শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের মামলায় ডাক্তারি পরীক্ষার সার্টিফিকেটের গুরুত্ব

অ্যাডভোকেট উদয় তাসমির
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(খ) এবং ১১(গ) ধারায় যৌতুকের দাবিতে গুরুতর আঘাত, সাধারণ আঘাত তথা নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে এমন নারীর সাক্ষাৎ পেয়েছি যিনি দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত হয়েছেন, সময়ে সময়ে যৌতুক দিয়েছেন, দেনমোহরের অর্থ পাননি এবং একটি সময়ের বিরতির পর তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি নির্যাতনের সময় ধৈর্য ধরে ছিলেন এই ভেবে যে নির্যাতনকারীর মন পরিবর্তন হবে তাই কাউকে বলেননি কিংবা আইনের আশ্রয় নেননি। ডাক্তারের কাছে যায়নি অথবা গেলেও উপযুক্ত পন্থায় সনদ সংগ্রহ করেনি।

কিন্তু যখনই স্বামী তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন তখন তার মনে হয়েছে এই নির্যাতনের বিচার হওয়া দরকার অথবা প্রতিকার প্রয়োজন। এ অবস্থায় তার জন্য প্রতিকার পাওয়ার উপায় অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায় কারণ জখমের দাগ হয়তো ততদিনে শরীর থেকে মিশে গেছে। তখন অনেক ক্ষেত্রেই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে দুর্বল ভিত্তির সাক্ষ্যের আশ্রয় নিতে হয় যা আখেরে অনেক ক্ষেত্রেই টেকে না।

তাই এ ধরনের নির্যাতনের মুখোমুখি হলে ভিক্টিম তার সুযোগ মতো, প্রদর্শিত চিত্র-১ অনুযায়ী, যে কোনো সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে পুলিশ কেসের অধীনে আঘাতের বিবরণ সংবলিত একটি ডাক্তারি সনদ সংগ্রহ করে ফেলতে পারে। অথবা বেসরকারি মেডিকেল থেকেও এ ধরনের সনদ নেওয়া যেতে পারে।  মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেই আমি মামলার পরামর্শ দিচ্ছি না। অন্তত ভিক্টিম যদি এটা নিজ সংগ্রহে রাখেন তবে শেষ পর্যন্ত যদি সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে পরিস্থিতি ধৈর্যের বাইরে চলে যায় তখন তিনি যেন উক্ত ডাক্তারি সনদ কাজে লাগিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। কারণ ফৌজদারি মামলা কখনো তামাদিতে বারিত হয় না।

২০২০ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১১ (খ) এবং ১১ (গ) ধারায় দায়েরকৃত মামলার ক্ষেত্রে ডাক্তারি সনদের গুরুত্ব দৃষ্টিপাত একটি রায়ে বলেন, 'এ ধারায় অপরাধ বিচারার্থে আমলে গ্রহণ কিংবা চার্জ গঠনের সময় প্রসিকিউশনের অন্যান্য বিষয় বিবেচনা ছাড়াও ট্রাইবু্যনালকে অবশ্যই আরও দুটি মানদন্ড পূরণ করতে হবে- ১) আসামি কর্তৃক আঘাতের ক্ষেত্রে ভিক্টিম স্ত্রীকে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করা হয়েছে, ২) এই পরীক্ষার সমর্থনে মেডিকেল অফিসারের সনদ আছে এবং উক্ত সনদে ভিক্টিমের শরীরে আঘাতের চিহ্নের কথা উলেস্নখ আছে। ভিক্টিমের শরীরে আঘাতের সমর্থনে সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেলের সনদ না থাকলে ট্রাইবু্যনাল বিচারার্থে অপরাধ আমলে গ্রহণ কিংবা চার্জ গঠন করবে না।'

রেফারেন্স : [উৎপল কুমার রয় বনাম মেঘনাদ সাহা- ক্রিমিনাল আপিল নং ১৬৬০/১৬,(২০২০)]

আইনজীবী হওয়ার সুবাদে সমাজের চালচিত্র অন্যদের চেয়ে আমাদের চোখে একটু বেশি এবং ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ধরা পড়ে এটাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষ নিয়ে আমাদের কাজ। আমরা দেখি অথবা না দেখি যৌতুকের দাবিতে এই যুগেও নির্যাতন চলছে, চলে। কেউ মান-সম্মানের ভয়ে মেনে নেন, কেউ বা সন্তান-সংসারের দিকে চেয়ে চুপ করে সহ্য করেন, কেউ বা শেষ আশ্রয় হারাবার ভয়ে বোবা সেজে থাকে। মোটামুটি বড়সড় ঝামেলা না হলে আদালতে এ বিষয়ে কেউ আসতে চান না। তবে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা যারা করে তাদের বিষয় ভিন্ন। একটা আইন যখন প্রণয়ন করা হয় তখন তা অপপ্রয়োগের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয় না।  এই আইনের অধীনে মিথ্যা মামলা দায়েরের সাজার ব্যাপারে উলেস্নখ আছে।

\হলেখক, তরুণ আইনজীবী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে