শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তৃষ্ণা মেটাতেই এই পথচলা

সানজিদা জান্নাত পিংকি
  ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

অনেক সময় মানুষের কর্মই তাকে এনে দেয় পরিচয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করতে করতেই চোখে পড়ল ছবি তুলে জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন একজন। যার ছবিগুলো প্রাণবন্ত। প্রত্যেক ছবির পেছনে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন গল্প। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এর পেছনের কারিগর সালমান শাহ। পড়াশোনার পাশাপাশি সে শখের বসে ছবি তোলে।

ক্যাম্পাসের বাদামতলায় বসে আড্ডা গল্পে সালমানের কাছ থেকে জানা গেল তার ছবি তোলার নানা অভিজ্ঞতা আর স্মৃতি। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ছেলে সালমান। স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়ে ভর্তি হন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পছন্দের বিষয় নিয়েই পড়াশোনা করেন কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

কলেজজীবন থেকেই ছবি তোলার প্রতি একটা নেশা কাজ করত সালমানের। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর সেই নেশার 'মাদকতা' আরও জেকে বসে তার ওপর। শখের বশে বাটন ফোনে ছবি তোলার শুরুটা হলেও সেই শখ আজ তাকে পৌঁছে দিয়েছে জাতীয় পুরস্কারের কাছে।

নিজের প্রতিভা যাচাইয়ের জন্য শুরু থেকেই বিভিন্ন কন্টেস্টে অংশ নিতেন তিনি। তবে জাতীয় পর্যায়ের কোনো কন্টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল প্রথমবারের মতো। আর প্রথমবারেই তার অর্জনের থলিতে যোগ হলো একটি জাতীয় পুরস্কার।

বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৩ এর ফটোগ্রাফিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন সালমান। কন্টেস্টে মোট ৩টি ছবি জমা দেন তিনি। যেখানে বিজয়ীকে বাছাই করা হয় ভার্চুয়াল জাজমেন্ট তথা লাইক, কমেন্টের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে বেশ সাড়া পান এই ছবিয়াল। সবার প্রচেষ্টায় সারা দেশের ১২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগীদের মধ্যে তৃতীয় হন সালমান। এ অর্জন নিঃসন্দেহে একজন ফটোগ্রাফারের জন্য সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত।

সালমান জানান, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সবার আগ্রহ, উৎসাহ তার ছবি তোলার পথকে সহজ করেছে। কলেজ জীবন থেকে ছবি তোলার ঝোঁক থাকলেও কোনো পস্ন্যাটফর্ম ছিল না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি খোঁজ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবিপ্রেমীদের সংগঠনের। প্রতিটা আর্টিস্টিক কাজের বাস্তবে রূপদানের জন্য কিছু পস্ন্যাটফর্ম প্রয়োজন হয়। সালমানের মতে এই ক্ষেত্রে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (জিবিপিএস) সেরা। জিবিপিএসের নিয়মিত ফটোওয়াক এক ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতা দিয়েছে। শিখিয়েছে বহুকিছু।

ছবি তুলতে গিয়ে কোনো পাগলামি করেছেন নাকি জানতে চাইলে এই তরুণ বলেন, 'ছবি তোলা কখনোই কোনো বোঝার মতো মনে হয়নি বরং যেন এটাই আমার আনন্দের খোরাক। প্রচন্ড গরমে রোজার দিনেও ছবি তুলতে ছুটে গিয়েছি সদরঘাট। ঠিক তেমনি ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কতদিন বেরিয়ে গেছি ক্যামেরা হাতে, তার ইয়াত্তা নেই। জনসাধারণের জীবনযাত্রা ফ্রেমবন্দি করার যে একটা তৃষ্ণা সেই তৃষ্ণা মেটাতেই এই পথচলা। যখনই মনে হয় এখন ছবি তুলতে হবে বেরিয়ে যাই সঙ্গে সঙ্গেই।'

পছন্দের বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন সালমান। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং ভালোবাসা ছেলেটি আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন ছবি তোলাতে। আর তাই ফটোগ্রাফি নিয়ে আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ইচ্ছা রাখেন কর্মজীবনেও ছবি তোলা চালিয়ে যাবেন একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে