শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে অনন্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট

এম এ কাসেম
  ২২ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

দীর্ঘদিনের ঘাটতি অবস্থা থেকে চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত অবস্থানে চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের একটি বড় সফলতা। আর এ সফলতার নেপথ্যে পরিবর্তনের রূপকার বা চেঞ্জ মেকার হিসেবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)।

অ১৯৭০ সালের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ব্রি খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় অগ্রগতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছে। এ অবদানের উলেস্নখযোগ্য দিকগুলো হচ্ছে- সাতটি হাইব্রিডসহ ১০৫টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন এবং এসব ধান ফলন সনাতন জাতের চেয়ে তিনগুণ বেশি। ব্রির এসব উদ্ভাবনের মধ্যে রয়েছে লবণাক্ততা সহনশীল ১৩টি, আকস্মিক বন্যা মোকাবিলার দুটি, অল্পবণাক্ত জোয়ারভাটা এলাকার উপযোগী তিনটি, খরা সহনশীল তিনটি, স্বল্প জীবনকালের আগাম জাত ছয়টি, জিঙ্কসমৃদ্ধ চারটি, সর্বাধিক ফলনের পাঁচটি, সুগন্ধি ও রপ্তানি উপযোগী নয়টি জাত। দেশে আবাদকৃত উফশী ধানের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত চাষ করা হয় এবং এ থেকে পাওয়া যায় দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৯১ ভাগ। ধান গবেষণা ও সম্প্রসারণে প্রতি এক টাকা বিনিয়োগ থেকে ৪৬ টাকা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। চৌদ্দটি দেশে ব্রি উদ্ভাবিত ১৯টি জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। আধুনিক ধান চাষের জন্য মাটি, পানি ও সার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র ৫০টির বেশি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে এ প্রতিষ্ঠান। ধান চাষ কৃষকের জন্য লাভজনক করার লক্ষ্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে ৫১টি ধানভিত্তিক শস্যক্রম। কৃষি যন্ত্রিকায়ন প্রক্রিয়া জোরদার করার অংশ হিসেবে এ প্রতিষ্ঠান ৩২টি কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করেছে যার মধ্যে রয়েছে ট্রান্সপস্নান্টার, থ্রেসার, উইনোয়ার, উইডার ইত্যাদি। পাশাপাশি ধানের ৩২টি রোগ (১০টি প্রধান) ও ২৬৬টি ক্ষতিকর পোকা (২০টি প্রধান) শনাক্তকরণ এবং বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবনের মাধ্যমে ব্রি ধান চাষাবাদের কাজ অধিকতর নিরাপদ ও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করছে। আর এই নিরন্তর কর্মপ্রয়াসের ফলাফল হিসেবেই দেশ আজ চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত অবস্থানে চলে এসেছে।

পৃথিবীর ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। তবে এখানকার হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৪.৫ টন। চীন, জাপান ও কোরিয়ায় এ ফলন হেক্টরপ্রতি ৬-৬.৫ টন। তবে চীন, জাপান ও কোরিয়ায় সারা বছরে একটি মাত্র ধান ফসল উৎপাদন হয়; অথচ বাংলাদেশে একই জমিতে বছরে তিন বার ধান উৎপাদন হয়। সে বিবেচনায় আমাদের ধানের ফলন অন্য দেশের চেয়ে কম নয়। তথাপি দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ধানের ফলন আরো বাড়ানোর বিকল্প নেই। সনাতন জাতের ধান এবং মান্ধাতার আমলের আবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধান ও আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তির ব্যাপক প্রচলন। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে তা মোকাবিলার জন্য ক্লাইমেট স্মার্ট/ঘাত সহনশীল প্রযুক্তি উদ্ভাবন একান্ত জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে