সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাখির প্রতি ভালোবাসা

মাহমুদুল হাসান মুন্না
  ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

সোমবার। হাটের দিন। দুপুরের পর থেকে মানুষের আনাগোনা বাড়ে। বিকালবেলায় হাট বেশ জমে। কাফির দাদু দুপুরে খেয়ে ভাতঘুম দিলেন। তিনি আজ হাটে যাবেন। কাফি পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে বসে আছে। সেও দাদুর সঙ্গে হাটে যাবে। তাদের বাড়ি থেকে এক মাইল দূরে হাট বসে। হাটের দিনটাই যেন গ্রামের মানুষের মেলা। কাফি আগে কখনো হাটে যায়নি। সে স্কুলে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। এখনো ছোট মানুষ। দাদু বলেন, আগে বড় হও, তারপর হাটে নিয়ে যাব। কাফি বলে, আমি গাছে চড়তে জানি, সাঁতার কাটতে জানি, ছোট সাইকেলটা চালাতে জানি, ক্লাস থ্রিতে পড়ি, আমি তো বড় হয়ে গেছি। দাদু বলেন, তোমাকে আরও বড় হতে হবে, বিদ্বান হতে হবে, তাই পড়ালেখায় মনোযোগী হতে হবে। তোমাকে সত্যবাদী, নম্র-ভদ্র ও বিনয়ী হতে হবে। কাফি বলে, ইনশাআলস্নাহ, আমি সৎ মানুষ হব। শেষ পর্যন্ত দাদু কাফিকে হাটে নিয়ে যেতে রাজি হলেন। কাফি দাদুর হাতের আঙুল ধরে হাঁটা শুরু করল। দাদু বলে দিলেন হাটে যেন ভুলেও আঙুল না ছাড়ে, নইলে মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাবে।

কাফিদের নতুন একটি পুকুর খনন করেছে। পুকুরপাড়ে কোনো গাছ লাগায়নি। দাদু চারাগাছ কিনতে হাটে যাচ্ছেন। কাফি তার পছন্দের ফুল ও ফলের চারা আনবে, তাই দাদুর পিছু নিয়েছে। দাদা-নাতি হাঁটতে হাঁটতে হাটে পৌঁছে গেল। দাদু প্রথমে কাফিকে কিছু খাবার কিনে দিলেন। তারপর কয়েকটি খেলনা কিনে দিলেন। আছরের নামাজের সময়ও হয়ে গেল। দাদু কাফিকে মসজিদের বারান্দায় বসিয়ে দিলেন, দুষ্টামি করতে বারণ করলেন। কাফি দাদুর সঙ্গে অজু করেছিল- সে মক্তবে সূরা ও দোয়া শিখেছে। দাদু নামাজে দাঁড়ালে সেও পাশে দাঁড়াল, নামাজ পড়ল। দাদু খুব খুশি হলেন। মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন। নামাজ শেষে তারা চারা কিনতে গেলেন। দাদু অনেকগুলো চারাগাছ নিলেন, যেগুলোতে কাঠ হয়। কিন্তু কাফি কিছু ফুল ও ফলের চারা পছন্দ করল। দাদু সবগুলোর দাম চুকিয়ে দিলেন। তারপর ভ্যানে করে চারা নিয়ে সন্ধ্যার আগে ফিরলেন। কাফি খুব খুশি, হাটে অনেক মজা হয়েছে। সে সাপখেলা দেখেছে, ম্যাজিক দেখেছে।

পরদিন বিকালে দাদা-নাতি চারাগাছগুলো রোপণ করল। কাফি সুন্দর করে ফুলের বাগান সাজাল। সে দাদুর সঙ্গে গাছে পানি দেয়, দেখাশুনা করে। এভাবে এক সময় গাছগুলো অনেক বড় হলো। সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটল, রঙিন রঙিন প্রজাপতি আসতে লাগল। কাফিও প্রকৃতির মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করে। একদিন সে দেখল একটা পেঁপে হলদে হয়েছে। এই খবর দ্রম্নত দাদুকে দিল। দাদু পেঁপেটি পেড়ে আনলেন। কাফি গাছপাকা সুরসালো পেঁপে মজা করে খেল। কিছুদিন পর আরেকটি পেঁপে হলদে হলো। দাদু এটা পাড়তে গেলেন, কিন্তু কাফি পাড়তে দিল না। কাফি বলল, দাদু, আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো পাখি আসে।

পাখিরা পাকা ফল খেতে ভালোবাসে। আমি তাদের মেহমানদারি করাতে চাই। এজন্যই ফলের চারাগুলো এনেছিলাম। স্কুলে স্যার বলেছিলেন পাখি শিকার করতে নেই, তাদের বাসা ভাঙতে নেই, ডিম ও ছানা চুরি করতে নেই। ভালো ছেলেরা পাখিদের ভালোবাসে। তাই আমিও তাদের ভালোবাসি। কাফির কথা শুনে দাদু মুগ্ধ হলেন, তার কথা রাখলেন। পেঁপেটি গাছে রয়ে গেল। পরদিন সকালে কাফি পুকুরঘাটে বসে আছে, তখন একটি বুলবুলি পেঁপে গাছে বসল, এদিক ওদিক তাকিয়ে পেঁপে খাওয়া শুরু করল। পাখিদের মেহমানদারি করতে পেরে কাফিও খুব আনন্দিত হলো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে