শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়লেন ক্লোয়ি

মাসুদুর রহমান
  ২৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

বিশ্ব চলচ্চিত্র ইতিহাসের স্বর্ণালি পাতায় জায়গা করে নিলেন চীনের নারী পরিচালক ক্লোয়ি ঝাও। নিজের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়লেন ৩৯ বছর বয়সি এই পরিচালক। অস্কারের ৯৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত নারী এবং দ্বিতীয় নারী হিসেবে সেরা পরিচালকের খেতাব জিতে নিলেন এই পরিচালক। এর আগে ২০০৯ সালে 'দ্য হার্ট লকার' ছবিটি পরিচালনার সুবাদে প্রথম মহিলা পরিচালক হিসেবে অস্কার পেয়েছিলেন ক্যাথরিন বিগলো।

ক্লোয়ির 'নোম্যাডল্যান্ড' ছবিটি এবারের অস্কারে ছয়টি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছিল। এর মধ্যে 'সেরা সিনেমা', 'সেরা পরিচালক'সহ তিনটি ক্যাটগারিতে পুরস্কার পেয়েছে। বিজয়ীর বাকি ক্যাটাগরিটি হচ্ছে- সেরা অভিনেত্রী (ফ্রান্সিস ম্যাকডোম্যান্ড)। সেরা অ্যাডাপ্টেড চিত্রনাট্য ও সেরা সিনেমাটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেলেও পুরস্কার জিততে পারেনি ঝাওয়ের ছবিটি। তবে সুনাম কুড়িয়েছে 'নোম্যাডল্যান্ড'। চলতি বছরের 'গোল্ডেন গেস্নাব', 'গিল্ড অব আমেরিকা' 'বাফটা'তেও সেরা পরিচালক হিসেবে সম্মানিত হওয়ার পর অস্কারের দৌড়েও এগিয়ে ছিলেন ক্লোয়ি।

'নোম্যাডল্যান্ড' গল্প বলে

ষাটোর্ধ্ব এক বিধবা মহিলার জীবন সংগ্রামের গল্প। ক্লোয়ি চীনা হলেও

সিনেমাটি আমেরিকান। এর প্রেক্ষাপট ২০১১ সালের। চাকরি হারানোর পর কীভাবে মাত্র একটি ভ্যানকে সম্বল করে জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হয়, তা নিয়েই এই ছবি। 'নোম্যাডল্যান্ড'-এ সব হারিয়ে যাযাবর জীবন বেছে নেয়া নারী ফার্নের ভূমিকায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর অস্কার স্বীকৃতি পেয়েছেন ফ্রান্সেস ম্যাকডরম্যান্ড। এটি তার চতুর্থ অস্কার। তিনি এমি, টোনি এবং বাফটা জয়ী, 'ট্রিপল ক্রাউন অব অ্যাক্টিং' অর্জনকারী একজন। 'নোম্যাডল্যান্ড'-এর পরিচালকের আসনে বসার পাশাপাশি এই ছবির গল্প লেখা, নির্দেশনা ও প্রযোজনার দায়িত্বও সামলেছেন ক্লোয়ি ঝাও।

অস্কারের আসরে পুরস্কারের মঞ্চে ক্লোয়ি ঝাও এসেছিলেন বেশ সাদামাটা পোশাক পরে। বিজয়ের ট্রফিটি হাতে তুলে মঞ্চ থেকেই তিনি প্রথমে ধন্যবাদ জানান তার সঙ্গে বাকি যারা মনোনয়ন পেয়েছিলেন সে সব পরিচালকদের। সেই সঙ্গে 'নোম্যাডল্যান্ড'-এর সঙ্গে জড়িত প্রতিটি কলাকুশলীর উদ্দেশ্যে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।

পুরস্কার প্রাপ্তির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বর্তমান সময় নিয়ে তার চিন্তার কথাও বলেন। একইসঙ্গে তার বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। ক্লোয়ি ঝাও বলেন, 'সবকিছু কেমন জানি কঠিন হয়ে উঠছে এ সময়ে এসে। তারপরও আমি চিন্তা করছি কীভাবে আমাকে সময়টায় চলতে হবে। আমি মনে করে এ সময়ে নিজে পেছনে চলে যাচ্ছি, যখন ছোট ছিলাম। যখন আমি চীনে বড় হচ্ছিলাম, তখন বাবা আমার সঙ্গে একটা খেলা খেলতেন। আমরা চীনের কিছু ঐতিহ্যবাহী কবিতা ও গল্প মুখস্থ করতাম। পরবর্তী সময়ে দুজন একসঙ্গে তা আবৃত্তি করতাম এবং একে অপরের বাক্য শেষ করতে সহায়তা করতাম।'

ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথমবার 'নোম্যাডল্যান্ড'-এর প্রদর্শনী হওয়ার পরপরই স্পটলাইটে চলে আসেন ক্লোয়ি। এটি পরিচালক হিসেবে ক্লোয়ির তিন নম্বর ছবি। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে যথাক্রমে তার নির্দেশনায় মুক্তি পেয়েছিল 'সংস মাই ব্রাদার টট মি' এবং 'দ্য রাইডার'। অস্কার বিজয়ীর পরবর্তী ছবি মার্ভেলসের সুপার হিরোধর্মী ছবি 'দ্য এটারনাল'।

ক্লোয়িকে নিয়ে সিনে-দুনিয়া উচ্ছ্বসিত হলেও, অনেকে এর আড়ালে রাজনীতির গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন। আমেরিকা ও চীনের পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপড়েনের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠছে। কারণ ক্লোয়ি জন্মসূত্রে চীনা। ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বেইজিংয়েই ছিলেন। এরপর লন্ডনের বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেন লস অ্যাঞ্জেলেসের হাইস্কুল থেকে পাস করা ক্লোয়ি নিউইয়র্কে ফিল্ম স্কুলে ভর্তি হয়ে তিনি স্বাধীনভাবে তৈরি করেন 'সংস মাই ব্রাদার্স টট মি'? এই ছবিতে মার্কিন ভাই ও বোনেদের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন তুলে ধরেছিলেন ঝাও। এক তরুণ রাখালের গল্প বলেছিল তার তৈরি 'দ্য রাইডার'-এ। আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ক্লোয়ি ঝাওয়ের অস্কার বিজয় নিয়ে চীনের সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যম একেবারে নিশ্চুপ। চীনে ক্লোয়ির ছবি মুক্তিও পায় না। নিজের প্রথম ছবি 'সংস মাই ব্রাদার্স টট মি'র রিলিজের সময়ে এক সাক্ষাৎকারে, চীনে কম বয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন ক্লোয়ি। তবে এ দিনের অস্কার স্পিচে চীনের প্রসঙ্গ তোলেননি এ পরিচালক।

ক্লোয়ি ঝাও মূলত ২০০৮ সাল থেকে সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সিনেমা নির্মাণের কাজে ক্লোয়ি ঝাও আমেরিকাতেই ব্যস্ত রয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে