শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আজ শুভ জন্মদিন

তারকাদের তারকা সুবর্ণা মুস্তাফা

নন্দিত অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফার আজ জন্মদিন। আজ পা রাখলেন জীবনের ৬২তম বসন্তে। কিন্তু জীবনের বিশেষ এ দিনে দেশে নেই জীবন্ত এ কিংবদন্তি। ১৯৫৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন এই তারকা। তিনি প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার কন্যা এবং ক্যামেলিয়া মুস্তাফার বোন। এমনিতেই অভিনয় কম করেন তিনি। এর মধ্যে আবার রাজনীতি নিয়ে বেশ সক্রিয় থাকায় অভিনয়ের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হচ্ছে। তারপরও অভিনয়কে জীবন থেকে একেবারে ঝেরে ফেলতে পারবেন না তিনি।
জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

এখনকার অভিনেত্রীদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার প্রিয় অভিনেত্রী কে? অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোন তারকাকে অনুকরণ কিংবা অনুসরণ করেন? জবাবে বেশির ভাগ অভিনেত্রীর মুখ থেকেই বের হয়ে আসে একটি নাম; দেশীয় শোবিজে আলোকিত ও স্মরণীয় একটি নাম। তারকাদের তারকাও বলা হয় তাকে। একাধারে তিনি একজন অভিনেত্রী, প্রযোজক ও জাতীয় সংসদ সদস্য। একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য এ অভিনেত্রী কেবল নতুন প্রজন্মের কাছে তো বটেই, তার সহকর্মীদের কাছেও ভীষণ প্রিয় একজন। নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার আজ জন্মদিন। গত বছর 'বালাই ষাট' পেরিয়ে একষট্টিতে পা দিয়েছিলেন। আজ পা রাখলেন জীবনের ৬২তম বসন্তে। কিন্তু জীবনের বিশেষ এ দিনে দেশে নেই জীবন্ত এ কিংবদন্তি। বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন সুদূর কানাডায়। তবে যাওয়ার আগে জন্মদিন নিয়ে তারার মেলার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হয় তার। বলেন, জন্মদিনটা এলে মনে এক ধরনের দোলা দেয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কয়েক বছর আগেও কাছের কিছু প্রিয় মানুষ, সহশিল্পী, পরিচালকদের নিয়ে দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করলেও গতবার যেমন বিশেষ কোনো আয়োজন ছিল না, এবারও আহামরি কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিনভর ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত থাকব মনে হচ্ছে। এমনকি অনেক বছরের মতো সহকর্মীরা হয়তো কেক নিয়ে সারপ্রাইজ দিতে পারেন। সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, 'বিশেষ দিন নিয়ে মনে আর আগের মতো উচ্ছ্বাস-উলস্নাস কাজ করে না। সত্যি বলতে কী, একটা অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। করোনার এই পরিস্থিতিতে কীভাবে মানসিকভাবে ভালো থাকি? ভালো থাকা যায় না। যেখানে মানসিকভাবেই আমি ভালো নেই সেখানে নিজের জন্মদিন নিয়ে আলাদাভাবে ভাবার কোনো সুযোগও নেই। সবাই যার যার অবস্থানে নিরাপদে থাকুন, সতর্ক থাকুন, সাবধানে থাকুন। কারণ নিজের নিরাপত্তাটাই এখন অনেক বেশি জরুরি।'

১৯৫৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন নন্দিত এই তারকা। তিনি প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার কন্যা এবং ক্যামেলিয়া মুস্তাফার বোন। এমনিতেই অভিনয় কম করেন তিনি। এর মধ্যে আবার রাজনীতি নিয়ে বেশ সক্রিয় থাকায় অভিনয়ের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হচ্ছে। তারপরও অভিনয়কে জীবন থেকে একেবারে ঝেরে ফেলতে পারবেন না তিনি। অভিনয় যে তার জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে। অভিনয়ের ক্ষুধা জীবনভরই থাকবে। সেই ক্ষুধার তাড়নাতেই মাঝে মাঝে অভিনয়ের সাধ জাগে, অভিনয় করেন। সুবর্ণা মুস্তাফা জানান, কয়েক দিন পর পরই নাটক ও সিনেমাতে কাজ করার প্রস্তাব আসে। কিন্তু করোনার কারণে অনেক কাজ করা হয়নি। শুধু জাতীয় সংসদের স্পেশাল সেশনেই তিনি অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সুবর্ণা মুস্তাফা সর্বশেষ বদরুল আনাম সৌদের নির্দেশনায় 'লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প' ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। এরপর তিনি আর কোনো নতুন ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেননি।

আশির দশকে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিশেষ করে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে তার জুটি ব্যাপক দর্শক সমাদৃত হয়। এছাড়া তিনি হুমায়ূন আহমেদের লেখা 'কোথাও কেউ নেই' ও 'আজ রবিবার' টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি তিনি ২২ বছর মঞ্চেও

অভিনয় করেন।

১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী পরিচালিত 'ঘুড্ডি' সিনেমাতে অভিনয় করেই সিনেমাপ্রেমী দর্শককে মুগ্ধ করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা। এই সিনেমাতে তার সহশিল্পী ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। এই সিনেমার জনপ্রিয় গানটি হলো 'আবার এলো যে সন্ধ্যা'। পরবর্তী সময়ে সুবর্ণা মুস্তাফা 'লাল সবুজের পালা', 'নতুন বউ', 'নয়নের আলো', 'সুরুজ মিঞা', 'রাক্ষস', 'কমান্ডার', 'অপহরণ', 'স্ত্রী', 'দূরত্ব', 'গহীন বালুচর' এবং 'গন্ডি' সিনেমাসহ আরও বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন। টিভি নাটকে সুবর্ণা মুস্তাফা-আফজাল হোসেন সর্বকালের সেরা জুটি। এই জুটিকে সর্বশেষ দেখা যায় বদরুল আনাম সৌদের নির্দেশনায় 'অক্ষর থেকে উঠে আসা মানুষ' নাটকে।

ঢাকায় জন্মগ্রহণ করলেও সুবর্ণা মুস্তাফার পৈত্রিক নিবাস ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নে। তার পিতা গোলাম মুস্তাফা ছিলেন একজন প্রখ্যাত অভিনেতা ও আবৃত্তিকার। তার মা হোসনে আরা পাকিস্তান রেডিওতে প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন। মায়ের সহায়তায় মাত্র ৫/৬ বছর বয়সে বেতারের নাটকে কাজ করেন। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে টেলিভিশনে কাজ করেছেন। ১৯৭০-এর দশকে সুবর্ণা ঢাকা থিয়টারে নাট্যকার সেলিম আল দীনের নাটক 'জন্ডিস' ও 'বিবিধ বেলুন'-এ অভিনয় করেন। ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত 'ঘুড্ডি' ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে আসেন। দীর্ঘদিন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দৃপ্ত পদচারণার পর সুবর্ণা মুস্তাফা নাম লেখান রাজনীতির খাতায়। ২০১৯ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ও ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪ (৩০৪), ঢাকা-২২ থেকে সুবর্ণা মুস্তাফাকে মনোনয়ন ও চূড়ান্তভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ ২২ বছর সংসার করার পর ২০০৮ সালে ফরীদির সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি বদরুল আনাম সৌদকে বিয়ে করেন। অভিনয়ের জন্য ২০১৯ সালে একুশে পদক পান সুবর্ণা। চলচ্চিত্রে সর্বশেষ তিনি কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস পলস্নীসমাজ অবলম্বনে 'লীলাবতী' সিনেমায় কাজ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে