সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহসা

কানিজ ফাতেমা খুশী
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দুই মাস আগে কলেজে পড়তে গ্রাম থেকে শহরে এসেছে রাবিয়া। আত্মবিশ্বাসী মেয়ে রাবিয়া কাউকে ভয় পায় না। যেখানে ভুল দেখে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে। সে ভুল ঘটতে দেখতে পারে না, ভুলকে সমর্থন করতে পারে না। তার এমন স্বভাবের কারণে অচিরেই মেয়েদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পড়াশোনাতেও সে খুবই ভালো, তাই

শিক্ষকরাও তাকে নিয়ে খুশি।

একদিন মেয়েদের হোস্টেলের পেছনের বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে পড়ে। এ কারণে বহিরাগতরা অকারণে প্রবেশ করতে থাকে। প্রথমে রক্ষীদের বকাঝকা করে তারা প্রবেশ বন্ধ করে দিলেও কিছুদিন পর আবার

ছেলেরা জ্যাম হতে থাকে।

এখন মেয়েরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে শুরু করেছে। দিন শেষ হয়ে গেল। কিছু কৌতুকপ্রিয় ছেলে রাতের বেলায় ভাঙা দেয়াল দিয়ে মেয়েদের হোস্টেলে ঢুকে নানারকম মন্তব্য করতে থাকে। পরদিন রাবিয়া বন্ধুদের বলল, এখন অনেক হয়েছে। আস আমরা সবাই মিলে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছে অভিযোগ জানাই।

কিন্তু হোস্টেলের ম্যাডাম তাকে যেতে বাধা দিয়ে বললেন, আমি নিজেই প্রিন্সিপাল ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলব।

দেখতে দেখতে তিন-চার দিন হয়ে গেল। ছেলেদের অপ্রয়োজনীয় প্রবেশ বাড়তে থাকে। দু'দিন পর কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ডিসি রোকনুজ্জামান খান। রাবিয়া বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে ভাবল তার কী করা উচিত। সকাল ১০টায় ডিসি কলেজে পৌঁছালে স্বাগত সংগীত পরিবেশন, প্রধান অতিথিকে সম্মাননা জানানো হয়। এবার ডিসি স্যার বক্তব্য দিতে মঞ্চে এলেন। তিনি মেয়েদের জন্য পরিচালিত পরিকল্পনার কথা সবাইকে জানালেন। তিনি বললেন, কলেজের মেয়েরা যে কোনো ধরনের সমস্যায় তার সঙ্গে কথা বলতে পারে। মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য তিনি শিগগিরই একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করবেন।

রাবিয়া এগিয়ে এসে বলল, স্যার আপনাকে কিছু বলার আছে। আমাদের কলেজে কিছুই ভালো যাচ্ছে না।

সবাই রাবিয়ার দিকে তাকালো। হোস্টেল ম্যাডাম তাকে চুপ করার চেষ্টা করলেন। রাবিয়া তীব্র গলায় বলল, ম্যাডাম আপনি নিজেও কিছু করছেন না। আমাদেরও কিছু বলতে দিচ্ছেন না। আমি স্যারের সঙ্গে কথা বলব।

ব্যাপারটা বাড়তে দেখে ডিসি স্যার ও প্রিন্সিপাল ম্যাডাম রাবিয়াকে ডেকে সমস্যাটা জিজ্ঞেস করলেন। রাবিয়া পুরো ঘটনা বর্ণনা করল, কীভাবে কয়েকদিন ধরে ভাঙা দেয়াল দিয়ে বাইরের লোকজন মেয়েদের হয়রানি করছে, ছেলেরাও গার্ডদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। রাবিয়া নির্ভয়ে আরও বলল, আমরা সবাই হোস্টেল ম্যাডামকে আগেই সব বলেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছে যেতে দেয়নি।

ডিসি স্যার বললেন, রাবিয়ার মতো প্রতিটি মেয়ের

উচিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা।

তিনি কলেজে ঢুকে পড়া ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন। অধ্যক্ষ হোস্টেল ম্যাডামকে চার মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।

দ্বিতীয় দিন থেকেই ভাঙা দেয়াল মেরামতের কাজ শুরু হয়। হোস্টেলে থাকা সমস্ত মেয়েরা রাবিয়ার অনেক প্রশংসা করল। উৎসাহ পেয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, এখন আমরাও চুপ থাকব না। রাবিয়ার মতো সত্য কথা বলার সাহস দেখাব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে