সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিজ্ঞান কল্পগল্প

হিরামন থেকে রিয়ামন

আশরাফ পিন্টু
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

এশিয়ার একটি অনুন্নত দেশ। দেশটি সবেমাত্র দুর্ভিক্ষের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতদিন অভাব অনটনে চললেও বর্তমানে দেশটি ভালোই চলছিল। নিজেদের মধ্যে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না। কিন্তু দেশটি যতই উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছিল ততই ষড়যন্ত্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে লাগল। এ ষড়যন্ত্রকারীরা রাজারই চারপাশে ঘিরে থাকে সব সময়। সব তারই কাছের আত্মীয়স্বজন ও পারিষদবর্গ। রাজা বুঝেও কিছু করে উঠতে পারেন না। রাজা সব সময় চিন্তায় দিন কাটান। সব সময় মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় কখন জানি কি ঘটে? এমন সময় বিদেশ থেকে তার সঙ্গে দেখা করতে এলো এক ব্যবসায়ী। এ ব্যবসায়ী কোনো ছোটখাটো ব্যবসায়ী নয়- রোবট ব্যবসায়ী। তার হাতে হিরামন পাখির মতো একটি পাখি। তিনি রাজাকে বললেন, এটি একটি রোবট পাখি। নাম রিয়ামন। পাখিটি যিনি কিনে নেবেন- সে তারই কথা মতো চলবে। পাখিটি খুবই বুদ্ধিমান। এর মস্তিষ্ক মানুষের চেয়েও উন্নত করে তৈরি করা হয়েছে। এর একটি বিশেষ গুণ এ অনেক কিছু আগাম টের পায় এবং দুষ্ট লোকের ষড়যন্ত্র ধরে ফেলতে পারে। রাজা মনে মনে ভাবছিলেন- এমন জিনিসই তো আমি চাচ্ছিলাম। যখন মানুষকে কোনোক্রমেই বিশ্বাস করা যাচ্ছিল না তখন এমন সায়েন্টিফিক জিনিসই তো আমার বেশি প্রয়োজন। রাজা ব্যবসায়ীর কাছে থেকে উচ্চমূল্যে পাখিটি কিনে নিলেন। ওদিকে রোবট পাখি রিয়ামনের কথা শুনে রাজার ষড়যন্ত্রকারীরা অর্থাৎ রানী, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী প্রমুখ কুবুদ্ধি পাঁকাতে লাগল। রিয়ামনকে কীভাবে মেরে ফেলা যায় প্রথমে তারা পরিকল্পনা করতে লাগল। এক রাতে রানী রিয়ামনকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে তার কাছে যেতেই ও বুঝতে পারল। রানী যেই পাখিটির গলা চেপে ধরেছে তৎক্ষণাৎ পাখিটি মুখ দিয়ে 'কসমিক রে' ছুড়তেই তা রানীর একটি চোখে ভেতরে ঢুকে চোখ অন্ধ হয়ে গেল। 'কসমিক রে'-এর প্রতিক্রিয়ায় রানীর চোখ জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছিল। সে চিৎকার করতে করতে এক দৌড়ে মন্ত্রীর কাছে গেল। রাজা ঘুমিয়ে ছিলেন কাজেই এসব ঘটনার কিছুই টের পেলেন না। রানী মন্ত্রীর কাছে গিয়ে অন্ধ চোখের জ্বালা-যন্ত্রণা নিয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে বলতে লাগলেন, যে করেই হোক পাখিটিকে মেরে ফেলতে হবে এবং এ রাজাকেও তাড়াতে হবে। এরপর এ রাজ্যের রাজা হবেন আপনি আর আমি হব আপনার রানী। মন্ত্রী মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করে রানীকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। পরে অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওই রাতেই রাজাকে কিডন্যাপ করে গহিন জঙ্গলে নিয়ে গেলেন। রাজা চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিলেন। ফিরে যাওয়ার আগে মন্ত্রী চাকু ঢুকিয়ে রাজার এক চোখ অন্ধ করে দিয়ে জঙ্গলে ফেলে চলে গেলেন। ওদিকে রিয়ামন দেখল রাজা বিছানায় নেই। ও ষড়যন্ত্রে কথা বুঝতে পারল। তৎক্ষণাৎ ওর জন্মদাতা সুপ্রিয়া রোবটের সঙ্গে যোগাযোগ করল। পাখার নিচে লুকিয়ে থাকা একটি বোতাম টিপে সে সব কথা সুপ্রিয়াকে খুলে বলল। সুপ্রিয়া ছিল অত্যন্ত বুদ্ধিমতী রোবট। সে রিয়ামনের বর্ণনা মতো গভীর জঙ্গলে চলে এলো। এসে দেখল-রিয়ামন আগেই রাজার কাছে পৌঁছেছে। ওরা রাজাকেতাড়াতাড়ি রোবট হাসপাতালে নিয়ে গেল। ওখানে তাকে সুস্থ করে তুলল এবং রাজার অন্ধ চোখে একটি মার্কারির চোখ বসিয়ে দিল। রাজা মার্কারি চোখ দিয়ে রোবটের মতোই সবকিছু দেখতে পেলেন। সুপ্রিয়ার সেবাযত্ন এবং বুদ্ধিমত্তায় রাজা মুগ্ধ হয়ে গেলেন। আর মানুষকে বিশ্বাস নয়, রোবটই মানুষের চেয়ে বেশি বিশ্বস্ত। ওদের মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র বা বেইমানি নেই। রাজা সুপ্রিয়াকে বিয়ে করে নিজরাজ্যে ফিরে এলেন। সঙ্গে নিয়ে এলেন অনেক রোবট সৈন্য। রাজা- রানী, মন্ত্রী ও অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদে বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি দিলেন। কাউকে দিলেন মৃতু্যদন্ড, কাউকে দিলেন যাবজ্জীবন কারাদন্ড, কাউকে বা পাঠালেন নির্বাসনে। এরপর রিয়ামনসহ রোবটদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিলেন। কিছু বিশ্বস্ত মানুষ আর রোবটদের নিয়ে রাজা সুখে-শান্তিতে দেশ পরিচালনা করতে লাগলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে