চলের ১ হাজার ৫৬ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় (গত বছরের মতো হলে) পাঁচশ কোটি টাকার মতো।

তিনি জানান, সরকারের বিএডিসির সংগৃহীত মোট পেঁয়াজ বীজের ৭০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকে আসে।

সরকারি এই কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, ‘এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষিরা অধিক মুনাফা করে, যে কারণে এই ফসলকে কালো সোনা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

শুক্রবার সরেজমিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে দেখা যায়, সেখানকার বীজচাষিরা বীজ সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত। অনেক কৃষক-কৃষানি চুক্তিতে (পেঁয়াজ বীজ গাছে পেঁয়াজ তাদের আর বীজ মালিকের) এই কাজে অংশ নিচ্ছে।

অম্বিকাপুর এলাকার গোবিন্দপুর মাঠে কৃষক হারিজ মোল্লা, জুলেখা বেগম, ফাতেমা খানমের মতো অনেকেই জানালেন, এই মৌসুমে বীজ তোলার কাজ করে যে পেঁয়াজ পাই তাই দিয়ে সংসারের সারা বছরের পেঁয়াজের চাহিদা মিটে যায়।

ওই মাঠে দেখা যায়, অনেক কৃষক এসেছে রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর জেলা থেকে। এদের মধ্যে রহমান মাতুব্বর, আশিক মোল্লা জানান, পেঁয়াজ বীজ তোলার সময় তাদের মতো অনেকেই ফরিদপুরে আসে জনবিক্রির কাজে। এই সময়টায় ভালো আয় হয় তাদের।

গোবিন্দপুর গ্রামের পেঁয়াজ বীজ চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাগো আবহাওয়া বীজ উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। আগামীতে আরও জমিতে ‘কালো সোনার’ চাষ করব।’’

তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংকগুলো শুধু জমির মালিকদের লোন দেয়, আমার মতো বর্গাচাষিদে লোন দেয় না। আমরা বাধ্য হয়ে এনজিওর কাছ থেকে অধিক সুদে লোন নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ করি।

তিনি দাবি করেন, সরকার বর্গাচাষির লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করলে অন্য জমির মালিকের মতো আমরা আরও বেশি লাভের মুখ দেখতাম।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও এ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবক তাদের কর্মস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ করার সহজ উপায় হলো বীজ চাষ। ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিদের এখন আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে