রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
১ম জামাল নজরুল ইসলাম জাতীয় সম্মেলন

তরুণ গবেষক সম্মেলনের অভিজ্ঞতা

দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী গবেষক ও গণিতবিদ অধ্যাপক ডক্টর জামাল নজরুল ইসলামের স্মরণে 'কল্পনা ও উদ্ভাবনের পথে আগামী প্রজন্ম' প্রতিপাদ্যে জামাল নজরুল ইসলাম রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স এবং চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় ১ম জামাল নজরুল ইসলাম জাতীয় তরুণ গবেষক সম্মেলন। অসংখ্য গবেষকদের এই সফল মিলনমেলার নেতৃত্বে থাকা চবি শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী এম আতহার নূর
নতুনধারা
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

একনিষ্ঠ গবেষণাচর্চা এবং গবেষকদের মিলনমেলা

আতকিয়া সুবাত

চিফ অব অপারেশন টিম

ঐতিহাসিক এই আয়োজনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পেরে আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করি। যৌথ নেতৃত্বে এই মহৎ উদ্যোগের বিশাল প্রস্তুতি কার্যক্রম খুব অল্প সময়ে শুরু হলেও কিন্তু আয়োজকদের তৎপরতার কোনো কমতি ছিল না। তাই দ্রম্নততম গোটা সম্মেলনের প্রতিটা মুহূর্তকে একটি পূর্ব পরিকল্পনায় আবদ্ধ করে ফেলি। একাধিক টিম গঠনের মাধ্যমে দায়িত্বগুলো ভাগ করে ফেলি। তা সুচারুভাবে আঞ্জাম দিতে সাহসী টিম লিডার বাছাই করি। এটা সত্য যে শুরুর দিকে দায়িত্বটা একদম সহজতর ছিল না। কেবল গুটিকয়েক ভলান্টিয়ার নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করতে হয়। অতঃপর কিছু সময়ের মধ্যে ৫০-এর অধিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ পায়। সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে প্রচার-প্রচারণা এবং সঠিকভাবে ৬০০-এর অধিক গবেষণা আবেদন মূল্যায়নের মতো কঠিন কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও যুগপৎ বাকি কাজে সময় দিতে গিয়ে একপ্রকার হাঁফিয়ে উঠি।

সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা ছিল, সম্মেলনের দিন কালবৈশাখী ঝড়ের আঘাতে সমস্ত পূর্ব পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়া, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে দিনব্যাপী লোডশেডিং। কিন্তু এত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও আয়োজনটি সাফল্যমন্ডিত করতে পারাটা আমার কাছে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হয়েছে। অবশ্যই এর পেছনে প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী পর্যায়ে প্রতিটি আয়োজকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের প্রশংসার দাবি রাখে। আশা করি এভাবে একনিষ্ঠ গবেষণাচর্চা এবং গবেষকদের মিলনমেলার মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে।

উন্নত বিশ্বের সঙ্গে দেশের তরুণ

গবেষকদের মূল্যায়ন

তাকবীর হুসাইন

হেড অব টিম স্ট্রাটেজিস্ট

একটি জাতীয় সম্মেলনের আয়োজক কমিটির প্রধান কৌশলবিদদের ভূমিকা অনুষ্ঠানের সাফল্যের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর এই মহৎ দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয়। শুরুর দিকে আমি বেশ আতঙ্কে ছিলাম। কারণ এরকম বৃহৎ আয়োজনের সফলতা অনেকটা প্রধান কৌশলবিদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর

হয়ে থাকে।

কিন্তু বরাবরের মতো আমার আত্মবিশ্বাসে কোনো ঘাটতি ছিল না। আমি সর্বপ্রথম দৃষ্টি দিই সম্মেলনের সামগ্রিক কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দিকে। সেসব কাজের মধ্যে ছিল সম্মেলনের থিম নির্ধারণ, বক্তা নির্বাচন, সম্মেলনের আলোচ্যসূচি নির্ধারণ এবং সম্ভাব্য স্পন্সর এবং অংশীদারদের চিহ্নিত করা।

বক্তা নির্বাচন খুবই কঠিন একটা কাজ। এটা সবার জানা যে সম্মেলনের বক্তারা সম্মেলনের বিষয়বস্তু এবং সামগ্রিক সাফল্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঠিক এই বিষয়টা আমার কাছে বেশ কঠিন মনে হয়েছে। শ্রদ্ধেয় উপদেষ্টামন্ডলীদের বারবার বৈঠক, বিভিন্ন বিজ্ঞজনদের নাম সংযোজন ও বিয়োজন, বিশেষজ্ঞদের গবেষণা বিশ্লেষণ, বক্তাদের বৈচিত্র্য এবং প্রতিনিধিত্ব বিবেচনা করার মতো কাজগুলো বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। এতে শিখেছি জেনেছি অনেক কিছু। গবেষণা সম্মেলনগুলো তরুণ গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের কাজ প্রদর্শনের একটি দুর্দান্ত উপায়।

তাই আমি মনে করি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে দেশের তরুণ গবেষকদের মূল্যায়ন করতে হবে। এরকম গবেষক সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।

আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, সামনে আরও বড়

কোনো ইভেন্ট আয়োজনের জন্য

মাহমুদ শরীফ

হেড অব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম

একটি জাতীয় ইভেন্টের কাজগুলো ম্যানেজ করা আমাদের টিমের জন্য অবশ্যই বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রথমে আমরা পৃথিবীর বড় বড় ইভেন্টের কাঠামো ও গঠনশৈলী নিয়ে পাড়াশোনা করতে থাকি, আমাদের নিয়মিত নতুন নতুন আইডিয়া আসতে থাকে, আমরা ইভেন্ট আগের দিন রাত পর্যন্ত নতুন নতুন জিনিস, আইটেম সংযোজন করেছিলাম। একেকটি আইটেম ও পরিকল্পনা আমাদের ইভেন্টিকে আরেকধাপ পরিপূর্ণতা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমরা আমাদের সংগঠনের মানদন্ডের দিকে সবসময় অনেক সচেতন ছিলাম। কোথায় কোন জিনিসটা বসালে সবার জন্য সহজ হবে ও ব্যবহারবান্ধব হবে তাই ছিল আমাদের মূল কাজের জায়গাটা। টিমের সবাই দিন রাত না খেয়ে কাজ করছে। বেশ কয়েকটি জিনিস আমরা একবার তৈরি করার পরে আবার ভেঙে আবার নতুন করে তৈরি করি। ইভেন্টের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাজগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। সবকিছু মিলিয়ে অভিজ্ঞতা ছিল অবর্ণনীয়, আমার কাছে মনে হয়েছে কয়েক ঘণ্টায় দিনটা শেষ হয়ে গেল। আমাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, সামনে আরও বড় কোনো ইভেন্ট আয়োজনের জন্য। আশা করি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আয়োজন দেখতে পাব তরুণদের হাত ধরে।

সবার মুখে যেন এক

উৎসবমুখর আমেজ

মোন্তাসির ফাহিম মাহমুদ

হেড অব লজিস্টিক টিম

লজিস্টিক্স টিমের লিডার হিসেবে আমি মনে করি এই টিমের কাজগুলো একটু বেশিই চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ আমাদের ক্যাম্পাস ছিল শহর থেকে বেশ দূরে। প্রতিটা কাজে শ্রমের সঙ্গে সময় আর অর্থের ব্যাপার সবসময়ই প্রাসঙ্গিক ছিল।

প্রথমে কিছু তরুণদের নিয়ে আমি একটি টিম গঠন করি সে টিমের সদস্য ছিল, মহিউদ্দিন, সাকিব নিলয়, নাজমুল রাকিব, আতহার নূর, তন্ময়, প্রীতম ও রবি। সম্মেলনকেন্দ্রিক বিভিন্ন টিম ও আয়োজক কমিটির সঙ্গে বারবার মিটিং করার পরে টিম মেম্বারদের পরবর্তী কাজ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে থাকি। তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যাকে যেদিকে পাঠানো দরকার পাঠিয়ে দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে কোনো বিরতি মেলেনি। শহর থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র বারবার শহরে হুইজ কমিউনিকেশনে পাঠানো, নিউমার্কেট গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করা, জিনিসপত্র ক্যাম্পাসে পাঠানো, গাড়ি ঠিক করা প্রভৃতি কাজগুলো শ্রমসাধ্য কিন্তু উপভোগ্য ছিল। সবার মুখে যেন এক উৎসবমুখর আমেজে দেখেছি। এমন মনে হয়েছে যে, সম্মেলন শেষ হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি।

টিম মেম্বারদের ঈর্ষণীয় সহযোগিতায় তরুণ গবেষক সম্মেলন-২০২২ এর সফলতা অর্জনে অবদান রাখতে পেরে আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত এবং এরই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামীদিনে সিইউআরএইচএস তথা চবিকে বিশ্বের বুকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করতে পারব বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এই সম্মেলন আমাকে এবং আমাদের

অনেক কিছু শিখিয়েছে

সাব্বির হোসেন

হেড অব ট্রান্সপোর্ট টিম

আমি ১ম জামাল নজরুল ইসলাম জাতীয় তরুণ গবেষক সম্মেলনের একজন গর্বিত দায়িত্বশীল। এইখানে আমি বেশ কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে কাজ করেছি। প্রোগ্রামের সব ধরনের ডিজাইন, ফ্রেম ও মিডিয়া এমনকি অংশগ্রহণ সার্টিফিকেটের কাজগুলো আমি করেছিলাম। উলেস্নখযোগ্যভাবে, মিডিয়া ব্র্যান্ডিং ও ট্রান্সপোর্ট টিমের নেতৃত্ব দানে আমার সৌভাগ্য হয়েছে।

আমি মনে করি, উক্ত গবেষণা সম্মেলনে এই টিমের কাজগুলো ছিল সব থেকে জরুরি। কারণ, সম্মেলনের ব্র্যান্ডিংয়ে যত ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া গ্রাফিক্স, প্রিন্টিং ব্যানার, ম্যাগাজিন কাভার, ফটোবুথ এসব আমার টিমের হাত ধরেই হয়েছে। পুরো সম্মেলনকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে এই সুন্দর ডিজাইনগুলোর অনেক বড় ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করি। এছাড়া ট্রান্সপোর্ট টিমের নেতৃত্বদানে কাজ করার সুবাদে ৬০০ এপি ক্যান্ট, জাজ ও অন্য শিক্ষকদের জন্য যথাযথ ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা এবং সম্মেলন শেষে সবাইকে নিজ গন্তব্যে পোঁছে দেওয়ার কাজগুলো আমার কাছে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল।

অবশেষে এটাই বলতে চাই এই সম্মেলন আমাকে এবং আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে এবং অনেক সম্মান ও গৌরবের অধিকারী করেছে।

নতুন অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ছাড়াও

অন্যরকম অনুভূতি

মো. আল আমিন

হেড অব আইটি টিম

আমার জীবনে এটি এমন এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা ছিল যেখানে আমি শুধু অংশগ্রহণ করিনি সরাসরি ম্যানেজমেন্ট টিমে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা এবং রিসার্চ সোসাইটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকার ফলে কনফারেন্সে আইটি টিমের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আইটি টিম কাজ করেছে। প্রচার প্রচারণা থেকে শুরু করে কনফারেন্সের সব ধরনের ডাটা কালেকশন, পার্টিসিপেশনদের পোস্টার কালেকশন, আইডি জেনারেশন ও সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। অফলাইন ও অনলাইনে সব বিষয়গুলো ম্যানেজ করতে হয়েছে আইটি টিমকে। আমি টিমের প্রতি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ তাদের সংযুক্তি না থাকলে হয়তো এত সুন্দর করে আমি একা সব কিছু ম্যানেজ করতে পারতাম না। বিদু্যৎ বিভ্রাটের কারণে প্রোগ্রাম চলাকালে একটু ঝামেলার মধ্যে পড়ে যেতে হয়েছিল। তবুও দক্ষতার সঙ্গে আইটি টিম সমস্যা সমাধান করে। যাতে পোস্টার প্রেজেন্টেশনে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। দিনশেষে বলতে হয় অশেষ নতুন অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ছাড়াও পুরো বাংলাদেশ থেকে আসা অসংখ্য গবেষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করতে পারা অন্যরকম অনুভূতি ছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে