রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সোস্যাল মিডিয়ার আসক্তি দূর করে মানসিক সুস্থতায় ডোপামিন ডিটক্স!

কেউ আমাদের ফেসবুক পোস্টে ভালো কমেন্ট করলে আমাদের খুশি লাগে, কেউ নতুন ছবি আপলোড করলে দেখতে ভালো লাগে এবং এভাবেই চলতে থাকে। একটু খেয়াল করে দেখেছেন কি, এই যে স্ক্রলিং আমরা করছি, এটা একদম নেশার মতো হয়ে যায়! কিন্তু এই নেশা কাটানোর উপায় কী?
সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

আমাদের সকাল এখন শুরু হয় ঘুম থেকে উঠেই একবার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। এরপর একটার পর একটা নোটিফিকেশন! অনেকের হয়তো ঘুম থেকে ওঠার পর ঘণ্টা কেটে যায় ফ্রেশ না হয়েই ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে! নোটিফিকেশন, নতুন খবর, কমেন্ট- এগুলো হুট করেই এক্সাইটমেন্ট আনে আমাদের মধ্যে। এই যে চনমনে ভাবটা আমাদের মনে আর শরীরে আসে, এর পেছনে মস্তিষ্ক থেকে ক্ষরণ হয় 'ডোপামিন' নামের একটি হরমোন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই যে আমার সময় কাটাচ্ছি, এটি কিন্তু অনেকটা নেশার মতো। সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি দূর করা কি সম্ভব? আমাদের জীবনে সরাসরি এর ক্ষতিকর প্রভাব আছে কি? আজকের ফিচারে এই বিষয়েই জানাবো।

কেউ আমাদের ফেসবুক পোস্টে ভালো কমেন্ট করলে আমাদের খুশি লাগে, কেউ নতুন ছবি আপলোড করলে দেখতে ভালো লাগে এবং এভাবেই চলতে থাকে। একটু খেয়াল করে দেখেছেন কি, এই যে স্ক্রলিং আমরা করছি, এটা একদম নেশার মতো হয়ে যায়! কিন্তু এই নেশা কাটানোর উপায় কী? ডোপামিন হরমোনের কথা কেন এখানে আসছে? আজ সব বিষয়ই ক্লিয়ার করার চেষ্টা করব।

ডোপামিন কী

ডোপামিন হলো এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোন। স্বাভাবিকভাবেই এটি মানব শরীরে তৈরি হয়। আনন্দের অনুভূতি দেওয়া, মোটিভেশন দেওয়া এগুলো মূলত ডোপামিন হরমোন করে থাকে। ডোপামিনকে বলা হয় 'ভববষ-মড়ড়ফ যড়ৎসড়হব'! আমাদের মস্তিষ্ক একটি রিওয়ার্ড সিস্টেম বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এডাপ্ট করে নিয়েছে, সেটি হলো টিকে থাকার জন্য কোনো কাজ করে সেখান থেকে আমাদের মস্তিষ্ক একটি রিওয়ার্ড বা পুরস্কার চায়। এরপর সেই রিওয়ার্ডের মোটিভেশন বা উৎসাহে পরের কাজগুলো আবার সে করে। এই ডোপামিনের জন্যই আমরা আমাদের জীবনের অগণিত কাজ করে থাকি। অর্থাৎ, কাজ কর আর রিওয়ার্ড পাও! তবে আসলেই কি ডোপামিন এত ভালো? দেখা যাক, একটি ছোট্ট তুলনার মাধ্যমে।

এর মাত্রা কম বেশি হলে কী হয়?

১. কী হয় যখন ডোপামিন সঠিক পরিমাণে ক্ষরণ হয়? এই প্রশ্নটার উত্তর হচ্ছে- আমরা তখন বেশ হ্যাপি, অ্যালার্ট, ফোকাসড ও মোটিভেটেড ফিল করি।

২. যখন ডোপামিন স্বাভাবিকের তুলনায় কম ক্ষরণ হয়, আমরা তখন বেশ ক্লান্ত অনুভব করি এবং নিজেদের দুঃখী মনে করি। কাজে উৎসাহ আসে না। কিছুক্ষেত্রে মেমোরি লস, মুড সুইং, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগে ব্যাঘাত এমনকি সেক্সচুয়াল নিডও কমে যায়।

৩. যখন ডোপামিন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষরণ হয়, মানুষ নিজেকে তখন বেশ এনার্জেটিক অনুভব করে। সেক্সচুয়ালি অ্যাকটিভ হতে চায়। তবে আচরণে বেশ অ্যাগ্রেশন কাজ করে। সোজা বাংলায় যাকে বলে বদ মেজাজ।

ডোপামিন রাশ কীভাবে হয়?

ডোপামিন কী সেটি তো জানা হলো, এবার আমরা বোঝার চেষ্টা করি ডোপামিন রাশ কী। তাহলে আমাদের জন্য কেন ডোপামিনের ডিটক্স করা দরকার সেটা বুঝতে সুবিধা হবে। যখন কোনো কাজের জন্য খুব কম সময়ের মধ্যে আমাদের মস্তিষ্কে খুব দ্রম্নত ডোপামিন রিলিজ হয়, তখন সেটাকে আমরা ডোপামিন রাশ বলতে পারি। কোন কোন কাজে ডোপামিন রাশ হয়, দেখে নিই এক নজরে-

হ নিষিদ্ধ কোনো খেলায় জেতার আনন্দ ডোপামিন রাশ দেয়

হ জাংক ফুড খেলে ডোপামিন রাশ হয়, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে সুগার থাকে এবং সুগার ডোপামিন ট্রিগার করে

হ সোস্যাল মিডিয়াতে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার পাওয়া অল্প সময়েই ডোপামিন রাশ দেয়

হ অ্যাডভেঞ্চার বা রিস্ক আছে এমন কাজে সফল হলেও ডোপামিন রাশ হতে পারে

সাইড ইফেক্টটা আসলে কী?

ডোপামিন যখন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে, তখন আমরা কিন্তু নেশার লুপের মধ্যে পড়ে যাই এবং বারবার চাই সেই ঘটনাটা ঘটুক। যেমন সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে যদি কেউ আমাদের পোস্টে লাইক, কমেন্ট করে তাহলে আমাদের ডোপামিন রাশ হয়, আগেই বলেছি। যেই কাজে এই ধরনের সাময়িক আনন্দ পাচ্ছি, আমরা আবার সেটা রিপিট করি, এটি কমন হিউম্যান নেচার। তখন আবার ডোপামিন রাশ হয়, এভাবে কাজটা আমরা করতেই থাকি এবং এক সময়ে তা নেশার রূপ নেয়। ইয়াং জেনারেশনের বড় একটি অংশ কিন্তু এই লুপেই আছে।

আমাদের ওয়ার্কপেস্নসে, পারিবারিক পরিবেশে এই রকম আচরণ নিজেদের ও পরিবারের অশান্তির কারণ হতে পারে। নিজের প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। নতুন কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা কমে যায়। এটি লুপেই জীবন থেমে থাকে যেন! এছাড়াও অনেক সময় ব্যক্তি নিজে বুঝতে পেরেও এই ডোপামিন রাশ ছাড়তে পারে না, তখন ডিটক্স বেশ কাজে দেয়। ডোপামিন ডিটক্স আমাদের এক ধরনের নেশা থেকে দূরে রাখে এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হেল্প করে।

সোস্যাল মিডিয়ার আসক্তি কমাতে ডোপামিন ডিটক্স

ডোপামিন ডিটক্স হলো যেসব জিনিস থেকে আপনি এই রকম ক্ষণিকের আনন্দ পান, সেগুলোকে সাময়িক সময়ের জন্য দূরে রাখা। ডোপামিনকে ডিটক্স বিষয়টি খুবই সিম্পল। চলুন জেনে নেই এখন।

১. আগে চিহ্নিত করে ফেলুন কোন কোন জিনিস আপনাকে ডোপামিন রাশ দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে জাংক ফুড, লং টাইম সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা, গেমস এগুলো ডোপামিন রাশের কারণ থাকে।

২. একদিন, এক সপ্তাহ, এক মাস সময় নিয়ে ডোপামিন ডিটক্স করা যায়। নিয়ম হলো আপনি যে জিনিস থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাচ্ছেন, সেটিকে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একবারও ব্যবহার করা যাবে না। যেমন, ধরে নিন আপনি চাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স করবেন ৭ দিনের জন্য। সেক্ষেত্রে ৭ দিন পুরোপুরি ফোন বা ল্যাপটপ আপনার আয়ত্ত থেকে একটু দূরে রাখতে হবে- যাতে নোটিফিকেশন এলেই আপনি দৌড়ে চলে না যান! ইম্পরট্যান্ট কল আসতেই পারে, সেক্ষেত্রে মোবাইল দূরে রাখা সম্ভব না হলে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ ডিলিট করে দিন।

এই সময়ে কী করবেন?

এখন সোশ্যাল মিডিয়া তো বাদ দিলেন, এই সময়ে তাহলে কী করবেন? পছন্দের কোনো রান্না করতে পারেন, বই পড়তে পারেন, গার্ডেনিং করতে পারেন, ঘর গোছাতে পারেন, ঘুরতে যেতে পারেন বাইরে কোথাও, পরিবারকে সময় দিতে পারেন। একটু খুঁজলেই আপনার জন্য একদম সেরা অপশনটি আপনিও পেয়ে যাবেন! কী দারুণ সময় কাটবে একবার ভাবুন তো। এই সময়ে ক্রিয়েটিভ কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন, আপনার চিন্তাশক্তি বাড়বে, মানসিকভাবেও স্বস্তি পাবেন। এটাই হলো ডোপামিন ডিটক্সের মেইন পারপাস।

ডোপামিন আমাদের জন্য আশীর্বাদ ও অভিশাপ দু'টোই হতে পারে, পার্থক্যটা তৈরি হয় আমাদের নিজের মস্তিষ্কের ওপর নিয়ন্ত্রণ কতটুকু আছে সেটার ওপর। যারা সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি বা নেশার লুপ থেকে বের হতে চাচ্ছেন, তারা অবশ্যই ডোপামিন ডিটক্স ট্রাই করুন। জীবন উপভোগ করুন একদম নিজের মতো করে। আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে