শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অতৃপ্তি নেই দীপার

ম মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

'এ দেশের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এমন যে, একজন মেয়ে সমাজে 'ডমিনেট' করবে- এটা তারা পছন্দও করে না, এমনকি মেনেও নিতে চায় না। তাই এ চরিত্রে তাদের চিরাচরিত নেতিবাচক রূপেই উপস্থাপন করা হয়। এমন অভিনয়ের খুব একটা উন্নতিও হয় না যেমন, তেমনি দর্শকের কাছেও জনপ্রিয় হয় না। যদি যথাযথভাবে উপস্থাপন করা যায় তাহলে অবশ্যই নারী ভিলেনও জনপ্রিয় হবে।'

বক্তব্যটি ক্যারিয়ারের দীর্ঘ বাইশ বছর পেরিয়ে আসা অভিনেত্রী দীপা খন্দকারের। মো. ইকবালের 'রিভেঞ্জ' চলচ্চিত্রে মিশা সওদাগরের সঙ্গে খল চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে 'ভিলেন চরিত্রে নারীর জনপ্রিয়তা' বিষয়ে বলতে গিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, 'আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটা এমন টাইপের- তারাই খল চরিত্র হিসেবে নারীকে দাঁড়াতে দেয় না। নির্মাতারা তাকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন- যাতে চরিত্রটি না দাঁড়ায়, জনপ্রিয়তা না পায়। চিত্রনাট্য অনুযায়ী চরিত্রটির উপস্থাপন করা হয় না। ভিলেন বলতে যেটা বুঝি, সেটাই দেখানো হয় না। শুধু পারিবারিক চরিত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। এখানে খল চরিত্রে নারীকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। এটা আমাদের দেশেই দেখা যায়।'

কিন্তু তারপরও কেন এই খলচরিত্রে আসা? উত্তরে দীপা খন্দকার বললেন, 'আসলে চরিত্রটি পছন্দ হওয়াতেই তাতে অভিনয় করি। বিষয়টা হচ্ছে, এতে আমার অভিনয়ের বড় সুযোগ থাকাতেই কাজটি করি। আমি তো শুধু চেহারা দেখাতেই অভিনয় করব না। সেই সময়ও নেই।'

বিমানবালার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করলেও নাটকের এই প্রিয় মুখ চলচ্চিত্রেও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। সব মাধ্যমেই সমান জনপ্রিয়তার সঙ্গে অভিনয় করার পাশাপাশি সংসারও চালিয়ে যাচ্ছেন মমত্বের সঙ্গে। যদিও নাটকে আসার দীর্ঘদিন পর বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন এই তারকা। বলতে গেলে এই তো হাতেগোনা কয়েক বছর আগে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। মাত্র চারটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, তাতেই যেন নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও নিয়মিত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তার। প্রশ্ন ছোড়া হলো, সত্যিই কি চলচ্চিত্রেও নিয়মিত হচ্ছেন? দীপার জবাব, 'যদি ভালো নির্মাতা, ভালো চরিত্র ও গল্প পাই তাহলে চলচ্চিত্রেও নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে আছে। সেটা দুই বছর গ্যাপ দিয়ে হোক বা পাঁচ বছর গ্যাপ দিয়ে। কারণ, আমার কাছে আমার পরিবারই প্রথম। পরিবারকে সময় দিয়ে যেটুকু সময় পাব সে সময়টিতেই অভিনয়ে থাকতে চাই।' তার মানে ঢাকাই চলচ্চিত্রে ক্যারেক্টারিস্টিক অভিনয়ের ফাঁকা জায়গাটির জন্য আগামীতে দীপা খন্দকার একটা বড় সুফল বয়ে আনতে যাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, জয়দীপ মুখার্জির 'ভাইজান এলো রে' (২০১৮) নামের কলকাতার ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে দীপা খন্দকারের আগমন। প্রথম চলচ্চিত্রেই নিজের অভিনয় নৈপুণ্যে তাক লাগিয়ে দেন। তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কলকাতার ছবিতে আর কাজ করেননি। কেন করলেন না? 'আসলে এ ছবিটিতে হুট করেই আসা। গল্পটাও আমার সঙ্গে মানানসই হওয়াতেই তাতে অভিনয় করি। চাহিদা থাকলেই তো হলো না। আমার একটা সংসার আছে। আমি অন্যদের মতো সংসার ছাড়া নই। এই সংসারেরও দেখাশোনা করতে হয় আমাকেই। একটা ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেখানে মাসের পর মাস বসে থাকব- এটা আমাকে দিয়ে হবে না। তাই ওপারে নতুন কোনো কাজ করা হয়নি।'

তবে ওই ছবিটিই দীপার চোখ খুলে দিয়েছে, স্বীকার করে তিনি বলেন, 'পরে ভাবলাম, সিনেমাতেও আমার অভিনয় করা উচিত। এটা তো দেশের চলচ্চিত্রেও করতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই একে একে কাজ করি- 'পায়ের ছাপ', 'রিভেঞ্জ', 'মনোলোক' ও 'মুনা' চলচ্চিত্রে।' এ অবস্থায় নতুন বছরে নতুন কোনো কাজ দিয়ে শুরু করতে যাচ্ছেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন- 'নতুন বছরে কাজ এখনো শুরু করিনি। চলতি মাসের ৭ তারিখে নতুন ছেলে জুয়েলের হলিজান নামের ওয়েব সিরিজের শুটিং আছে। গত ৩১ তারিখ এর শেষ শুটিং করি। একই তারিখে আরেকটি হরর থ্রিলার 'মুনা'র শুটিং শেষ করলাম। ধারাবাহিক 'গুলশান এভিনিউ-২' নিয়েও শুটিং আছে। নাগরিক টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান করছি। এইতো।'

নিজের অভিনয়ের এই দীর্ঘ ক্যারিয়ার নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট- এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, 'আমি আমার কাজে পুরোপুরি সন্তুষ্ট। বাইশ বছর আমার পরিবারকে সঙ্গে রেখেও অভিনয়টা চালিয়ে আসতে পারছি, দর্শক আমাকে ভালোবাসছে, নতুন কাজের প্রস্তাব আসছে, ভালো চরিত্র হলে পরিচালকরা আমাকে নিয়ে চিন্তা করেন- সে হিসেবেও আমি আমার কাজে শতভাগ সন্তুষ্ট। কোনো অতৃপ্তি নেই আমার।' এই সন্তুষ্টি নতুন বছরেও অব্যাহত থাকুক এমন আশা নিয়ে দীপা খন্দকার আরো বলেন- 'নতুন বছরের হিসাবনিকাশ বলতে, বিগত বছরে কী ভুলত্রম্নটি করেছি এখন সেগুলোর হিসেব মেলান। ভুলগুলো যাতে না হয় সেভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে