রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শোকাবহ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ভাবনা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের উপর বর্বর এবং নৃশংসতম হত্যা বাঙালি জাতির ইতিহাসকে কলুষিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অদম্য বাঙালি জাতি দুই যুগ ধরে চলমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। মূলত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার পূর্বপরিকল্পনার অংশবিশেষ। শোকাবহ আগস্টে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থী মো. সাইফুল মিয়া ও সিফাত রাব্বানী
নতুনধারা
  ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

শোক তারুণ্যের শক্তিতে উদ্ভাসিত হোক

তাসনিম নিশাত

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আগস্ট এলেই মনে পড়ে গ্রিক পুরানের ফিনিক্স পাখির মতো বিশ্বখ্যাত মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে। মহান ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের মানুষটি ছিলেন বলেই বাংলাদেশের লাল-সবুজ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শত বছরের ঔপনিবেশিক বঞ্চনা, শোষণ, নিপীড়ন আর গণতন্ত্রের পদস্খলনের বিপরীতে স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র উপহার দিতে ফাঁসির মঞ্চেও আপস করেননি। একটি কিংবদন্তি বারুদ প্রতিটি বাঙালিকে কেমন অভিন্ন গাঁথুনি দিতে পারে, তা ইতিহাসে বিরল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বুকে যে ২৯টি গুলি লেগেছিল তা কাল থেকে কালান্তরে বাঙালি জাতিকে পিছিয়ে দিল কয়েক হাজার বছর। মাত্র সাড়ে তিন বছরে শিক্ষা, কৃষি, জ্বালানি, পররাষ্ট্রনীতিসহ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের সবখানে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসেন। রক্তগঙ্গার বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতার পরিমেয় আশা অশ্রম্নর প্রগাঢ়তায় ধূলিসাৎ হয়েছে। সর্বোপরি, জাতির পিতাকে হারানোর শোক তারুণ্যের শক্তিতে উদ্ভাসিত হোক, এমনটাই প্রত্যাশিত।

আগস্ট এক মনস্তাপের মাস

আনোয়ারুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবসভ্যতার ইতিহাসে নৃশংস, লোমহর্ষক এবং ঘৃণিত এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের জন্ম হয়। সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, বাঙালি জাতির পিতাকে নিজ বাড়িতে সপরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ স্বাভাবিক গতি ফিরে পেয়েছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উপস্থিতি জানান দেয়। আইএমএফ, কমনওয়েলথ, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড সংঘটিত না হলে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজের অবস্থান জানান দিতে পারত। দেশ থেকে দূর হতো অপরাজনীতির কালো ছায়া, দুর্নীতি, চোরাচালান, মুনাফাখুরি ইত্যাদি। শোকাবহ আগস্ট মাসে মহান জাতির নেতা ও তার পরিবারবর্গের বিদ্রোহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা সফল হয়নি

সুস্মিতা চক্রবর্তী

সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বঙ্গবন্ধু আজীবন বিনা স্বার্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানুষের সর্বাঙ্গীন মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। বহুবার জেলে বন্দিও হয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় সেনাসদস্যের হাতে পয়েট অব পলিটিক্সখ্যাত জাতির জনক সপরিবারে নির্মল হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এই হত্যাকান্ডে এ দেশের মানুষ যেমন হারিয়েছিল তাদের অভিভাবককে তেমনি বিশ্ববাসী বঞ্চিত হয়েছিল একজন মহান নেতার সাহচর্যে, যা এক অপূরণীয় ক্ষতি। নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট ওই সময় মন্তব্য করেছিলেন, 'মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।' বঙ্গবন্ধুর মৃতু্যতে এই দেশ ও জাতি উন্নয়নের গতিশীলতা থেকে বঞ্চিত হয়ে সেনাশাসনের আওতাধীন হয়ে পড়েছিল, যা দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশে চলমান উন্নয়ন বলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রচেষ্টা সফল হয়নি।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শই হোক জীবন গড়ার মূলমন্ত্র

মো. রিয়াদ মিয়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বঙ্গবন্ধু শুধু একটি শব্দ নয়, তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ইতিহাসে দীপ্যমান উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম। বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শের নাম, একটি সংগ্রামের নাম, একটি আত্মবিশ্বাসের নাম, একটি ভালোবাসার নাম। বঙ্গবন্ধু চিরকালই সততা, ন্যায়, কল্যাণ ও আদর্শের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তার জীবনের প্রত্যেকটি অংশে আমরা খুঁজে পাই শক্তি, সাহস ও বেঁচে থাকার প্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হতে, নৈতিকতা, মানবিকতা ও মূল্যবোধ অর্জনে সহায়তা করে। তার সংগ্রামী জীবন আমাদের অসীম সাহসিকতায় পথ চলতে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, ন্যায়ের পথে সাহসের সঙ্গে চলতে আর আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখায়।

সেই ভয়াল কালরাত্রিতে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারালেও তার আদর্শকে ধারণ করার মাধ্যমে আমরা খুঁজে পাবো তার স্বপ্নের বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আমাদের মধ্যে ধারণ করার মধ্যদিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল আমাদের মধ্যে।

বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আজীবন

মোবাশ্বেরা ছিদ্দীকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আগস্ট মাস বাঙালি জাতির শোকের মাস। এ মাসের ১৫ তারিখে বাংলার আকাশ-বাতাস আর প্রকৃতিও অশ্রম্নসিক্ত হয়। কারণ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আর শ্রাবণ মিলে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া গস্নাবনে। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবারকে হত্যা করে ঘাতকের দল বাংলার ইতিহাসে সংযুক্ত করেছে এক কলঙ্কের অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে। এই হত্যাকান্ডের ফলস্বরূপ বাঙালি হারায়নি শুধু এক মহান ব্যক্তিত্ব, হারিয়েছে এক মহান আদর্শও। যে আদর্শ শিখিয়েছে শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, জাতীয়তাবোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তার মৃতু্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব। কেননা একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্থপতি তিনিই। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবেন।

আগস্ট মাসের ইতিহাসে ঝরছে বঙ্গবন্ধুর রক্ত

প্রতু্যৎ দেবনাথ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নির্মম হত্যা শুধু একজন বলিষ্ঠ নেতাকেই হারাইনি, আমরা হারিয়েছি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, শেখ জামাল, স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক আব্দুর রবসহ আরও অনেকে। বঙ্গবন্ধু এ দেশের উপযোগী সমাজতন্ত্র গঠন করতে চেয়েছিলেন। সাদ্দাম হোসেন বঙ্গবন্ধুকে 'সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ' বলে উলেস্নখ করেন। বিভিন্ন কলকারখানা, ব্যাংকসমূহ রাষ্ট্রায়ত্তকরণ, বাকশাল গঠন, সংবিধানের চার মূলনীতি নির্ধারণ করে শ্রমিকদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও শোষণ-বঞ্চনার অবসানই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দেশ্য। এ ছাড়া ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা। কিন্তু আগস্টে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে এ সব কিছুরই অঘোষিত পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রকৃতপক্ষে এটি শুধু একজন মহান নেতার মৃতু্য ছিল না, বরং বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার পরাজয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির এক বিশ্বস্ত বন্ধু। তার মৃতু্য যেন তাই কলঙ্কিত ও রক্তাক্ত করেছে সব আগস্ট মাসকে।

ইতিহাসের কালো অধ্যায় আগস্ট

মো. জাহিদ হাসান

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শোকাবহ মাস হলো আগস্ট। এই মাসে সংঘটিত হয়েছে ইতিহাসের ভয়াবহতম হত্যাকান্ড। একটি চক্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে তৈরি হয় ইতিহাসের ভয়াবহতম দিনটির- ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। এই দিনে সপরিবারে হত্যা করা হয় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, হিমালয় সমান দীপ্ত যার ব্যক্তিত্ব, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করে। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনি, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। সেই থেকে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা ক্ষমতায় এসে এই অধ্যাদেশ বাতিল করা পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি এই পাপের বোঝা বহন করেছিল। পরে জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে। বর্তমান প্রজন্ম এই ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন। বর্তমান প্রজন্মকে সাবধান থাকতে হবে, প্রতিহত করতে হবে সব ষড়যন্ত্র।

ঘাতকরা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছে

পিয়াল দাস অনুপ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জনে তার যে ভূমিকা সেটি সমগ্র পৃথিবীতে প্রশংসনীয়। যদি বাংলাদেশে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট নামে কোনো কালো অধ্যায় না থাকত তাহলে হয়তো আমরা জাতি হিসেবে আজ আরও উন্নত থাকতাম। কিন্তু এ দেশের পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা ৭১ সালে এ দেশের ৩০ লাখ মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেও তারা যখন ক্ষান্ত হয়নি তখন তারা জাতির জনকের হত্যার নীল নকশা করে। বাংলার আকাশে-বাতাসে সেদিন শোকের ছায়া। নীল আকাশ ঢেকে গেছে কালো ছায়ায়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করল। বাংলাদেশ উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে গেল শত বছর। বঙ্গবন্ধুর এ হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তাদের বাঙালি জাতি কখনো ক্ষমা করবে না। একজন বাঙালি হিসেবে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে জড়িত সবার বিচারের দাবি জানাই।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আছে আমাদের হৃদয়ে

মোহাম্মদ জাকারিয়া রায়হান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'-এর জীবন আদর্শ তারুণ্যের অনুপ্রেরণা, উৎসাহ এবং উজ্জীবিত শক্তি। এই একটি নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাঙালির শত বছরের আবেগ। বর্তমান প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা, অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলি, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতায় দীক্ষিত। তারুণ্যের কাছে তিনি গৌরব ও অহংকারের। বঙ্গবন্ধুর কর্ম, জীবন ও আদর্শ আমাদের দেশের তরুণদের অনুপ্রাণিত করছে। জাতির পিতার আদর্শ, দর্শন ও কর্মচিন্তা আমাদের চলার পথের পাথেয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধুর পথচলা তরুণদের অসাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে। তিনি চাইতেন বাঙালি তরুণ যুগের আদর্শগুলো ধরে রেখে বিশ্বমানব হোক। তার অসাধারণ বাগ্মিতা, মানবিকতা, মানুষের প্রতি সহমর্মিতার গুণেই তিনি চির অমলিন। তার ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের শিহরিত করে, অনুপ্রাণিত করে। তার উদার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শোষণহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয় আমাদের উজ্জীবিত করে। অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়া, ভ্রাতৃত্ববোধের মর্মবাণী, দেশরক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার শিক্ষা আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকেই পাই। বঙ্গবন্ধুর পথচলা তরুণদের উৎসাহিত করে অসাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়তে। ১৯৭৫ সালের ভয়াল সেই ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে সপরিবারে খুন হওয়া এই নেতার মৃতু্য শুধুই অপূরণীয় ক্ষতিই ছিল না, ছিল সদ্য স্বাধীনতা অর্জিত এক জাতির শত স্বপ্নের অবসান, ছিল অগ্রগামী জনতার দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয়ের পতন। ইতিহাসের সেই জঘন্যতম হত্যাকান্ড, যার মৃতু্যতে বাঙালি হারিয়েছে তার অভিভাবক, সেই কালো অধ্যায় হোক জাতির এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র। ঘাতকরা জানুক, তাদের নৃশংস হত্যাকান্ডে সেদিন বুলেটের আঘাতে ধানমন্ডির ৩২নং বাড়িটি স্তব্ধ হয়ে গেলেও, স্তব্ধ হয়নি বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া ১৬ কোটি বাঙালির হৃদয়ে সেই স্বাধীনতার চেতনা।

বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশ চিন্তা করা যায় না

রাব্বি হাসান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি আলোকিত অধ্যায় হলো ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মগ্রহণ। কারণ বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামে আপসহীন এই মহান নেতার জন্ম না হলে আমরা আদৌ বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ভূখন্ডের অধিবাসী হতে পারতাম কিনা সন্দেহ রয়েছে। আমেরিকার জাতির জনক জর্জ ওয়াশিংটন ছাড়া যেমন একটি স্বাধীন আমেরিকার কথা চিন্তা করা যায় না, ঠিক তেমনি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া একটি স্বাধীন বাংলাদেশের কথাও কল্পনা করা যায় না। অথচ বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তাকেই করুণ মৃতু্যর মুখোমুখি করেছিল ঘাতকরা। পরিবারের কাউকেই ছাড় দেয়নি। নৃশংসভাবে হত্যা করেছে শেখ রাসেলকেও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের তরুণদের অনুপ্রেরণা ও শক্তি। যার কাছ থেকেই আমরা শিক্ষা পাই মা-মাটির প্রশ্নে আপসহীন নীতি গ্রহণ করতে হবে। যার কাছ থেকেই আমরা অনুপ্রেরণা পাই পরাধীন কোটিপতি থেকে স্বাধীন মধ্যবিত্ত অনেক ভালো। যতদিন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা থাকবে; যতদিন এই বাঙালি জাতি থাকবে, ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম তার কর্মের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির অন্তরে বেঁচে থাকবে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া আদর্শকে ধারণ করেই সব অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। একে ধরে রাখা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব।

১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড ছিল জাতিকে মেরে ফেলার ইতিহাস

সাব্বির হোসেন খোকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বঙ্গবন্ধু একটি জাগ্রত উচ্চারণ যে শব্দের সঙ্গে একটি রাষ্ট্র, স্বাধীনতা, পতাকা জড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান এমন একজন সম্মোহনী নেতৃত্ব যার নেতৃত্বে নতুন স্বাধীন দেশের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হোক তা ওই কুচক্রী মহল মেনে নিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা হিংস্র জানোয়ার শকুনরা তাদের নিজ স্বার্থের হুমকি হবে তা ভেবে কীভাবে কোটি মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যায় সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট গভীর রাতে কতিপয় উচ্চাভিলাষী ক্ষমতালোভী রক্তলিপ্সু বিপথগামী সামরিক অফিসার বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ মোট ২৬ জনকে হত্যা করে। দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্রই হয়েছিল সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার পর সারা বিশ্বে তীব্র শোকের ছায়া নেমে আসে এবং বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে যায় তার ফলে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হয়। ১৫ বছর ধরে সামরিক শাসন চলে। বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ থাকে। ভোট-ভাতের অধিকার বন্দি হয় সেনাছাউনিতে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ঘাতকরা ক্ষান্ত হয়নি, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও বিকৃত করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হয়ে যায়। এভাবেই আমাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলি।

শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যেতে হবে

সুমাইয়া আক্তার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কারণ পঁচাত্তরের এই দিনে আগস্ট আর শ্রাবণ মিলে মিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত। অন্যদিকে আকাশের মর্ম ছেঁড়া অশ্রম্নর পস্নাবনে খুনিদের বাঁচানোর জন্য ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ 'ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ' জারি করেন যা ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায়ের সাক্ষী। স্বাধীনতার সূতিকাগর ও বাঙালি জাতির হাজার বছরের প্রত্যাশা, আদর্শ ও অর্জনকে তারা হত্যা করেছিল। বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসের বিপরীতে তারা রচনা করেছে এক জঘন্যতম, ঘৃণ্যতম কালো অধ্যায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় উজ্জীবিত বাঙালি জাতি আজও বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। আমরা চাই বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর নাম গৌরবের সঙ্গে বাঁচিয়ে রাখতে। ঘাতকদের নৃশংসতার ব্যাপারে প্রজন্মকে জানাতে হবে। তাদের প্রতিহত না করলে তারা আবারও দেশের কল্যাণ বিনষ্টে ঝাঁপিয়ে পড়বে। যারা ৭৫-এর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল তারা সবাই স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। এদের সুষ্ঠু বিচার হলে জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মা শান্তি পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে