সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
অনুপ্রেরণা

ভারতে বিড়ি তৈরির কাজ করা ব্যক্তি এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারক

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

কয়েকদিন আগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আইনজীবী সুরেন্দ্রন কে প্যাটেল যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতের বিচারক হিসেবে শপথ নেন। নিজের অনুপ্রেরণাদায়ক সফল যাত্রার কারণে তিনি পত্রিকার শিরোনাম হন। বিবিসি হিন্দির ইমরান কোরেশি এই ব্যক্তির সম্পর্কে বলেছেন, যিনি এক সময় ভারতে বিড়ি তৈরি করতেন। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের আদালতের বিচারক।

৫১ বছর বয়সি প্যাটেলের জন্ম দক্ষিণ ভারতীয় রাষ্ট্র কেরালায়। টেক্সাসের ফর্ট বেন্ড কাউন্টির ২৪০তম জুডিশিয়াল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

সুরেন্দ্রন কে প্যাটেল ১ জানুয়ারি শপথ নেন। এর পাঁচ বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন। তিনি বলেন, সবই কঠোর পরিশ্রম, কঠোর সংগ্রাম ও পরিশ্রমের ফল। তিনি আরও বলেন, অনেকে আছেন, যারা আমাকে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন। প্যাটেলের শিশুকাল কাটে দারিদ্র্যের কষাঘাতে। তার বাবা-মা ছিলেন দিনমজুর। ছয় সন্তান নিয়ে তাদের এই দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভর করতে হয়। প্যাটেল শিশু বয়সে পাতায় তামাক পেঁচিয়ে বিড়ি তৈরি করতেন। তিনি বলেন, আমাকে এই কাজ করতে হতো তিনবেলা খাওয়ার জন্য। আমার বড় বোন এবং আমি গভীর রাত পর্যন্ত বসে এই কাজ করতাম।

কিশোর বয়সে তিনি স্কুলের পরীক্ষায় ভালো করতে না পেরে ড্রপআউট হয়ে যান। ভাগ্যকে একমতো মেনেই নিয়েছিলেন যখন তার বড় বোন ১৫ বছর বয়সি এক শিশুসন্তান রেখে মারা যান। প্যাটেল বলেন, সেই ঘটনা ছিল একটি আত্মহত্যা। আমি বুঝতে পারলাম বিচার পাব না। এটি এখনও আমাকে তেড়ে বেড়ায়।

তিনি বিবিসিকে এর বেশি কিছু বলেননি।

এই বিয়োগান্তক ঘটনাটি প্যাটেলকে অনুপ্রাণিত করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে। তিনি পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন এবং কঠোর অধ্যয়ন শুরু করেন। কলেজে ভর্তির আগে দুই বছরের কোর্সে পড়ার সময় কাজের জন্য তাকে প্রায়ই ক্লাস ফাঁকি দিতে হতো।

প্রথম বছরে উপস্থিতি কম থাকার কারণে শিক্ষকরা তাকে পরীক্ষায় বসতে দিচ্ছিলেন না। তবে তিনি মিনতি করেন। তিনি বলেন, আমি শিক্ষকদের বলতে চাইনি যে, অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য আমি ক্লাসে যাইনি। কারণ আমি সহানুভূতি চাইনি।

শিক্ষকরা তাকে একটি সুযোগ দেন। তারা প্যাটেলের বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলেন যে, তার কাজ করার বিকল্প কিছু নেই।

যখন ফল প্রকাশিত হলো, প্যাটেল সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন। সে সময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি ভবিষ্যতে আইনে কাজ করবেন। তিনি বলেন, আমি অন্যকিছু করতে চাইনি। এতেই (আইন) আমার প্রগাঢ় উৎসাহ ছিল।

চলার পথে প্যাটেলের জন্য নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু লোকজনের উদারতা তিনি পেয়েছিলেন। উত্তপ নামে এক ব্যক্তি তাদের একজন, কেরালায় যার একটি হোটেল ছিল। প্যাটেল তার বিস্তারিত পরিচয় দেননি। তিনি বলেন, আমি তাকে বলেছিলাম, চাকরি না হলে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি তার হোটেলে আমাকে চাকরি দেন।

মৃতু্যর আগ পর্যন্ত উত্তপের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল প্যাটেলের। তিনি বলেন, আমার বিচারক হওয়ার খবর শুনে তার ভাই আমাকে কল করেছিলেন। আইনে পড়ার আগে ১৯৯২ সালে প্যাটেল রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। চার বছর আগে তিনি কেরালার কাসারাগদ জেলার হসদুর্গ শহরে আইনজীবী পি অপুকুত্তানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। অপুকুত্তান বিবিসিকে বলেন, প্যাটেল বেশ উদ্যমী ছিলেন। আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। নাগরিক বিভিন্ন বিষয় আমি তার ওপর ছেড়ে দিতাম। কারণ সে এসব কাজ করতে পারত। স্ত্রী শুভা রাজধানী দিলিস্নর একটি হাসপাতালে চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্যাটেল সেখানে দশককাল কাজ করেন।

স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার আগে দিলিস্নর এক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর সঙ্গে কয়েক মাস কাজ করেন প্যাটেল। তিনি বলেন, আমার পেশা ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি খুশি ছিলাম না। স্ত্রীর সঙ্গে আমিও চলে গেলাম। তাকে ছাড়া আমি বর্তমান অবস্থায় আসতে পারতাম না।

এই দম্পতি ২০০৭ সালে টেক্সাসে চলে যান। সেখানে গিয়ে প্যাটেল একটি মুদি দোকানে কিছু সময়ের জন্য কাজ করেন। কিন্তু পরে তিনি অনুধাবন করতে পারেন যে, বার পরীক্ষা দিতে হবে। টেক্সাসে তিনি বার পরীক্ষা দেন। তিনি আন্তর্জাতিক আইনের ওপর ডিগ্রি লাভ করেন। প্যাটেল যখন সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে বিচারকের পদে লড়বেন, তাকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। যেমন প্রচারণার সময় ভারতীয় ধরনে কথা বলার জন্য তিনি হাসির খোরাক হন।

প্যাটেল বলেন, এতে আমি দুঃখ পাইনি। প্রচারণা অনেক সময় অত্যন্ত নোংরা হতে পারে। আমার মনে হয়, এখানে আপনি কতদিন থাকবেন তা বিষয় নয়, বিষয় হলো আপনি কতদিন কমিউনিটির জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, কেবল ২০১৭ সালে আমি এখানকার নাগরিকত্ব পাই। আর এখন ২০২২। আমি নির্বাচনে জিতেছি। আমার মনে হয় না, অন্য দেশে এটি হতে পারে। প্যাটেলের জয় একটি ব্যক্তিগত কারণে বিশেষ কিছু। টেক্সাসে প্রাকটিস করার সময় তিনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গোন্ডেন বি অ্যাডামসের খুব ঘনিষ্ঠ হন। অ্যাডামসের মৃতু্যর পর রোসালি অ্যাডামস তাকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় শোক পালনের জন্য প্রস্তাব দেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন প্যাটেল নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন রোসালি অ্যাডামস আদালতে তাকে আইনের সেই গর্বিত পোশাক পরিয়ে দেন। ইন্টারনেট অবলম্বনে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে