শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সোহানের প্রস্থানে স্তব্ধ শোবিজ

বিনোদন রিপোর্ট
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০১
ফাইল ছবি

সাধারণত কোনো সিনেমা সফল কিংবা ব্যর্থ হলে ছবির প্রধান পাত্র-পাত্রীকেই প্রশংসা অথবা ব্যর্থতার দায় নিতে হয়। চলচ্চিত্রের বেশির ভাগ দর্শকই নায়ক-নায়িকা নির্ভর। এর পরিচালক কিংবা প্রযোজক কেÑ তা নিয়ে মাথা ঘামান না। কিন্তু ফিল্মের ভাষায়, একজন পরিচালককে বলা হয়, ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’। একজন পরিচালক নায়ক-নায়িকা কিংবা তারকা বানানোর মূল কারিগর। রোমান্টিক চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে খ্যাত বরেণ্য নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান তেমনই এক কারিগর। অসংখ্য জনপ্রিয় রোমান্টিক সিনেমা এবং তারকা উপহার দেওয়া এই পরিচালককে ‘কীর্তিমান’ বলে আখ্যায়িত করলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বর্তমান সভাপিত কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন, ‘পরিচালকরা সাধারণত খ্যাতিমান কম হন, কিন্তু সোহানুর রহমান সোহান খ্যাতিমান পরিচালক ছিলেন।’ এই পরিচালক আরও বলেন, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোহান বলেছিলেন ‘হায়াৎ ভাই, আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি স্ত্রী হারানোর শোক সইতে পারি। আল্লাহ যেন আমাকে ধৈর্য দেন।’

কিন্তু সেই ধৈর্য আর পেলেন না কেয়ামত থেকে কেয়ামত খ্যাত বরেণ্য পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। স্ত্রী বিয়োগের ২৪ ঘণ্টা না পার হতেই ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমের দেশে পাড়ি জমান তিনি। দু’বার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব, সহসভাপতি ও একবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করা এই নির্মাতাকে স্ত্রীর কবরের পাশেই দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে টাঙ্গাইল পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মসজিদে জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়। স্বজনরা জানিয়েছেন, স্ত্রী ও তার ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর তাদের দু’জনকে যেন পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়। সেই ইচ্ছাই পূরণ করা হয়। তার জানাজায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক রিয়াজুল রিজু, চলচ্চিত্র লেখক আবু সাঈদ চৌধুরী, শ্যালক শাহী, আত্মীয় স্বজনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে অনেক নম্র-ভদ্র ও বিনয়ী স্বভাবের মানুষটিকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ চলচ্চিত্র পরিবার। সোহানের মৃত্যুর খবরে মুষড়ে পড়েছেন চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষ। সহকর্মী, শিল্পী ও কলাকুশলীরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। সোহানের মৃত্যুর খবর শুনে বিলাপ আটকে রাখতে পারেন না চিত্রনায়িকা মৌসুমী। ফোনে প্রিয় পরিচালকের মৃত্যুর খবর শুনতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মৌসুমী। কান্নায় ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না এই তারকা। ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পাওয়া দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন মৌসুমী। আর এর পরিচালক ছিলেন সোহানুর রহমান সোহান।

চলচ্চিত্রের চলমান সময়ের শীর্ষ তারকা শাকিব খান বলেন, ‘মাসুদ রানা থেকে আমার এই শাকিব খান নামটি সোহান ভাইয়েরই দেওয়া। সত্যি কথা বলতে, তার সম্পর্কে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এই তো কয়েকদিন আগেও সোহান ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসা নিতে জাপান যাবেন। কিন্তু হঠাৎ করে খবরটি পেয়ে আতকে উঠলাম। ভাবি ও সোহান ভাইকে মহান আল্লাহ পরপারে শান্তিতে রাখুন। এটাই কামনা করছি।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তো রীতিমতো শোকের কালো আঁধার নেমে এসেছে। শুধু চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্যরাই নন, গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শোবিজের প্রতিটি শাখার শিল্পী ও কলাকুশলীরা। সোহানুর রহমান সোহানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক লিখেছেন, ‘কী অদ্ভুত জীবনমৃত্যুর খেলা! স্ত্রী বিয়োগের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পরপারে চলে গেলেন সবার প্রিয় পরিচালক বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান স্যার। মহান মালিক তার আত্মাকে শান্তি প্রদান করুন। আমিন।’ চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান স্যার আর আমাদের মাঝে নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মহান আল্লাহ ওনার আত্মাকে শান্তি দান করুন।’ চিত্রনায়িকা জাহারা মিতু শোক জানিয়ে লিখেছেন, ‘আর কেউ আমাকে দেখলেই বলবে না ‘তোমাকে দেখলে উড়ন্ত প্রজাপতি মনে হয়!’, সারা জীবন মনে পড়বে আপনার কথা ভাইয়া। কখনো ভুলব না, আপনি আমাকে দেখামাত্রই কত সুন্দর হাসি দিতেন। আপনাকে মনে রাখবে গোটা চলচ্চিত্রাঙ্গন।’

নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান ভাই আজ উত্তরা নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেছেন। চিত্রনাট্যকার আব্দুল্লাহ জহির বাবু লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এভাবে দেশবরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান ভাইকে হারাব কোনো দিন কল্পনাও করিনি। কী বলবো, বলার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আল্লাহ তাআলা তাকে তার সমস্ত জাগতিক ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন। তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। এই দেশবাসী আপনাকে মনে রাখবে আপনার কর্মের মাধ্যমে।’

নির্মাতা খিজির হায়াত খান শোক জানিয়ে লিখেছেন, ‘ওপারে ভালো থাকবেন সোহান ভাই। আল্লাহ আপনার পরিবারকে এই কঠিন শোক সইবার শক্তি দিক। আমিন।’ কাজী নওশাবা আহমেদ লিখেছেন, ‘জনপ্রিয় নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান চলে গেলেন। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে মারা গেছেন তার স্ত্রী। জীবন কী অদ্ভুত সুন্দর আর ধাঁধায় ঘেরা! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...।’ কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য! চিত্রপরিচালক সোহানুর রহমান সোহান ভাই আর নেই। ২৪ ঘণ্টা হয়নি তার স্ত্রী মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত লিখেছেন, ‘অসংখ্য হিট ছবির পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান ভাই মারা গেছেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার একদিন পর উনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। খুবই কষ্ট লাগছে।’

ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক, কামরুজ্জামান সাগর জানিয়েছেন, ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করছি ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’ চিত্রনায়ক কায়েস আরজু লিখেছেন, ‘সোহানুর রহমান সোহান ভাইয়া, কি লিখব, বুক হাহাকার করছে।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে