আদালতে জামিন নিয়ে অসাধু চক্র বিরাট প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে থাকে। কোনো ব্যক্তি যখন গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় থাকেন বা হাজতে থাকেন, তখন তার ও তার পরিবারের মানসিক অবস্থা বেশ দুর্বল থাকে। এ ধরনের দিশাহারা ব্যক্তিদের ভুলভাল বুঝিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া সহজ হয়। জামিন নিয়ে কিছু বিষয় জানা থাকলে আপনি বেশকিছু প্রতারণা এড়াতে পারেন।
১. জামিনযোগ্য মামলায় জামিন পেতে
পেরেশান হবেন না
ফৌজদারি অপরাধগুলো দুই ধরনের- জামিনযোগ্য এবং জামিন-অযোগ্য। যেমন : চেক ডিজঅনারের অপরাধ বা সাধারণ জখমের অপরাধগুলো জামিনযোগ্য। এ ধরনের জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া আসামির অধিকার। আদালতে যে কোনো আইনজীবী দাঁড়িয়ে আবেদন করলেই এসব মামলায় জামিন হয়ে যায়। সুতরাং এ ধরনের মামলায় জামিন পেতে অতিরিক্ত পেরেশান হবেন না।
আবার জামিন-অযোগ্য মামলায় (যেমন: নারী শিশু নির্যাতনের মামলা) জামিন পাওয়া অধিকার না হলেও আসামি যদি নারী হয়, ১৬ বছরের কম বয়সি হয় কিংবা মারাত্মক অসুস্থ হয়, এ সব ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া খুব একটা কঠিন হয় না। সুতরাং যে সব ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া সহজ, সে সব ক্ষেত্রে পেরেশান হয়ে অতিরিক্ত পয়সা খরচ করবেন না।
কোন অপরাধ জামিনযোগ্য আর কোনটি জামিন-অযোগ্য সেটি জানতে ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় তফসিল বা সংশ্লিষ্ট আইনটি দেখুন। প্রয়োজনে আইনের কোনো শিক্ষার্থীর শরণাপন্ন হন। আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকেও এ ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন। আবার ১৬৪৩০ নম্বরে (টোল-ফ্রি সরকারি আইনগত সেবার হেল্পলাইন) ফোন দিয়েও এ সব তথ্য পেতে পারেন।
২. বেলবন্ডের টাকা আদালত গ্রহণ করে না
আসামিকে আদালত অনেক সময় বিভিন্ন অংকের টাকার বেলবন্ড দাখিল করতে বলে। আপনাকে ১০,০০০ টাকার বেলবন্ড দাখিল করতে বলার অর্থ হলো আপনি জামিনের শর্ত লংঘনপূর্বক পলাতক হলে আপনার জামিনদারকে আদালত ওই পরিমাণ অর্থ দাখিল করার আদেশ দিতে পারবেন। জামিন পাওয়ার শর্ত হিসেবে কখনই এই টাকা বেলবন্ডের সঙ্গে আদালতে দাখিল করতে হয় না। আপনি জামিনের শর্ত মেনে চললে ওই অর্থ আদালতকে কখনই প্রদান করতে হবে না। আসামি পলাতক হলে বেলবন্ডের টাকা আদালত কখনো আইনজীবীর কাছ থেকে আদায় করেছে বলে দেখা যায় না।
পলাতক আসামির ক্ষেত্রে আদালত জামিন বাতিল করে ওয়ারেন্ট ইসু্য করে থাকেন। একই কথা পারিবারিক গার্ডিয়ানশিপ মামলার বন্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বন্ডের টাকা আদালতে দাখিল করতে হয় না।
৩. পারিবারিক মামলায় ওয়ারেন্ট বা জেল হলে টাকা জমা দিলেই বিপদমুক্তি
পারিবারিক মামলার বিবাদী হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে যদি ওয়ারেন্ট হয় বা আপনাকে কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে ডিক্রিকৃত টাকার সমুদয় আদালতে জমা দিয়ে আপনি বিপদমুক্ত হতে পারেন। পুরো টাকা জমা দিতে অপারগ হলে কারণ উলেস্নখ করে ডিক্রির উলেস্নখযোগ্য অংশ বা কিছু জমা দিয়ে আদালতের কাছে কিস্তির প্রার্থনা করতে পারেন। সঠিকভাবে নিয়মিত টাকা জমা দিলে ওয়ারেন্ট বা কারাদন্ডের ভয় নেই।