শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুতা, রং ও রাসায়নিকের মূল্য বৃদ্ধি, সিরাজগঞ্জে তাঁতশিল্প বন্ধ হওয়ার পথে

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১৯:৩৬

সুতা, রং ও রাসায়নিকের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় তাঁতসমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, কামারখন্দ, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও উল্লাপাড়ার তাঁতপল্লিগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এলাকায় তাঁত বুননের খটখট শব্দ হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ হিসেবে তাঁতিরা বলছেন, সুতার মূল্য তিন মাস আগে যা ছিল বর্তমানে দ্বিগুণের অধিক হয়েছে। পক্ষান্তরে উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি করতে পারছে না ফলশ্রুতিতে তাঁতিরা পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। স্থানীয় সুতা মিলের মালিকরা দফায় দফায় ইচ্ছামাফিক সুতার মূল্য বৃদ্ধি করছেন। কারণ হিসেবে তুলার মূল্য বৃদ্ধির কথা বলছেন মিলমালিকরা। কিন্তু মজার বিষয় হলো তুলার মূল্য বেড়েছে পাউন্ড প্রতি ২০-৩০ টাকা, কিন্তু সেই সুযোগ নিয়ে সুতার মূল্য বৃদ্ধি করেছে প্রতি পাউন্ডে ১৫০-২০০ টাকা। রং ও কেমিক্যালের মূল্যও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁতিদের কল্যাণে কোনো পদক্ষেপ না নিলে তাঁতশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁত মালিকদের। তিন মাস আগে যে কাপড়টি তৈরি করতে চারশ টাকা লাগত, সেই কাপড়টি এখন তৈরি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। উৎপাদিত কাপড় এত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে তাঁতের টানা শেষ হওয়ার পরে ওই তাঁতে সুতা দিয়ে তৈরি করা টানার কাজ আর করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ তাঁতটি বন্ধ হয়ে গেল। এভাবে তাঁত পল্লিগুলোর তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাঁত মালিকরা বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন তাদের তাঁত কারখানাগুলো। এ পর্যন্ত ৩০ ভাগ তাঁত বন্ধ হয়েছে। এতে লক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এদিকে সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে তাঁতসমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, কামারখন্দ, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় পাঁচ লক্ষাধিক (বিদ্যুৎচালিত ও হস্তচালিত) তাঁত রয়েছে, এসব তাঁতে শাড়ি লুঙ্গি উৎপাদনের জন্য কাজ করছে প্রায় ১২ লাখ তাঁত শ্রমিক। পর্যায়ক্রমে এসব তাঁত বন্ধ হয়ে গেলে এই ১২ লাখ তাঁত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে ৩০ ভাগ তাঁত বন্ধ হয়েছে, লক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় তাঁতী সমিতির সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড করোনাকালীন এবং বর্তমান সুতা, রং ও কেমিক্যালের ঊর্ধŸমূল্যের বিষয়ে এতদিন কোনো সহযোগিতা বা তাঁতিদের কল্যাণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাঁত বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্যই হলো তাঁতিদের কল্যাণ করা বা তাঁতিদের সমস্যার সমাধান করা, কিন্তু তার সামান্যতম পদক্ষেপও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। গোপালপুর গ্রামের তাঁত মালিক রুহুল আমিন, খুকনী গ্রামের তাঁত মালিক অনিক আহমেদ ও সোহাগপুর গ্রামের তাঁত মালিক শফিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, রং, সুতা ও তাঁত সরঞ্জামের দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে তাঁত শিল্প টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হবে। তাঁতিদের সমস্যা সমাধানে বা তাঁতশিল্পের উন্নয়নে তাঁতবোর্ড থাকলেও তাঁতীদের কোনো কাজেই আসছে না।

বেলকুচি, শাহজাদপুুর, এনায়েতপুর ও চৌহালী এলাকা ঘুরে সাধারণ তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিয়মনীতি থাকলেও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড গত দু'বছরে তাঁতিদের আমদানির কোনো সুপারিশ ইস্যু করছে না। তারা তাঁত ঋণও পাচ্ছে না, এমনকি করোনাকালীন কোনো প্রণোদনাও পায়নি। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তাঁতশিল্পের উন্নয়ন কাজের সিদ্ধান্তগুলো মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে তাঁতিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে সরকারের সঠিক নজরদারি হলেই তাঁতশিল্পকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক একরামুল হক রিজভী।

তিনি বলেন, রং এবং সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠন করা দরকার। এর পাশাপাশি এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে তাঁত শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে। বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, তাঁত শিল্পের সব সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে