শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

'বিশুদ্ধ শিল্পই আমার আদর্শ'

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২৪ জুন ২০২১, ০০:০০
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়- একাধারে নাট্যকার, আবৃত্তিকার, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, সংগঠক এবং লেখক। আশির দশকের শুরুতে 'সকাল সন্ধ্যা' নামক টিভি সিরিয়ালে 'শাহেদ' চরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পান। কয়েক বছর আগে তিনি বিটিভির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ফোবানা সম্মেলনে একাধিকবার অংশগ্রহণ, জার্মানির বার্লিনে আন্তর্জাতিক লোক উৎসবে যোগদান, কলকাতায় আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব এবং মিসরের কায়রোতে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সঙ্গে তিনি যুক্ত থেকে মঞ্চনাটকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বর্তমানে তিনি একুশে টিভির সিও হিসেবে কর্মরত আছেন। এত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে বিচরণশীল একজন মানুষের পক্ষে অভিনয়টাও সমানতালে চালিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন। এটা বুঝেও, এই বহুমুখী প্রতিভাকে অনেক দিন ধরেই টিভি, মঞ্চ, সিনেমা- কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন বিষয়টি নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে চলমান কোভিড পরিস্থিতিসহ নিজের বর্তমান চাকরির কারণ দেখিয়ে বললেন, 'একজন অভিনয় শিল্পী মৃতু্যর আগ পর্যন্ত অভিনয় শিল্পী। এক্ষেত্রে তার কোনো বিরতি নেই। এখন আমি এই শিল্প মাধ্যমগুলোর কোথাও নেই- এর মানে এই নয় যে, আমি আর অভিনয়ে ফিরছি না। আমি অবশ্যই আবার অভিনয়ে ফিরব। তবে সে রকম সময় ও পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষায় আছি।'

পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয় শিল্পের সব জায়গাতেই সমান দক্ষতার সঙ্গে সাবলীল বিচরণ করেছেন। নাটক, চলচ্চিত্র ও মঞ্চ। তবে থিয়েটারের অভিনয়ের ক্ষেত্রে তার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কাজ করেছেন অসংখ্য মঞ্চনাটকে। এরমধ্যে কোনোগুলো তাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এই পর্যন্ত অনেকগুলোই তো উলেস্নখযোগ্য মঞ্চ নাটক করেছি। তবে যেসব মঞ্চ নাটকের অভিনয় আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয় তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- 'শকুন্তলা', 'কীত্তনখোলা', 'একাত্তরের গল্প', 'নষ্টনীড়' ও 'দানব'। এছাড়া চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- মোরশেদুল ইসলামের 'আগামী' ও 'আমার বন্ধু রাশেদ', নাসির উদ্দিন ইউসুফের 'একাত্তরের যীশু' ও 'গেরিলা'। তবে এখানে যে নাটকটির নাম বলতে ভুলে গেছি সেটি হচ্ছে 'পলাশী থেকে ধানমন্ডি'। ২০০৪-২০০৫ সালে মঞ্চায়িত যে নাটকটিতে আমি বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। যে নাটকটির মাধ্যমে প্রথম বারের মতো উন্মোচিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পেছনে মূল ষড়যন্ত্র। কে বা কারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তা পরিষ্কার হয়েছিল জাতির সামনে। নাটকটি লন্ডন ও নিউইয়র্কে কয়েকবার মঞ্চায়িত হয়েছে। এই নাটকটিতে অভিনয়ের পর আমাকে দেশে ও বিদেশে জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়েছে বারবার। তারপরও কিন্তু আমি দমে যাওয়া পাত্র নই। আমি আমার পথবিচু্যত হইনি এখনও।'

টিভি ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে অনেকে আদর্শবর্জিত চরিত্রেও অভিনয় করে থাকেন, কিন্তু মঞ্চ নাটকে এটা একজন মঞ্চ অভিনয় শিল্পীর জন্য কঠিন। এক্ষেত্রে পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ করে মঞ্চ নাটকের ক্ষেত্রে কোন ধরনের আইডিওলজি ও কন্টেন্ট ধারণ করেন জানতে চাওয়া মাত্রই তিনি বলেন, 'এই প্রশ্নটা খুবই ভালো প্রশ্ন করেছেন। এর উত্তরে আমি বলব, শিল্পই আমার প্রধান আইডিওলজি ও তার কন্টেন্ট। যে কন্টেন্টে শিল্প থাকবে সেই কন্টেন্টই আমার আইডিওলজি। এই শিল্পের মধ্যে সবকিছুই থাকবে। অর্থাৎ এই শিল্পকে কমপিস্নট বা সম্পূর্ণ শিল্প হতে হবে। এরকম-সেরকম কন্টেন্ট বা বিষয় হতে হবে- এরকমভাবে শিল্পকে আলাদা করে দেখানোর কিছু নেই। এখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে শুরু করে যা কিছু ভালো আছে সব থাকবে এবং সম্পূর্ণরূপে বা অখন্ডরূপেই থাকবে। কিন্তু এই শিল্প আলাদাকরণের নামে সেগুলো যদি শিল্পের মানদন্ডে উত্তীর্ণ না হয়- তাহলে আমি তাতে নাই। এই আইডিওলজি আমার মনের মধ্যে ধারণ করি বলেই আমি সবার সঙ্গে কাজ করি না। সব নির্মাতার সঙ্গে কাজ করি না। সব চিত্রনাট্য বা কাহিনীকে গ্রহণ করি না।'

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিসহ যেরকম নেতিবাচক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে করে দেশের শোবিজ জগৎ কঠিন সময় পার করছে- এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গেলে পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন- 'এই সময়টা থাকবে না। আমি আশাবাদী শিগ্‌গিরই মানুষের এই পরিস্থিতি কেটে যাবে। তবে আমাদের সবাইকেই এজন্য সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। তাহলেই বর্তমান শিল্প-সংস্কৃতির বিরূপ পরিস্থিতি থাকবে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে