শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় নিয়ে অনিশ্চয়তা!    

রেজা মাহমুদ
  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৮
জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় নিয়ে অনিশ্চয়তা!    

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের কথা জানিয়েছিল সরকার। সবশেষ আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে চলতি সেপ্টেম্বরে তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে তা সেপ্টেস্বরে কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত বিশ্ববাজারে গত মাস থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনের কারণে তা কার্যকরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত মাসগুলোতে জ্বালানি তেলে সরকার মুনাফা করলেও বর্তমানে আমদানি মূল্য বাড়তির দিকে রয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে দাম সমন্বয় করা হলে দেশের বাজারে তেলের দাম আবারও বাড়তে পারে। সে হিসেবে প্রতি লিটার ডিজেলে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। যেহেতু এ বছরের শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন রয়েছে তাই আপাতত দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারেও কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর আগে গত জুনে বিদ্যুতের সমন্বয়ের কথা থাকলেও নির্বাচনের আগে তা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এদিকে আগস্টের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে ধারাবাহিকভাবে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত দুই ধরনের তেলের দামই বাড়ছে। চলতি সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল ক্রুড অয়েলের দাম গত ৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে। সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের ব্যারেল বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯০ ডলারে। যা ২ মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৭৮ ডলারে।

ব্রিটিশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বার্কলাইসের তথ্যানুযায়ী, ওপেকের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো তেল উত্তোলন কমিয়ে দেওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের মধ্যে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৯৭ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম ফের বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি।

ইতোমধ্যেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ কম দামে রাশিয়া থেকে নিম্নমানের অপরিশোধিত তেল কিনে মজুত করছে। দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে আইএমএফের শর্ত কিংবা বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও রাজনৈতিক কারণে নির্বাচনের আগে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা কম।

এর আগে গত বছর আগস্টে আইএমএফের ঋণ পেতে এ খাতে ভতুর্কি তুলে নিয়ে ডিজেলে ৪১ শতাংশ এবং পেট্রোলে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছিল সরকার। ফলে মূল্যস্ফীতিসহ দেশের সার্বিক উৎপাদন ব্যয় হু-হু করে বেড়ে যায়। তখন থেকেই চাপ ছিল বিশ্ববাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের। দেখা গেছে দাম বৃদ্ধির ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই বিশ্ববাজারে তেলের দামের ব্যাপক পতন ঘটে। যা চলতি বছর জানুয়ারিতে ১১০ থেকে কমে ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে। সে সময় প্রতি লিটার ডিজেলে ২৯ টাকা মুনাফা করে বিপিসি। কিন্তু দেশের বাজারে বাড়তি দামই অব্যাহত থাকে। তবে এপ্রিলে আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সেপ্টেম্বরে দাম সমন্বয়ের আশ্বাস দেয় সরকার।

তবে পেট্রোলিয়ম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, দাম বৃদ্ধির ফলে বিগত মাসগুলোতে সংস্থাটির যে পরিমাণ মুনাফা হয়েছে তা দিয়ে চড়া মূল্যে আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তাই দেশের বাজারে আপাতত দাম না বাড়ালেও আমদানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে দাম সমন্বয়ে পিরওয়াডিক ফর্মুলা প্রাইজ অ্যাডজাস্টমেন্ট পদ্ধতি তৈরির জন্য একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর মার্চে এটি কার্যকর হতে পারে। বর্তমানে বাজারে ডিজেল ১১১ টাকা, পেট্রোল ও অকটেন ১২৫ ও ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে