শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডলার: আন্তঃব্যাংকে ৯৪, খোলাবাজারে ১১৯ টাকা ছাড়ালো

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ আগস্ট ২০২২, ১৭:৫২

দিন যতই যাচ্ছে ডলারের দাম ততই বাড়ছে। বুধবার (১০ আগস্ট) খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৯.৯০ টাকা। যা গত সোমবার বিক্রি হয়েছে ১১৫-১১৬ টাকায়। তবে আন্তঃব্যাংকে দাম ৯৪.৯৫ টাকা।

রাজধানীর দিলকুশা, মতিঝিল, পল্টন, গুলশান এলাকায় মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের কারণে যারা অবৈধভাবে ডলার বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের সংখ্যা কমে গেছে। তাছাড়া অনেকের কাছে ডলার থাকলেও ভয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করতে আসছে না। অপরদিকে, ডলারের সংকট তো রয়েছে। অনেক মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে চাহিদা অনুযায়ী ডলার নেই। আর এসব কারণে ডলারের দাম বেড়েই চলছে।

কুইক মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আজ ডলারের চাহিদা বেশি। সকাল থেকে দামও ঊর্ধ্বমুখী। দুপুরের পর ১১৯.৯০ টাকায় ডলার বিক্রি করেছি।

রাজধানীর মতিঝিলের অর্নেট মানি এক্সচেঞ্জের মাসুম আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আমার কাছে বিক্রি করার মতো ডলার নেই। তবে যাদের কাছে আছে তারা ১১৮-১১৯.৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। তবুও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আজ ডলারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নেই। তাই সকাল থেকে দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সকালে ১১৭ টাকায় বিক্রি করলেও দুপুরে ১১৯-এ বিক্রি হয়েছে। তবে দুপুরের পর ১১৯.৯০ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। শেষ পর্যায়ে ১২০ টাকা অতিক্রম করার আশঙ্কা করছেন তিনি।

এদিকে, ডলার সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ডলার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিমও কাজ করছে। ডলারের সংকট ও কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকায় ৬ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের অপসারণ, ৫টি মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স স্থগিত এবং ৪৫টি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাতে কেউ কৃত্রিমভাবে ডলার সংকট না করতে পারে সেজন্য ডিজিটাল প্লাটফর্মেও নজরদারি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ডলারের দাম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা হয়েছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। যা ৯ জানুয়ারি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ টাকা। গত ২৩ মার্চ তা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। গত ২৭ এপ্রিল ডলার প্রতি ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত ১০ মে ডলার প্রতি আরও ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত ১৬ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এরপর ২৩ মে ফের ৪০ পয়সা বাড়িয়ে দাম ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করে। এরপরও বাজার স্থিতিশীল হয়নি। পরে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু তাতেও বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় ডলারের একরেট উঠিয়ে দিয়ে গত ২ জুন আরও ৯০ পয়সা বাড়িয়ে দাম ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। গত ৬ জুন প্রতি ডলার ৯১ টাকা ৫০ পয়সা। গত ৭ জুন ডলার ৯১.৯৫ টাকা, ৮ জুন ৯২ টাকা এবং গত ১৩ জুন ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯২.৫০ টাকা। গত ১৫ জুন ডলার দাম ছিল ৯২.৮০ টাকা। গত ২১ জুন দাম বেড়ে ৯২.৯০ টাকা, পরেরদিন তা বেড়ে ৯২.৯৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ২৮ জুন ডলারের দাম বেড়ে ৯৩.৪৫ টাকা, ২৯ জুন ৯৩.৪৪ টাকা, ৩০ জুন ৯৩.৪৫ টাকা, ১৪ জুলাই ৯৩.৬১ টাকা, ১৭ জুলাই ৯৩.৯৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ২১ জুলাই ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪.৪৫ টাকা। গত সোমবার আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হয়েছে ৯৪.৭০ টাকায়। যা ডলারের দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে