সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মহাশূন্যে মৃতু্য

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
  ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

জন্মিলে মরিতে হবে, অমর সে কোথা কবে? কিন্তু সেই মৃতু্য যদি ঘটে মহাশূন্যে? মহাশূন্য জয়ের প্রথম প্রচেষ্টা থেকে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মহাশূন্যে মৃতু্য ঘটার মতো ঘটনা ঘটেছে। অভিযানে গিয়ে বেশ কয়েকবার মহাকাশযানগুলোকে দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃতু্য হয়েছে মহাকাশচারীদের।

৭ মহাকাশচারীকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল আমেরিকার মহাকাশযান কলম্বিয়া। অভিযানের নাম ছিল এসটিএস-১০৭। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় কাজ সেরে পৃথিবীতে ফেরার পথে ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মহাশূন্যে ধ্বংস হয় এই যান। মৃতু্য হয় সাত মহাকাশচারীরই। মৃতু্য হয়েছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার মহাকাশচারী এবং মহাকাশযান বিশেষজ্ঞ কল্পনা চাওলারও। তাই মহাকাশচারীদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে অভিযানে পাঠানোর ক্ষেত্রে যে পদে পদে বিপদ রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

৬০ বছর আগে মহাজাগতিক অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত ২০ জন মহাকাশচারীর মৃতু্য হয়েছে। যার মধ্যে ১৯৮৬ এবং ২০০৩ সালের নাসার পাঠানো মহাকাশযান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোট ১৪ জন। ১৯৭১ সালে সয়ুজ-১১ অভিযানের সময় মৃতু্য হয়েছিল তিন মহাকাশচারীর। ১৯৬৭ সালে অ্যাপোলো-১ লঞ্চ প্যাডে আগুন লেগেও তিন মহাকাশচারীর মৃতু্য হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মহাকাশে হামেশাই মানববিহীন যান পাঠাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। তার মধ্যেই ২০২৫ সালে চাঁদে এবং ২০৩০-এর পর মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে নাসা। মহাকাশে অভিযানের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যে প্রশ্ন বারবার উঠে আসে, তা হলো- যদি কোনো মহাকাশচারী মহাকাশে মারা যান, তাহলে তার মরদেহের শেষ পরিণতি কী হবে? এ প্রসঙ্গে কী বলছে নাসার নিয়মাবলি?

নাসার নিয়মানুযায়ী, যদি কোনো মহাকাশচারী পৃথিবীর নিম্নকক্ষে মারা যান, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের আশপাশে মারা যান, তা হলে তার সঙ্গীরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একটি ক্যাপসুলে সেই মরদেহ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। যদি কোনো মহাকাশচারী চাঁদে মারা যান, তা হলে মাস খানেকের মধ্যেই বাকি মহাকাশচারীরা তার দেহ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে পারেন।

নাসার নিয়মাবলি অনুযায়ী, মরদেহ সংরক্ষণ নাসার প্রধান উদ্বেগ নয়। বরং বাকি মহাকাশচারীরা নিরাপদে ফিরছেন কিনা, সেই বিষয়টিই অগ্রাধিকার পায় তাদের কাছে। অন্যদিকে, ৪৮০ কোটি কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে যদি কোনো মহাকাশচারী মঙ্গলগ্রহ অভিযানে গিয়ে মারা যান, তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

নাসার নিয়মাবলি অনুযায়ী, সেই মরদেহ ফিরবে তখনই যখন দলের বাকি সদস্যরা পৃথিবীতে ফিরবেন। অর্থাৎ, মরদেহটি ফিরতে সময় লাগতে পারে বেশ কয়েক বছর। ততোদিন পর্যন্ত মহাকাশে বিশেষভাবে সেই দেহটিকে সংরক্ষিত করা যেতে পারে। মহাকাশযানের অভ্যন্তরে স্থির তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা দেহটিকে বহু দিন পর্যন্ত পচনের হাত থেকে রক্ষা করবে। এই সব নিয়ম তখনই প্রযোজ্য হবে যখন, কোনো মহাকাশচারী মহাকাশের মধ্যে স্বাভাবিক কারণে মারা যাবেন। কিন্তু কেউ যদি মহাকাশের জন্য তৈরি উপযুক্ত পোশাক অর্থাৎ, 'স্পেসসু্যট' না পরার কারণে মারা যান। 'স্পেসসু্যট' না পরে মহাকাশে পা দিলে মহাকাশচারী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মারা যাবেন। মহাশূন্যে চাপ কমে যাওয়ার জন্য এবং অক্সিজেনের অনুপস্থিতির জন্য মহাকাশচারীর পক্ষে শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। ফুটতে থাকবে রক্ত এবং শরীরের অন্যান্য তরল।

মহাকাশচারী যদি 'স্পেসসু্যট' ছাড়াই চাঁদে বা মঙ্গলে পা দেন, সে ক্ষেত্রেও একই পরিণতি হবে তার। চাঁদে প্রায় কোনো বায়ু নেই। যা আছে, তা-ও খুব সামান্য পরিমাণ। অন্যদিকে, মঙ্গলগ্রহের বায়ুমন্ডল খুবই পাতলা। কোনো অক্সিজেন নেই বললেই চলে। ফলে দুই ক্ষেত্রেই নিঃশ্বাস নিতে না পেরে এবং রক্ত ফুটে মৃতু্য হবে মহাকাশচারীর। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ওই মহাকাশচারীর শেষকৃত্য কীভাবে হবে? নাসার নিয়মানুযায়ী, চাঁদ বা মঙ্গলপৃষ্ঠে কোনো মহাকাশচারীর মৃতু্য হলে তাকে পোড়ানো বা কবর দেওয়া যাবে না।

চাঁদ বা মঙ্গলে দেহ পোড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণ শক্তি এবং জ্বালানির প্রয়োজন। কিন্তু মহাকাশচারীদের কাছে সীমিত জ্বালানি থাকার কারণে তা সম্ভব নয়। আবার মৃতদেহে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীব চাঁদ বা মঙ্গলের মাটি নষ্ট করতে পারে ভেবে, কবরও দেওয়া যাবে না। ফলে মৃত মহাকাশচারীর দলের বাকি সদস্যরা পৃথিবীতে ফিরে না আসা পর্যন্ত একটি বিশেষ ব্যাগে দেহটিকে সংরক্ষণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে