শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড জয়ীদের গল্প

নতুনধারা
  ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

তানিউল করিম জীম

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে রোভার স্কাউট গ্রম্নপ ১৯৭৪ সালে যাত্রা শুরু করে। সেই থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত অর্জনে আজ স্কাউটিংয়ে গোটা দেশের সেরা দলগুলোর অন্যতম বাকৃবি রোভার স্কাউট গ্রম্নপ। সেবার মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী একজন রোভার সবসময় চেষ্টা করে সমাজে নিজের সক্রিয় উপস্থিতির মাধ্যমে কাজ করে যাওয়ার। একজন ভালো মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টায় সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত থেকে পর্যায়ক্রমে স্বেচ্ছায় শ্রম দেওয়াটা কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু নয়। সমাজের বিভিন্ন কার্যক্রমে অবদান রাখার জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ একজন রোভার অর্জন করেন 'সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড'। ভালো কাজের নির্দিষ্ট পরিমন্ডল না থাকলেও বাংলাদেশ স্কাউটসের নির্ধারিত অত্যাবশ্যকীয় কিছু কার্যক্রমের মাধ্যমে এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করার সুযোগ থাকে। ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ স্কাউটসের সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যের পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরতি এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালের সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড প্রার্থীদের জাতীয় পর্যায়ের মূল্যায়নের ফলাফল প্রকাশিত হয়। বাকৃবি রোভার স্কাউট গ্রম্নপ থেকে ২০১৯ সালের প্রার্থী রোভার মাহফুজা আক্তার মিষ্টি, ২০২১ সালের প্রার্থী রোভার মো. মিলন হোসেন, রোভার ইবনুল ফাইয়াজ এবং রোভার জিসান মোস্তাসিনসহ ৪ জন সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন। পরে ২০২৩ সালের ২১ জুলাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বাকৃবি রোভার স্কাউট গ্রম্নপের সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের কথা শুনেছেন তানিউল করিম জীম।

ক্যাম্পাসে আসার পরপরই আমি স্কাউটিংয়ে আকৃষ্ট হই। লেখাপড়ার বাধাধরা গন্ডির বাইরে স্কাউটিং ছিল ভিন্ন অভিজ্ঞতা। সরাসরি সমাজের জন্য কাজ করা, সেবামূলক জাতীয় কার্যক্রমগুলোয় অংশগ্রহণ, অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ আমার জীবনে অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। প্রথম বর্ষে স্কাউটিংয়ে যোগ দিয়ে ভালোভাবে বিষয়গুলো বুঝে ২য় বর্ষে আমি কাজ শুরু করি। জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে সেবাদান, শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে লিফলেট-পোস্টার বিতরণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি, সুষম খাবার নিয়ে আলোচনা, সহজেই রোগ নিরাময় পদ্ধতি নিয়ে কার্যক্রম ছিল এসব নির্ধারিত বিষয়ের অংশ। বৃক্ষরোপণ প্রকল্প, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান কিংবা নার্সারি প্রকল্পের মাধ্যমে চারা বিতরণ ছিল ঐচ্ছিক কার্যক্রমগুলোর অংশবিশেষ। বিভিন্ন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে শিশুদের বিভিন্ন সময়ে টিকাদান নিশ্চিত করাও ছিল রুটিন কার্যক্রম। কার্যক্রমের প্রমাণস্বরূপ লগবুক জমাদানের মাধ্যমে নির্ধারিত কাজগুলোর পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর জাতীয় পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রকাশিত হয় অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের নামের তালিকায়।

২০২১ সালের অর্জনকারীদের মধ্যে নিজের নাম দেখে আপস্নুত হয়েছিলাম। আরও বেশি ভালো লেগেছিল দলের মোট চারজন একই সঙ্গে এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করায়। বলা বাহুল্য, আমি তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলাম। দেশের একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্জন ছিল আমাদেরই। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপ থেকে ভবিষ্যতেও এরকম অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উন্নতি ঘটাবে বলে আমি আশাবাদী। জিসান মোস্তাসিন

জনগণের মধ্যে একটি সুন্দর সমাজের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা প্রদানের লক্ষ্যে রোভারদের বিভিন্ন সমাজসেবা ও সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে থাকে। যা রোভার স্কাউটদের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড। এই অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি আমার জন্য গর্বের। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রতি। স্কাউটিংয়ের শুরু থেকেই সবসময় চেষ্টা করেছি মানুষের জন্য কিছু করার, বিভিন্ন সমাজসেবা ও সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানুষের উপকার করার পাশাপাশি আত্মোন্নয়ন করার। তাই যখন জেনেছি, আমি সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছি তখন থেকেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের মুহূর্তটি আমৃতু্য মনে রাখার মতো একটা স্মৃতি আমার জন্য। বাকৃবি রোভার স্কাউট গ্রম্নপের প্রতি অফুরান ভালোবাসা। আমি আমার এই অ্যাওয়ার্ড আমার বাবাকে উৎসর্গ করলাম। আর আমার এই অর্জনের পিছনে যারা সবসময় আমাকে সহযোগিতা করেছেন, সাপোর্ট দিয়েছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা আমার প্রিয় রোভার স্কাউট লিডারদের প্রতি। মো. মিলন হোসেন

প্রতীক্ষার এক আলাদা আনন্দ আছে, আবার প্রাপ্তিতেও অন্যরকম আনন্দ, সমাপ্তির আনন্দ তাই দুঃখ মিশ্রিত। গত ২১ জুলাই শুক্রবার, বিকাল ৩টা ৫৭ মিনিটে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে সমাজ উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড ব্যাজ আমাকে প্রদান করা হলো, তেমনি এক মিশ্র অনুভূতির স্বাদ পেলাম। পুরো রোভারিং সময়টাই ছকে বাঁধা সিলেবাসের অংশ যে শুধু তা নয় বরং এর থেকে যে যতটুকু নিতে পারে। আত্মোন্নয়নের যে ব্যাপারটা, তা রোভারিং সিলেবাসে থাকা প্রত্যেকটি অংশই একজন রোভারকে শিক্ষা দেয়। আমার নিজের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়।

রোভারিং-এর মূলমন্ত্র 'সেবা'; এই ব্যাজটি অর্জনের পেছনেও সমাজসেবা ও সমাজ উন্নয়ন দুই ধরনের কাজই সম্পন্ন করতে হয়েছে। সমাজসেবা অংশের টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া, শিশু স্বাস্থ্যের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার মতো কাজগুলো মানুষের সঙ্গে কথা বলার, তাদের বোঝাতে পারার, তাদের আশীর্বাদ পাওয়ার স্বার্থকতা দিয়েছে। আবার সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে ৪টি প্রকল্প সম্পন্ন করতে হয়েছে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত সবাইকেই যা একজন রোভারকে উপার্জনের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে শেখায়। আলহামদুলিলস্নাহ রোভারিং জীবনের সব অর্জন এবং শিক্ষার জন্য। সম্মানিত রোভার স্কাউট লিডারদের ধন্যবাদ আমাকে আগলে রেখে সহায়তা করার জন্য। রোভারিং জীবনে পরিচিত হওয়া সবাইকে ধন্যবাদ জমিয়ে রাখার মতো, গল্প করার মতো কিছু স্মৃতি দেওয়ার জন্য।

ইবনুল ফাইয়াজ

মানুষ যখন মানুষের জন্য, সমাজের ভালোর জন্য কোনো কাজ করে তা তাদের আত্মতৃপ্তির জন্যই করে। মানুষের জন্য কাজ করার যে আত্মতৃপ্তি তার চেয়ে বড় পুরস্কার আর হয় না। এরপরেও যে কোনো কাজের জন্য যখন সামাজিক বা রাষ্ট্রায়ত্তভাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় তার আনন্দ অতুলনীয়। এভাবেই মানুষের ভালোর জন্য, সুন্দর-সুস্থ সমাজ এবং রাষ্ট্র গঠনে আমৃতু্য ভূমিকা রেখে যেতে চাই। মানবতার জন্য যে কোনো চেষ্টা নিজের সন্তুষ্টি জাগায়। সামাজিক জীব হিসেবে কাজ করার দায়বদ্ধতা থাকলেও এরকম অর্জন আরও অনুপ্রাণিত করে কাজ ভবিষ্যতেও করে যাওয়ার। সবাই যেন নিজের অবস্থান থেকে সমাজের জন্য কাজ করে যাই।

'তোমরা পৃথিবীকে যে অবস্থায় পেয়েছ, তার থেকে সুন্দর করে রেখে যেতে চেষ্টা করো', ব্যাডেন পাওয়েলের এমন দৃষ্টিভঙ্গি হোক আমাদের সবার। মাহফুজা আক্তার মিষ্টি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে