সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
'দ্য কেরালা স্টোরি'

বিতর্কের মাঝেই মুক্তি

নতুনধারা
  ০৪ মে ২০২৩, ০০:০০
'দ্য কেরালা স্টোরি' সিনেমার একটি দৃশ্য

ম তারার মেলা ডেস্ক

ভারতজুড়ে তুমুল বিতর্ক চলছে 'দ্য কেরালা স্টোরি' সিনেমাটি ঘিরে। এই বিতর্কে মাঝেই আগামীকাল শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে মুক্তির আগেই নানান কারণে আলোচিত এই সিনেমাটি। মুক্তির আগে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছে ছবিটির ট্রেইলার। অন্যদিকে, চড়েছে রাজনীতির পারদ। ঠিক যেমন হয়েছিল 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে। একপক্ষ যেমন বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের তৈরি পূর্ণাঙ্গ সিনেমাটি দেখতে মুখিয়ে আছে, অন্যদিকে, কংগ্রেস, সিপিএম এবং বেশ কিছু দল ও সামাজিক সংগঠন সিনেমাটির বিষয়বস্তুকে অতিরঞ্জিত দাবি করে সেটির মুক্তি আটকে দেওয়ার দাবি তুলেছে।

ভারতে মুসলিমদের বৃহত্তম সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলেমা-এ-হিন্দ সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছে, সিনেমাটির মুক্তি আটকে দেওয়া হোক। তাদের বক্তব্য, সিনেমাটি দেশে ধর্মীয় ভেদাভেদ আরও বাড়িয়ে দেবে। সিনেমার অনেক তথ্যই ভুল।

শীর্ষ আদালত মঙ্গলবার মামলাটি দ্রম্নত শোনার আর্জি মঞ্জুর করেনি। আদালত বলেছে, ঘৃণা ভাষণ সংক্রান্ত মামলার সঙ্গে সিনেমা মুক্তি আটকানোর আর্জি শোনা হবে। ফলে আদালত এখনো পর্যন্ত সিনেমার মুক্তি আটকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি।

মুক্তির আগে 'দ্য কেরালা স্টোরি' নিয়ে বিতর্কের আঁচ কিছুতেই কমছে না। একদিকে ছবির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির দাবিতে সরব কংগ্রেস। কেরালার মুখ্যমন্ত্রীও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাঙালি পরিচালকের এই ছবি নিয়ে। পিনারাই বিজয়নের কথায়, 'কেরালার ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা এই ছবি।' সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের তরফে ইতোমধ্যেই মুক্তির ছাড়পত্র হাতে পেয়েছে টিম 'দ্য কেরালা স্টোরি'। তবে বেশ কিছু পরিবর্তনের পর এই ছবিকে (প্রাপ্তবয়স্কদের ছবি, ১৮+) সার্টিফিকেট দিয়েছে সেন্সর বোর্ড। জানা গেছে, ছবির ১০টি দৃশ্যে কাঁচি চালিয়েছে সিবিএফসি। এই ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে কেরালার এক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচু্যতানন্দনের সাক্ষাৎকারের অংশ। এছাড়াও ছবির একাধিক দৃশ্যে হিন্দু দেবদেবীর প্রসঙ্গ টেনে বেশকিছু সংলাপ ছিল যা বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেয় সেন্সর বোর্ড। 'ইন্ডিয়ান কমিউনিস্টরা সবচেয়ে বড় হিপোক্রিট', ছবির এই লাইন থেকে ইন্ডিয়ান শব্দ বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিবিএফসি।

'দ্য কেরালা স্টোরি'তে সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর এক সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছিল; সেখানে বলা হয়েছে, আগামী দু'দশকের মধ্যে কেরল মুসলিম অধু্যষিত রাজ্যে পরিণত হবে, যেহেতু রাজ্যের যুব সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করছে। সিবিএফসি এই গোটা সাক্ষাৎকার ছবি থেকে ছেঁটে ফেলতে বলছে পরিচালক সুদীপ্ত সেন ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর-প্রযোজক বিপুল শাহকে।

কী আছে এই সিনেমায়, যার কারণে এমন হুলস্থুল অবস্থা তৈরি হয়েছে? গত ২৬ এপ্রিল 'দ্য কেরালা স্টোরি'র ট্রেইলার প্রকাশ পেয়েছে। সেটা থেকে ছবির গল্প সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, কেরালা থেকে ৩২ হাজার হিন্দু ও খ্রিষ্টান নারীকে গুম করা হয়েছে এবং তাদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মগ্রহণ করিয়ে জঙ্গি সংস্থা আইএস-এ যুক্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় নারীদের ওপর তীব্র শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। সিনেমাটির মূল বিষয় এক কথায়, কেরালের হিন্দু ও খ্রিষ্টান মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে বিদেশে চালান করে জঙ্গি সংগঠনে যোগদানের চক্র। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো যাকে 'লাভ জিহাদ' বলে আসছে। এইভাবে ৩২ হাজার মেয়েকে সিরিয়া, আফগানিস্তানে আইএসের শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সিনেমায় দাবি করা হয়েছে। একটি মেয়ের মুখে সংলাপ আছে, 'স্বপ্ন ছিল আমি নার্স হয়ে মানুষের সেবা করব। এখন আফগানিন্তানে বন্দি।'

ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যা নয়, কিন্তু বিপত্তি বেঁধেছে সংখ্যায়। ২০১৯ সালে দ্য অবসার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৬০-৭০ জন নারী ধর্মান্তরিত হয়ে আইএস-এ যোগ দিয়েছিল। অন্যদিকে, ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এই নারীদের সংখ্যা ১০০-২০০ জনের মধ্যে। কিন্তু ছবিটির ট্রেইলারের শুরুতেই লেখা হয়েছে, 'এই ছবি অনেকগুলো সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত'। অথচ ছবির গল্পে দেখানো হয়, ৩২ হাজার নারীকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে- যা বাস্তবতার ধারে-কাছেও নেই! এ কারণেই বিতর্কের অগ্নুৎপাত।

এদিকে, ট্রেইলারটি প্রকাশের পর ভারতের মুসলিম ইয়ুথ লিগের প্রধান পি. কে. ফিরোজ ঘোষণা দিয়েছেন, নির্মাতারা যদি এই ছবির ঘটনা সত্য প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে ১ কোটি রুপি পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া কে. নাজির হুসাইন নামের এক বস্নগার ঘোষণা দিয়েছেন, যদি কেউ ছবির গল্পের সত্যতার প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে তাকে ১০ লাখ রুপি দেবেন। আইনজীবী ও অভিনেতা শুক্কুর বলেছেন, তিনি ১১ লাখ রুপি দেবেন। এরকম আরও অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হয়েছেন সোশ্যাল হ্যান্ডেলে।

এত এত অভিযোগ-সমালোচনার বিপরীতে ছবিটির নির্মাতা সুদীপ্ত সেন বলেছেন, 'মাসের পর মাস বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করে ছবিটি বানিয়েছি। নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলার পর আমার ধারণা বদলে গিয়েছিল।'

অন্যদিকে, ছবির প্রযোজক বিপুল শাহর দাবি, 'কেরালা রাজ্যের বিরুদ্ধে এই সিনেমায় কিছুই দেখানো হয়নি। এখানে জঙ্গিদের টার্গেট করা হয়েছে, মুসলমান নয়।'

'দ্য কেরালা স্টোরি'তে অভিনয় করেছেন আদাহ শর্মা, যোগিতা বিহানি, সোনিয়া বালানি, সিধি ইদনানি প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে