শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

'মিষ্টি প্রেমের সিনেমা হচ্ছে না'

ম মাতিয়ার রাফায়েল
  ১৯ মে ২০২২, ০০:০০
ফেরদৌস আহমেদ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিষেকেই যারা অভিনেতা হিসেবে প্রত্যাশা জাগিয়েছিলেন ফেরদৌস আহমেদ তাদের মধ্যে অন্যতম। রোমান্টিক অভিনেতাদের মধ্যে প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাক ও সালমান শাহ'র পর তার নামটিও আসে। ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা 'হঠাৎ বৃষ্টি'তে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য রাতারাতি রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তারকা খ্যাতি এনে দেয় ফেরদৌসকে। তার বেশির ভাগ ছবির নামকরণ থেকেও বোঝা যায় ফেরদৌস রোমান্টিক সিনেমার জন্যই অনবদ্য। তবে তিনি এমন সময়ে চলচ্চিত্রে আসেন যখন রোমান্টিক সিনেমা কমতে থাকে। রমরমা হতে থাকে কমার্শিয়াল মারপিট, থ্রিলার, অ্যাকশনধর্মী সিনেমা। এ নিয়ে তারার মেলার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় তার। এখন মিষ্টি প্রেমের সিনেমা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে আবেগপ্রবণ হয়ে ফেরদৌস বলেন, 'আসলে এখন আগের মতো সেই মিষ্টি প্রেমের গল্প নিয়ে সিনেমাই হচ্ছে না। আমার কাছে মনে হয়, আমরা যেন কেমন অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই প্রেম, এই দ্রোহ, এই ক্রোধ, এই মারপিট, রক্তপাত- এই একটু একটু করে সবকিছু দিয়েই চেষ্টা করা হচ্ছে কিছু একটা করার। কেমন একটা পাঁচ মিশালি জাতীয় গল্প নিয়ে আসছে এসব সিনেমা। এ কারণে আগের মতো আবেদনটাও থাকে না। সিনেমা দেখে যে একটা আত্মোপলব্ধি, ফিলিং, ইমোশন হবে, সেই জায়গাটায় আমরা আর নেই। সবকিছুতেই একটা অস্থিরতা। যেমন আমার 'প্রেমের জ্বালা', 'যত প্রেম তত জ্বালা' বা আমার আর শাবনূরের সিনেমাগুলো- এরকম সিনেমা বানানোই হতো ঈদকে টার্গেট করে এবং সবই হতো একই আবেদনের। তখন তো ঈদে কয়েকটি নতুন সিনেমা রিলিজের পাশাপাশি পুরনো ভালো ভালো সিনেমাগুলোও দেখানো হতো। অবশ্য হলের অপ্রতুলতার কারণেও সবাই এমন একটা সংশয়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে যে, নির্মাতাও নিশ্চিত হতে পারছেন না কেমন সিনেমা বানাবেন- থ্রিলার নাকি ডিটেকটিভ। সেটা দর্শক দেখবে কিনা। তবে আমি আশাবাদী, রোমান্টিক সিনেমা আবার হবে।'

এখন সিনেমা কেবল প্রেক্ষাগৃহে সীমাবদ্ধ নেই; সিনেমা দেখায় যে বিনোদন ছিল সেটা গুটিয়ে আসছে হাতের মুঠোয়- এটা সিনেমার ভবিষ্যৎকে কীভাবে প্রভাবিত করবে ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে বলেন 'যাই বলেন, ছোটপর্দা কিছুতেই বড় পর্দায়র জায়গায় যেতে পারবে না। বড় পর্দায়য় সিনেমা দেখার অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। যতই যা দেখি বড় পর্দায়র মজাটা একেবারেই আলাদা; সিনেমা হলে বড় পর্দায়য় সিনেমা দেখায় একটা মেন্টাল প্রিপারেশন থাকে ভালো একটা সিনেমা দেখার; এই প্রিপারেশন ও প্রসেসটাই আমার ভীষণ, ভীষণ ভালো লাগে। একটা বড় স্ক্রিন- বড় পর্দার সামনে অন্ধকার হলে পেছন থেকে আলো ফেলা- জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, দর্শকের মাঝে অবিচ্ছিন্ন এক নীরবতা, ভীষণ মনোযোগ দিয়ে দেখা, মধ্যাহ্ন বিরতি, এমন পরিবেশে সিনেমা দেখাটাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিনোদন। বড় পর্দায় একটা ভালো সিনেমা দেখার আবেদন অনেক অনেকদিন থেকে যায়। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নানা গল্প চলতে থাকে। ছোট পর্দায় যতকিছুই দেখাক সেটা এত বেশি রেজিস্ট হয় না। আমি বড় পর্দায় যত সিনেমা দেখেছি সবগুলোই এখনো আমার মনে আছে।'

নতুন যারা নির্মাতা তাদের কাজে কেমন পরিবর্তন দেখছেন এমন প্রশ্নে ফেরদৌস বলেন, 'ভালো। তবে আমাদের সময়ে যারা নির্মাতা ছিলেন তারা এক রকম আর এখন যারা আসছেন তারা আরেক রকম। বর্তমানে পরিধিটা কমে যাওয়াতেও ওরা আগের মতো সুযোগ পাচ্ছে না। সিনেমা বানানোও অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে। কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে। ফলে ভালো সিনেমা বানানোর সুযোগটাও কমে গেছে। আগে যারা প্রযোজক ছিলেন তারাও নেই। তবে ওটিটিতে কয়েকজনের কাজ দেখে আমার ভালোই মনে হয়েছে। আমার মনে হয়েছে সুযোগ পেলে বাজেট ভালো পেলে তারা আরো ভালো করবে।'

সবশেষে বর্তমান ব্যস্ততা প্রসঙ্গ। ফেরদৌসের কাছ থেকে জানা গেল, বর্তমানে সরকারি অনুদানের সাতটি সিনেমা হাতে রয়েছে তার। কয়েকটি সিনেমার কাজ শেষ, অসম্পূর্ণ আছে কয়েকটি। এগুলো আফজাল হোসেনের 'মানিকের লাল কাঁকড়া', হৃদি হকের '১৯৭১ সেইসব দিন', জেড এইচ মিন্টুর 'ক্ষমা নেই', মাহমুদ দিদারের 'বিউটি সার্কাস', শুদ্ধমান চৈতন্য'র 'দামপাড়া', নূরে আলমের 'রাসেলের জন্য অপেক্ষা' ও শাহীনের 'মাইক'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে