শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
আঠারো বছরে যবিপ্রবি

বিশ্ববিদ্যালয়কে কেমন দেখতে চান শিক্ষকরা

২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হওয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিল আমবটতলা কলেজ নামে। আলোচনা-সমালোচনাকে পেছনে ফেলে শিক্ষা ও গবেষণায় দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্যে এখন প্রথম অবস্থানে যবিপ্রবি। মানুষের কাছে পরিচিত সেই কলেজ নামটি পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে একুশে পদকপ্রাপ্ত অণুজীববিজ্ঞানী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, দক্ষ নেতৃত্ব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকমন্ডলীর প্রত্যক্ষ ভূমিকায় দেড় যুগের যবিপ্রবি এখন দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। দেড় যুগের যবিপ্রবিকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবনাগুলো তুলে ধরছেন দৈনিক যায়যায়দিনের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি শেখ সাদী ভূঁইয়া।
নতুনধারা
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বিশ্ববিদ্যালয়কে কেমন দেখতে চান শিক্ষকরা

সুযোগ সৃষ্টি করে গবেষণালব্ধ জ্ঞানের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা আজ সময়ের দাবি

ড. সেলিনা আক্তার

সহযোগী অধ্যাপক, অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগ।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে অন্যান্য সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে যবিপ্রবি বাংলাদেশের শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য নজির স্থাপন করে আজ দেড় যুগে প্রবেশ করেছে। জন্মলগ্ন থেকেই অসাধারণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কাঠামো, পরিশ্রমী ও উদ্যমী মানুষের একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে এই চত্বর। আমার প্রত্যাশা দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক ও জীবনের মান উন্নয়নের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা চলমান থাকবে ও এই গবেষণালব্ধ প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক মানের ইনকিউবেশন সেন্টার ও রিসার্চ পার্ক তৈরি হবে। রিসার্চ পাইলটিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে গবেষণালব্ধ জ্ঞানের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা আজ সময়ের দাবি। ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশ ও মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্যকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হবে এমন স্বপ্ন দেখি। আশা করি মানসিক স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্য সেবার মানও যুগোপযোগী হবে। ছাত্রছাত্রীদের পুঁথিগত জ্ঞানের পাশাপাশি জীবনের সাথে সম্পৃক্ত গবেষণায় উৎসাহিত করা, আত্মনির্ভরশীল স্টার্ট আপ উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার উদ্দেশ্যে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক মানের কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে এই বিশ্ববিদ্যালয় এমন আশা রাখি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির ধারা অব্যহত থাকুক। স্বপ্ন দেখি দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পাক আমাদের যবিপ্রবি।

বিশ্বের মাঝে শিক্ষা ও গবেষণায় নেতৃত্ব উপযোগী শিক্ষার্থী গড়তে চাই

ড. মো. মেহেদী হাসান

চেয়্যারম্যান, মার্কেটিং বিভাগ।

অল্প সময়ের মধ্যে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে যবিপ্রবি এখন অন্যন্য। দেশের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণার দিক দিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে যবিপ্রবি। আমি চাই হার্ভার্ড, এমআইটি, আইআইটি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতো আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেন গর্বের সাথে বলতে পারে আমি একজন যবিপ্রবির শিক্ষক/শিক্ষার্থী সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। আমাদের শিক্ষার্থীদের সেভাবে গড়তে চাই, তারা যেন দেশকে শিক্ষা ও গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বমানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও নেতৃত্ব দিতে পারে। আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের তৈরি করতে একাডেমিক কারিকুলামও সেইভাবে তৈরি ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে ইনশাআলস্নাহ।

আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে সারা বাংলাদেশে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যবিপ্রবি

ড. হাসান মো. আল-ইমরান

প্রক্টর, যবিপ্রবি।

দেড় যুগে যবিপ্রবি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আশানুরূপের চেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি সেভাবে আগালেও আগামী পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে দেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হবো। এমনকি বিশ্বর্ যাংকিংয়ে আমাদের একটা ভালো অবস্থান অর্জন করতে পারব।

আমরা প্রশাসনিকভাবে সবসময় চেষ্টা করি সবকিছু আপডেট করার, সেই চেষ্টাও অব্যাহত আছে আমাদের। আমরা আশা করি আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে সারা বাংলাদেশে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যবিপ্রবি। সেই লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্প বিপস্নবের যুগে আমাদের অবস্থান জানান দিতে আমাদের একাডেমিক কারিকুলাম আপডেট করেছি এবং সে অনুযায়ী আমাদের শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

আমাদের অ্যালামনাই যত শক্ত হবে আমাদের অবস্থান তত উন্নত হবে

ড. ইঞ্জিনিয়ার ইমরান খান

সহযোগী অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

সমসাময়িক সময়ে শুরু হওয়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি অনেক বেশি, বিশেষ করে গবেষণায়। গত বছরেও আমরা গবেষণায় প্রথম স্থানে ছিলাম, এইটা নিয়েই আমি গর্ব করি যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা এবং অন্যান্য সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার সবসময় চাওয়া যে বিশ্ববিদ্যালয় ভালো একটা অবস্থানে থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তি বা ভালো পজিশনে যাওয়ার যে সংখ্যা সেটা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের অ্যালামনাই যত শক্ত হবে আমাদের অবস্থান তত উন্নত হবে। এই যে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এত বড় পজিশনে পৌঁছার কারণ তাদের অ্যালামনাই অনেক ভালো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জিনিসটা তৈরি করতে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ দুটি : একটি হলো জ্ঞান তৈরি করা এবং আরেকটি হলো জ্ঞান দান করা। জ্ঞান তৈরি করা যায় গবেষণার মাধ্যমে। এর জন্য আমাদের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে উচিত গবেষণা বিষয়ক পড়ালেখার দিকে ধাবিত হওয়া। কর্তৃপক্ষেরও উচিত গবেষণায় আরও বাজেট বৃদ্ধি করা ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রণোদনা দেওয়া। কারণ একজন শিক্ষার্থী কেন গবেষণায় যোগদান করবে যদি সে তার পরিশ্রম অনুযায়ী প্রণোদনা না পান। গবেষণার মান অনুযায়ী সবাইকে তাদের প্রাপ্য দিতে হবে হোক সেটা টাকা, প্রণোদনা বা রিকগনিশন। এই বিষয়গুলো ভালোভাবে পূরণ করতে পারলে তবেই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

শিক্ষার্থীদের আরও বেশি গবেষণা ও সৃজনশীল কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে

কানিজ ফাতেমা কানন

সহকারী অধ্যাপক, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগ।

বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চ শিক্ষা প্রদান করা হয় ও গবেষণাধর্মী জ্ঞানচর্চা করা হয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি জ্ঞানের উৎপাদনও ঘটে থাকে। পৃথিবীতে গড়ে ওঠা প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হলো আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই থেকে আজ অবধি যুগে যুগে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। নতুন নতুন জ্ঞান উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। একটি দেশের উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধন তখনই হয় যখন সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা ও জ্ঞানচর্চা করতে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে। যবিপ্রবিও যুগোপযোগী জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চায় অনন্য ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আরও বেশি গবেষণা ও সৃজনশীল কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই বুদ্ধিবৃত্তিক, জ্ঞানের উৎপত্তি ও উন্মুক্ত চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে