শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমানী সুইটি

ম মাতিয়ার রাফায়েল
  ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

নব্বই দশকে বিটিভি ও টিভি চ্যানেলে যেসব তারকার অভিনয়ের আলোতে আলোকিত থাকতো ড্রয়িংরুম- তাদের অনেকেই এখন প্রায় অন্তরালে চলে গেছেন। মাঝে মাঝে দেখা মেলে কোনো ধারাবাহিক বা বিশেষ নাটকে। তাদেরই একজন তানভীন সুইটি। নামের মতোই মিষ্টি তার মুখশ্রী। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'আগস্ট ১৯৭৫' ও ধারাবাহিক নাটক 'পিছুটান' এরপর সম্প্রতি এই অভিনেত্রী অভিনয় করছেন 'গুলশান এভিনিউ সিজন-২' ধারাবাহিকে। 'আরো একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা নিয়ে কথা চলছে। ব্যাটে-বলে মিললেই তাতে যুক্ত হবেন- না হলে নাই।' এভাবেই নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন একসময়ের গস্ন্যামার অভিনেত্রী সুইটি। শোবিজে কেন অনিয়মিত হয়ে পড়লেন, এসব বিষয়ের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ইসু্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এক সময়ের দু্যতিময় সদা টোলখাওয়া হাসির এই তারকা।

তানভীন সুইটির বক্তব্যের সারসংক্ষেপ যা দাঁড়ায়- এখনকার নাটক-সিনেমায় অভিনয়ের জায়গাটা সবদিক থেকেই ক্রমশ গুটিয়ে আসছে। গোটাতে গোটাতে এমন হয়েছে, নায়ক-নায়িকার বাইরে বাদবাকি সব তুচ্ছ হয়ে পড়ছে। ফলে এখানে যেন 'নাম কা ওয়াস্তে' চেহারা দেখানো ছাড়া কোনোই কাজ নেই সহশিল্পীর। নব্বই দশকের টিভি নায়িকা হিসেবে একেবারে সম্মুখ সারিতে থাকা তানভীন সুইটি বলেন, 'এমন জায়গায় অভিনয় করবেন কেন- যেখানে নিজেকে মেলে ধরার মতো অভিনয়ের কোনো ক্ষেত্রই নেই?' নিজেই প্রশ্ন করে আবার নিজেই উত্তর দেন তিনি। বলেন, 'একসময় তো আমাকে মাসে ২৫/৩০ দিনই ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয়েছে। সেই জায়গা নতুনদের জন্য ছেড়ে দিতে হয়েছে। আজকে যারা আছেন তাদের জায়গাও ছেড়ে দিতে হবে আগামীর জন্য। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আর বয়েসের দিক থেকে এখন যে অবস্থানে আছি, সে অবস্থান থেকে তো নাটক, মুভি কিছুই হয় না। কাজেই অভিনয়ে যা কিছু দিতে পারব সে জায়গাটা কোথায়?'

তারপরও মানুষের তারুণ্যই সব নয়। তাকে বয়সের আরো কয়েকটা ধাপ পেরিয়ে যেতে হয়। যেমন তারুণ্যেও কয়েকটা ধাপ পেরিয়েই আসতে হয়। নাটকে, সিনেমায় সেই পেরিয়ে যাওয়া নানা বয়সের চরিত্রও থাকতে পারে। বয়স অনুযায়ী তাতেও তো অভিনয় করা যায়। এমন পর্যবেক্ষণে তানভীন সুইটি বলেন, 'সে রকম গল্প, চিত্রনাট্যও তো হতে হবে। সেটা হচ্ছে কোথায়? একটু আধটু হলেও সে রকম চরিত্রের জায়গাটিই বা কতখানি? সে রকম নির্মাতাও চোখে পড়ে না। ফলে যা হওয়ার হচ্ছে। একই ধারার গল্পে-চিত্রনাট্যে একই কন্টেন্ট চক্রাকারে ঘুরেফিরে আসছে। ঘুরেফিরে একই সংলাপের প্রেম ছাড়া কিছুই থাকছে না। বাস্তব জীবনে কি শুধু এই প্রেমই থাকে? আরও বহু কিছুই তো থাকে। যার কারণে হয় কি, একপর্যায়ে এই কাজের প্রতিই আর ভালোবাসা থাকে না।'

ব্যস্ততার সময়ে অনেকে অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। পরে দেখা গেল, ফিরিয়ে দেওয়া সেই নাটক-সিনেমার চরিত্রে অন্য কেউ খুব সুনাম অর্জন করেছে। তানভীন সুইটিকেও এমন কোনো কাজ ছেড়ে দেওয়ার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি কাজের জন্য কাজ করি না। যেটা আমার কাছে ভালো লাগবে সে রকম কাজই আমি বেছে বেছে করি। ভালো লাগলে করব, না হলে করব না। এত বছরে আমার যে একটা অর্জন আছে সেটা তো যেনতেনভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না। বিষয়টা আমি এভাবেই চিন্তা করি।' কিন্তু একটা সময় যে তানভীন সুইটিকে তার টোলনন্দন হাসি নিয়ে হররোজ শোবিজে হাজির থাকতে দেখা গেছে সেই স্মৃতি কি ভোলা যায়?

'দুদিন আগেও ভেবে দেখলাম, আমরা আসলে কিছুই না। আজ আছি- কাল নেই। এরপর কেউ কাউকে মনে রাখবে না। আপনারাও তো মিডিয়ায় আছেন। আমাদের সঙ্গেই আপনাদের কাজ। তারপরও আপনাদের পাতায় কার কত ফলোয়ার এর ওপর নতুনদের দেখা যায়। আমাদের খোঁজ নেন না। আমরা মাইন্ড কি করি? এমন সময় আমাদেরও কি ছিল না? বিষয়টা হচ্ছে, একটা সিনেমা বা নাটক নতুনদের নিয়েই কি হয়? আর কিছু থাকতে নেই? এক জীবনে এ ছাড়া আর কোনো ঘটনা থাকে না? এই যেমন তারিক আনাম খানের কথাই ধরুন। তার মতো জায়গাটি পাওয়াতেই কী দাপটের সঙ্গে এই বয়সেও আগের মতোই কেমন প্রাণবন্ত! এখন আমাদের অবস্থান অনুযায়ী স্ক্রিপ্ট হলে, অভিনয়ের জায়গা থেকে সে রকম কিছু করতে পারলে কেন অভিনয় করব না? এখনকার সিনে-নাটকের স্ক্রিপ্ট যেমন আপনাদের পাতাও তেমন। নতুন তারকা না হলে অন্যদের খোঁজ নেয় না মিডিয়া। এটা বাংলাদেশেই হয়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হয় না।'

অভিনয় জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি থেকে এমনটিই বললেন এক সময়ের এই গস্ন্যামার গার্ল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে