শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

দেশেই প্রাপ্তি হোক পছন্দের বই

ইমতিয়াজ হাসান রিফাত
  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দেশেই প্রাপ্তি হোক পছন্দের বই

বই একটি মূল্যবান জিনিস। রবিঠাকুর, নজরুল বা শরৎচন্দ্রের বইয়ের মূল্য সম্পর্কে সবারই জানা। অনেকেই আবার বইয়ের উচ্চমূল্যের কারণে ক্রয় করতে সক্ষম না হওয়ায় পড়া হয় না বিভিন্ন বই। আর এই মূল্যবান বই যদি আপনাকে মাত্র ১০ টাকায় দেওয়া হয়, তাহলে আপনি অনেক অবাক হবেন নিশ্চয়ই! তবে, বইপ্রেমীদের জন্য এটি একটি আর্শিবাদ। আর এই আর্শিবাদ বা অবাক করা কাজটিই প্রায় দুই বছর যাবত করে আসছেন কুমিলস্না সরকারি মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে সালমা তিন্নী।

'দশেই প্রাপ্তি হোক পছন্দের বই' এই শ্লোগানকে ধারণ করে তিনি মাত্র ১০ টাকায় বিতরণ করছেন রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, শরৎচন্দ্রসহ বিভিন্ন কবি-লেখকের বই।

যাত্রা শুরু নিয়ে কথা হয় তিন্নীর সঙ্গে। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই আমার বই পড়া শখ। আমি প্রচুর বই পড়তাম। তবে, আমি বই ক্রয় করতে গিয়ে দাম বেশি থাকায় কিনতে পারতাম না। তখন আমার মনে হয়েছে, আমার মতো অনেকেই আছে, বই পড়তে চায়, কিন্তু দামের কারণে বই কিনে পড়তে পারে না। আমি যখন কলেজে পড়ি তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি কম মূল্যে বই বিতরণ করব।

২০২১ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয় তিন্নীর ১০ টাকার বই বিতরণের কাজ। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজারের ওপর বই বিতরণ করেছেন তিনি।

তিন্নী বলেন, প্রথমে আমরা জায়গা ঠিক করে সেখানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বই নিয়ে যাই। এরপর শুভেচ্ছামূল্য হিসেবে ১০ টাকায় পছন্দমতো একটি বই দিয়ে থাকি। এখন পর্যন্ত আমরা পাঁচ হাজারের ওপর বই বিতরণ করেছি।

সাধারণত রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, শরৎচন্দ্র বা জীবনানন্দ দাশের বইয়ের মূল্য একটু বেশিই। কিন্তু, তিন্নী সেই বই ১০ টাকায় বিতরণ করছে। তাহলে খরচ বহন করেন কীভাবে?

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে স্পন্সর খুঁজে থাকি। তবে, বইয়ের বিষয় তো, স্পন্সর তেমন পাওয়া যায় না। পরিচিত অনেকের কাছ থেকে সহযোগিতা নেই এবং শুভেচ্ছামূল্যের টাকাগুলো মিলিয়ে আমরা এই কাজ করে আসছি।

তিন্নীর এই মহান কাজ করতেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথমে যখন এটা আমার মাথায় আসে তখন বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম সাপোর্ট পাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সাহায্য তো দূর থাক, তারা উপহাসই করেছিল। এক কথায় বলে দিয়েছিল, এটা আবার কীভাবে সম্ভব। এগুলো পাগলামি ছাড়া কিছু না। এ ছাড়া কনজার্ভেটিভ পরিবার হওয়ায় ভয় ছিল। তাই পরিবারকে না জানিয়েই কাজ শুরু করি। ২০২১ সালে প্রথম আমি কুমিলস্না শিল্পকলা একাডেমিতে বই বিতরণ করি। বিতরণের কাজ শেষ করার পর অনেকেই জেনে যায়। আমি মেয়ে হয়ে বাহিরে একা এমন কাজ করছি, বিষয়টা তারা ভালোভাবে নেয়নি। বাসায় বকাঝকাও খেতে হয় অনেক। অবশ্য, তখন বকাঝকা করা হলেও এখন আমি আমার পরিবার থেকে পুরোপুরি সাপোর্ট পাচ্ছি।

'দশেই প্রাপ্তি হোক পছন্দের বই' শ্লোগানে তিন্নী প্রতিষ্ঠা করেছেন 'স্বাধীন চিরকুট' নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠনটির সদস্যরা তিন্নীর ১০ টাকায় বই বিতরণের কাজে সহযোগিতা করে থাকে।

সংগঠনটির নামকরণ নিয়ে তিন্নী বলেন, আমরা তো আসলে মুক্তভাবে সাহিত্যের কথা ছড়িয়ে দিচ্ছি। এখানে সংগঠনের নিজস্ব কোনো প্রোফিট নেই বা প্রোফিটের উদ্দেশ্যও নেই। শিল্প সাহিত্যের প্রতি মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করার উদ্দেশে এই সংগঠন কাজ করে। আর প্রতিটি প্রোগ্রামেই আমরা বইয়ের প্রতি আগ্রহ জাগানোর উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়ে থাকি। সেই অর্থেই স্বাধীন চিরকুট নাম রাখা।

উম্মে সালমা তিন্নীর এই মহান কাজ বর্তমানে শুধু কুমিলস্না জেলাতেই বিস্তৃত। তবে, তিনি চান তার এই কাজ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। তিন্নী বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত জেলাপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই, এটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে।

তবে, '১০ টাকায় বই বিতরণের কাজটি করতে অর্থের জোগানে কিছুটা হিমশিমই খেতে হচ্ছে তিন্নীকে। তিনি বলেন, আমরা যদি কবি-লেখক এবং প্রকাশকদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাই, তাহলে আমাদের কাজ আরও দ্রম্নত করতে পারব এবং সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে