গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের জেরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের বন্ধ কাটিয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। পাঠদানে ফিরেছে শিক্ষকরাও।
গত ১৩ ফেব্রয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বৈঠকের সিদ্ধান্তনুযায়ী মঙ্গলবার বিভিন্ন বিভাগে সকাল থেকেই ক্লাস শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহম্মদ ইশফাকুল হোসেন বলেন,পূর্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তানুযায়ী, করোনা পরিস্থিতে সরকারি বিধিনিষেধ উঠে গেলে সশরীর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাই আজ থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে।
বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফারজানা সিদ্দিকা বলেন, একমাস পর আবারও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সশীরের ক্লাসে ফেরা হয়েছে। করোনা ছুটির পর শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করেই ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে দেওয়া হচ্ছে ক্লাসগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে।
দীর্ঘ ৩৬ দিন বন্ধ থাকার পর ক্লাস ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরাও।
শাবির পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবারও ক্লাসে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। প্রায় মাসখানেক অশান্ত শাবিতে উত্তাপ কাটিয়ে সিনিয়র, সহপাঠী,ও জুনিয়দরদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি, আর কোনো ধরণের সমস্যা যাতে না হয় প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন করবেন। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ধরণের খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
একই সেশনের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, "সশরীরে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে তাই ভালো লাগছে। সেশনজটের যেটা সম্ভাবনা ছিল ওটা কমে গেছে। আশা করি এবছর অনার্স শেষ করে বের হয়ে যেতে পারবো।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড হামলা হয়।
পুলিশি হামলার পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন; এক পর্যায়ে তারা আমরণ অনশনে যান।
সাতদিন পর সেই অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক। এরপর শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যান আরও ১৪ দিন। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া ব্যাপারে তাদের সাথে কথা বলেন। দাবির ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদেরকে আশ্বস্ত করেন। উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন, বাকী দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন শিক্ষার্থীদের। এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার আহ্বান করেন।
যাযাদি/ এস