সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লডিয়া গোল্ডিনের সাধনা ও সাফল্য

বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষম নারী কর্মীদের প্রায় অর্ধেক শ্রমে নিযুক্ত, পুরুষ কর্মীদের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় ৮০ শতাংশ। শ্রমবাজারে পুরুষ এবং নারীর অংশগ্রহণের হারের মধ্যে ব্যবধান বিশ্বের অন্য যে কোনো অংশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় বেশি। কর্মক্ষম নারী শ্রমিকের অর্ধেক শ্রমবাজারের বাইরে থাকার অর্থই হচ্ছে মূল্যবান মানবসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া। তবে শ্রমবাজারে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের তারতম্যই কেবল বেশি নয়, পুরুষ ও নারী শ্রমিকের বেতন বৈষম্যও উলেস্নখযোগ্য।
ড. মোহাম্মদ দুলাল মিয়া
  ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

সুইডিশ রয়্যাল একাডেমি ৯ অক্টোবর ২০২৩ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করে। অর্থনীতিতে এবারের পুরস্কার উঠেছে মার্কিন অর্থনীতিবিদ ক্লডিয়া গোল্ডিনের হাতে। অধ্যাপক ক্লডিয়া গোল্ডিন একজন মার্কিন অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ এবং বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭২ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শ্রমঅর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পিএইচডি শেষ করে অধ্যাপক গোল্ডিন ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসন-এ শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন কয়েক বছর। অধ্যাপক গোল্ডিন হলেন তৃতীয় নারী অর্থনীতিবিদ যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার আগে এলিনর অস্ট্রাম ২০০৯ সালে এবং এস্থার দুফলো যৌথভাবে অভিজিৎ ব্যানার্জি এবং মাইকেল ক্রেমারের সাথে ২০১৯ সালে এই পুরস্কারে ভূষিত হন।

নোবেল কমিটি তাদের বক্তব্যে বলেছে যে, একজন অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ হিসেবে ক্লডিয়া গোল্ডিন পুরুষ ও নারী কর্মীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান আয়ের ব্যবধানের অনুসন্ধান করেছেন। এই অনুসন্ধানে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন, গত দুই শতাব্দীর তথ্য-উপাত্ত। ২০২১ সালের নোবেল পুরস্কার উঠেছিল ডেভিড কার্ড, জশুয়া এংরিস্ট এবং গুইডু ইম্বেন্স এর হাতে যারা প্রাকৃতিক পরীক্ষা পদ্ধতির আবিষ্কার করে শ্রমবাজারের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেন। ২০২১ এবং ২০২৩ সালে শ্রমবাজার নিয়ে কাজ করার জন্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান এটাই প্রমাণ করে যে, শ্রমের যথাযথ অংশগ্রহণই হবে আগামীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষম নারী কর্মীদের প্রায় অর্ধেক শ্রমে নিযুক্ত, পুরুষ কর্মীদের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় ৮০ শতাংশ। শ্রমবাজারে পুরুষ এবং নারীর অংশগ্রহণের হারের মধ্যে ব্যবধান বিশ্বের অন্য যে কোনো অংশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় বেশি। কর্মক্ষম নারী শ্রমিকের অর্ধেক শ্রমবাজারের বাইরে থাকার অর্থই হচ্ছে মূল্যবান মানবসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া। তবে শ্রমবাজারে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের তারতম্যই কেবল বেশি নয়, পুরুষ ও নারী শ্রমিকের বেতন বৈষম্যও উলেস্নখযোগ্য। অধ্যাপক গোল্ডিন নারী শ্রমিকদের কম অংশগ্রহণের কারণ এবং নারী-পুরুষের অব্যাহত মজুরি ব্যবধানের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন গত দুই শতাব্দীর তথ্য বিশ্লেষণ করে।

নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ দেখান, উনিশ শতকে শিল্পায়নের আগে অর্থাৎ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে জাতীয় শ্রমশক্তিতে নারী শ্রমিকের বর্ধিত অংশগ্রহণ লক্ষণীয় ছিল- যা শিল্পায়নের যুগে এসে হ্রাস পেয়েছিল। শিল্প-পরবর্তী অর্থনীতিতে যখন সেবাখাতের আধিপত্য দেখা দেয়, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায় আগের মতোই। অর্থাৎ, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পায়, শিল্পায়নের শুরুতে তা হ্রাস পায় এবং শিল্পোত্তর পর্যায়ে আবারো বৃদ্ধি পায়। এটা প্রমাণ করে, গত দুই শতাব্দী ধরে মার্কিন অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ইংরেজি 'ইউ' আকৃতির বক্ররেখার মতো। অন্যদিকে, এই দুই শতাব্দীতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এই দৃষ্টিকোণ থেকে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ব্যাখ্যা করেন যে, নারী শ্রমিকের কাজে অংশগ্রহণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে যে ধনাত্মক সম্পর্কের ধারণা পূর্বে ছিল, দীর্ঘমেয়াদে তা সত্য নয়।

শুধু পুরুষ ও নারীর অংশগ্রহণের ব্যবধানই নয়, বিবাহিত ও অবিবাহিত নারীদের চাকরির বাজারে অংশ নেওয়ার পার্থক্যও বিংশ শতাব্দীর শুরুতে উলেস্নখযোগ্য ছিল। অধ্যাপক গোল্ডিন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখান যে, যেখানে অবিবাহিত নারী শ্রমিকের হার ছিল ২০ শতাংশ, সেখানে বিবাহিত নারীর অংশগ্রহণ ছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ প্রথমেই দেখান যে, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ পূর্বে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। অর্থাৎ নারী শ্রমিক এমন সব কাজে নিয়োজিত ছিল যাদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকলেও সেগুলোকে পেশা হিসেবে গণ্য করা হতো না। বিশেষ করে পারিবারিক মালিকানাধীন ছোট খামার, কুটিরশিল্প, গৃহভিত্তিক উৎপাদন যেমন তাত এবং বুনন শিল্প, মাংস ও দুগ্ধজাত উপাদান তৈরি, বোর্ডিংহাউস কিপারের মতো ঘরে বসে করা যায় এমন সব কাজেই নারীরা বেশি নিয়োজিত ছিল। কিন্তু এসব পেশা জাতীয় আদমশুমারির দ্বারা আলদাভাবে স্বীকৃত এবং লিপিবদ্ধ হয়নি। ফলস্বরূপ, শ্রমশক্তিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাস্তবের চেয়ে উলেস্নখযোগ্যভাবে কম দেখানো হয়েছে। অধ্যাপক গোল্ডিন পরিসংখ্যানের এই ঘাটতি অনেকটাই দূর করতে সমর্থ হয়েছেন তথ্য আহরণের উদ্ভাবনী পদ্ধতি প্রণয়নের মাধ্যমে।

তিনি আরও দেখান যে, শিল্পোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমেই কমতে থাকে বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত। এর জন্য তিনি দায়ী করেছেন সেই সময়ে বিরাজমান আইন এবং সামাজিক রীতিকে। তিনি দেখিয়েছিলেন, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে নারীরা বিয়ের আগে অল্প সময়ের জন্য কাজ করত কারণ বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সামাজিক রীতি প্রচলিত ছিল। যেমন 'ম্যারেজ বার' বা বিবাহ-দন্ড নামক আইনটি বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত শিল্পোন্নত প্রায় সব দেশেই সক্রিয় ছিল। এই আইনের সারমর্ম এই যে, বিবাহের পরে বেতনভুক্ত কাজে নারীদের অংশগ্রহণ অনুমোদিত নয়। বিয়ের আগে যারা চাকরি করতেন, বিয়ের পর কাজ চালিয়ে যেতে তাদের নিষেধ করা হতো। ১৯৩০ সালের বৈশ্বিক মহামন্দার সময় এই আইনের প্রভাব উলেস্নখযোগ্যভাবে পরিলক্ষিত হয়েছিল- যা মন্দা-পরবর্তী অনেকটা সময়জুড়েই বিরাজমান ছিল। এই নিয়মের ফলে শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমে যায় অনেকাংশেই।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল নারীদের জুতসই আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যারা কিশোরী তাদের শিক্ষার পছন্দটি বিরাজমান সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল বেশি। যেমন পরিবারের প্রায় সবাই কৃষি কাজ করত, অবিবাহিত নারীদের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত অল্প সময়ের জন্যে কাজের সুযোগ পাওয়া যেত। অর্থাৎ, বিবাহ এবং সন্তান জন্মদানের কারণে নারীদের কর্মজীবন ছিল সংক্ষিপ্ত। এই পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারগুলোকে নারী শিক্ষায় যথেষ্ট বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল না। অধিকন্তু, কিশোরীরা ভবিষ্যতে শিল্পে কাজ করবে এমন ধারণা খুব কমই পোষণ করত। অর্থাৎ, কিশোরীরা যখন তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পছন্দ করে, তখন তারা সক্রিয় এবং দীর্ঘ কর্মজীবন আশা করেনি। ফলে শিল্পোযোগী শিক্ষার সুযোগ এবং আগ্রহে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। এই কিশোরীরা বড় হয়ে যখন শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, তখন কাজের পরিবেশের আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করে। কৃষি থেকে শিল্পায়নে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরে নারী কর্মীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা শিল্পের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পরে। তদুপরি, কাঠামোগত রূপান্তর দক্ষ মহিলা শ্রমিকদের জন্যও শিল্পে কাজ করা কঠিন ছিল, বিশেষ করে যখন কর্মক্ষেত্রটি বাড়ি থেকে দূরে ছিল। কারণ, পরিবারের যত্ন নেওয়া ছিল নারী সদস্যদের প্রাথমিক দায়িত্ব। এই নিয়ামকগুলোই মূলত কর্মক্ষেত্রে নারীর কম উপস্থিতির জন্য প্রধানত দায়ী।

পরবর্তীতে, বিশেষ করে যখন পরিষেবা খাত অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে, নারী শ্রমিকের বর্ধিত অংশগ্রহণের কারণ হিসেবে অধ্যাপক গোল্ডিন বেশ কিছু নিয়ামকের কথা উলেস্নখ করেছেন। প্রথমত, সামাজিক রীতিনীতির পরিবর্তন। যারা সন্তান জন্মদান এবং পরিবারের যত্ন নেওয়ার কারণে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল তারা তাদের সন্তানদের বড় হয়ে গেলে কাজে ফিরে যেতে পারবে এমন একটা প্রথা লক্ষ্য করা গেছে। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে। যেমন- ১৯৬০ এর দশকে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং গর্ভনিরোধকের বিভিন্ন উপকরণ আবিষ্কারের ফলে নারী শ্রমিকেরা তাদের বিবাহ এবং সন্তান জন্মদানের সময় নির্ধারণে আগের চেয়ে বেশি বিচক্ষণ ছিল কারণ এসব উপকরণ নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা অবারিত করেছিল। ফলে নারীরা ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় আরও বেশি অবগত এবং সচেতন ছিলেন। এটি শিক্ষা এবং কর্মজীবনে বিনিয়োগের জন্য বর্ধিত প্রণোদনা প্রদান করেছে। অধ্যাপক গোল্ডিন দেখিয়েছেন, পরিবার পরিকল্পনায় উদ্ভাবনের ফলে অর্থনীতি, আইন এবং চিকিৎসাবিদ্যার অধ্যয়নের প্রতি নারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। অর্থনীতিতে এই বিষয়গুলোর প্রয়োজন ছিল বিস্তর।

লক্ষণীয় যে শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি শ্রমবাজারে নারী-পুরুষে লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে, প্রশাসনিক এবং করণিক পরিষেবামূলক কাজে নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে শিক্ষিত নারী শ্রমিকের অনুপাত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্য করা গেছে সমতালে। এতদসত্ত্বেও, নারী-পুরুষের মজুরি ব্যবধান ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রায় একই ছিল। অধ্যাপক গোল্ডিন বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, নারী এবং পুরুষের উৎপাদনশীলতা, বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনার পরও নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য থেকেই যায়। এমনও দেখা গেছে যে, নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি শিক্ষিত হলেও আয় বৈষম্য বিরাজমান। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে নারী ও পুরুষের মধ্যে উপার্জনের ব্যবধান ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত, যদিও এই দেশগুলোতে সমান মজুরি আইন বলবৎ।

পরিষেবা খাত বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি হওয়ার পূর্বে, নারী শ্রমিকের অধিকাংশই এমন খাতে নিযুক্ত ছিলেন যেগুলো উৎপাদনের একক হারে (পিস-রেট) মজুরি প্রদান করত। মজুরির এই নিয়মে উৎপাদনশীলতার ওপরই মজুরি নির্ভর করত, কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গের প্রভাব ছিল না। তাই পুরুষের সমান ক্ষমতাসম্পন্ন নারী শ্রমিকরা প্রায় পুরুষের সমানই আয় করত। মজুরি কাঠামোর সংস্কারের ফলে, পিস-রেট এর স্থলে মাসিক মজুরিতে শ্রমিক নিয়োগ চালু হলো। কোম্পানিগুলোতে কাজের প্রতি কর্মীদের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রম্নতি এবং নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবার প্রয়োজন হলো। এই ধরনের শর্তের প্রতি আনুগত্য দেখানোর জন্য নারীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল না পরিবারের প্রতি বৃহত্তর দায়িত্বের কারণে। এই অবস্থা কর্মজীবনের নারীদের অগ্রগতি এবং বেতন বৃদ্ধিকে আটকে রেখেছে। অধ্যাপক গোল্ডিন নারী এবং পুরুষের আয়ের পার্থক্যের পরিবর্তনের তুলনা করেন এবং দেখান যে প্রথম দিকে উপার্জনের পার্থক্য কম থাকে। নারীদের প্রথম সন্তানের আগমনে হঠাৎ করেই ব্যবধান বাড়তে শুরু করে। একই পেশা এবং সমমানের শিক্ষা থাকা সত্ত্বেও নারীর উপার্জন পুরুষের চেয়ে কম হয় অথবা আয়ের প্রবৃদ্ধি পুরুষের আয়ের প্রবৃদ্ধির সমান হয় না। এই পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ যুক্তি দেন যে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে পুরুষ এবং নারীদের আয়ের ব্যবধানের পার্থক্যের মূল কারণ হলো নারীদের সন্তান জন্মদান এবং লালন পালন।

বলাবাহুল্য, অধ্যাপক গোল্ডিনের গবেষণা শ্রম আইন, মজুরি নীতি, মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধা প্রণয়নসহ শিক্ষানীতিকে প্রভাবিত করবে। অর্থনীতির প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণে তার কাজের উলেস্নখযোগ্য প্রভাব বিবেচনা করে নোবেল কিমিটি তাকে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে