সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

তারুণ্যের সহযাত্রী কেয়া পায়েল

তরুণ প্রজন্মের নন্দিত নাট্যাভিনেত্রী কেয়া পায়েল। প্রতিনিয়ত অনবদ্য অভিনয় দিয়ে দর্শককে মুগ্ধ করে চলা এক অভিনয়শিল্পী। অল্প সময়ে ক্যারিয়ারে সাফল্যের এত দূর এনে দিতে পারার অন্যতম উদাহরণ এই তিনি। শখের বসে বিজ্ঞাপনের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও এখন পুরোদস্তুর একজন অভিনেত্রী। অভিনয়ের স্বর্ণালি সময় পার করা এই উঠতি তারকা নিয়ে লিখেছেন মাসুদুর রহমান
নতুনধারা
  ১৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

মাত্র ২৮ পার হলো তার বয়স। অথচ এই বয়সেই নাম, যশ, খ্যাতি- সবই যেন নিজের করে নিচ্ছেন কেয়া পায়েল। তার নাটক মানেই দর্শকদের কাছে বাড়তি আগ্রহ। নতুন গল্পে ভিন্ন উপস্থাপন। অভিনয়ের মুগ্ধতা ছড়িয়ে তিনি দর্শককে হাসান, কাঁদান আবার কখনো রোমাঞ্চিত করেন। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন গেল ঈদেও। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও ইউটিউবে প্রচারিত হয়েছে তার বেশ কিছু নাটক। নাটকগুলো দর্শক মহলে ভালো সাড়া ফেলেছে। জাকারিয়া সৌখিনের রচনা ও পরিচালনায় 'নিজের খেয়াল রেখো' নাটকটি প্রকাশ হয়েছে সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে। এতে কেয়া পায়েলের বিপরীতে অভিনয় করেছেন মনোজ প্রামাণিক ও জোভান। একই পরিচালকের তৌসিফের বিপরীতে কেয়া অভিনয় করেছেন 'উড়াল পাখি' নাটকে। ৬ জুলাই এটি প্রকাশ পায় সুলতান ইন্টারটেইনমেন্টে। ঈদের আগের দিন সিএমভিতে প্রকাশিত হয়েছে কেয়া পায়েল ও জোভান অভিনীত জোবায়েদ আহসান রচিত ও রাফাত মজুমদার রিংকু পরিচালিত 'কাটুস কুটুস কোরবানি'। এ ছাড়া মেহেদী হাসান হৃদয়ের 'নিউলি মেরিড', এস আর মজুমদারের 'হৃদয় আকাশে' নাটক দুটিও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। ঈদের নাটক নিয়ে কেয়া বলেন, 'ঈদে যেকটি নাটক প্রকাশিত হয়েছে প্রতিটির জন্য বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। দর্শকদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। আরও ভালো কাজ করতে চাই।'

ঈদের আগে একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য আমেরিকা গিয়েছিলেন এ অভিনেত্রী। সেখান থেকে দেশে ফিরে আবারও শুটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। কাজ করছেন একাধিক নাটকে। টেলিভিশন পর্দায় কেয়া পায়েলের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। নিত্যনতুন কাজ করছেন নতুন নতুন গল্পের নানা চরিত্রে। একটি শেষ করতে না করতেই নিজেকে মেলে ধরছেন নতুন আরেক গল্পের চরিত্রে। একই সময়ে নাটক, টেলিছবির চরিত্র আত্মস্থ করা অনেক কঠিনও বটে। এ নিয়ে কেয়া পায়েল বলেন, 'শুরু থেকেই চেষ্টা করছি ভালো গল্পের নাটকে অভিনয় করতে। এ সময়ে এসে গল্পের প্রতি আমি আরও অধিক মনোযোগী হয়ে উঠেছি। তবে একই সময়ের একাধিক চরিত্র আত্মস্থ করে একের পর এক নাটক করে যাওয়া খুবই কঠিন। তাই অভিনয়ের আগে যতটা পারি চরিত্র নিয়ে ভাবার চেষ্টা করি। কেমন হতে পারে তাদের স্বভাব, চলাফেরা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তা নিয়ে কিছুটা পড়াশোনা করি। সহশিল্পী আর পরিচালকদের সহযোগিতাও পাই অনেক।' অনেকে গড়পরতা অভিনয়েও অভ্যস্থ। টিভি পর্দায় নিজেকে দেখানোটাই যেন ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ। দর্শক তার অভিনয় কতটা গ্রহণ করছে সেদিকে নজর নেই। দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ নিয়ে আলাদা করে কখনো ভাবেন কিনা জানতে চাইলে কেয়া পায়েল বলেন, 'দর্শকের ভালো লাগা, মন্দ লাগার বিষয় মাথায় রেখেই কাজ করি। তারকা নয়; অভিনেত্রী হতে চাই। এ জন্য খ্যাতি বা জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে কখনো কিছু করতে চাই না। বরং খেয়াল রাখি, যে কাজ করছি তা সমালোচনার মুখে ফেলবে কিনা?'

একটা সৌভাগ্য দিয়েই শোবিজে যাত্রা শুরু হয়েছিল কেয়া পায়েলের। সময়টা ২০১৮ সাল। তখন তিনি ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। শখের বশে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছিলেন তিনি। এটি প্রচারের পর সবার নজরে আসেন কেয়া। ওই বছরই তাহসান, হাবিব ওয়াহিদ ও ইমরান মাহমুদুলের গানে মডেল হয়ে প্রশংসিত হন। একই বছরের শেষের দিকে 'একটাই আমার তুমি' নামে এক ঘণ্টার নাটকে অভিনয় করেন আফরান নিশোর বিপরীতে। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে শহরের নাটকে যেমন দেখা গেছে কেয়াকে, তেমনই গ্রামের গল্পেও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। অভিনয় করেছেন নানান গল্পের বৈচিত্র্যময় চরিত্রে। তবে চঞ্চলা চরিত্রই বেশি টানে এই অভিনেত্রীকে। এ নিয়ে কেয়া পায়েল বলেন, 'চঞ্চল প্রকৃতির চরিত্রে অভিনয় করতে আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। মন খারাপ করা চরিত্রগুলো আমাকে টানে না। আমারতো মাত্র শুরু তাই এতকিছু ভেবে অভিনয় করি না। ভালোলাগা ও ভালোবাসা থেকে নাটকের গল্প, চরিত্রে অভিনয় করি।' ঘুরে ফিরে কয়েকজন অভিনেতার সঙ্গেই দেখা যায় কোন কোন অভিনেত্রীকে। তবে সময়ের আলোচিত প্রায় সব অভিনেতার বিপরীতেই দেখা গেছে কেয়াকে। এ নিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নাটকের গল্প, চরিত্র, পরিচালক দেখে অভিনয় করি, আমার বিপরীতের অভিনেতা দেখে না। তবে মোটামুটি সব অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করা হয়েছে আমার।'

নাটকে কেয়ার জয়জয়কার থাকলেও সিনেমায় দেখা নেই এই অভিনেত্রীর। অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের শেষে আনিসুর রহমান মিলনের বিপরীতে 'ইন্দুবালা' সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করেন কেয়া পায়েল। এরপর সিনেমার জন্য আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি তিনি। কিন্তু কেন? এ প্রসঙ্গে কেয়া পায়েল বলেন, 'বড় পর্দায় অভিনয়ের স্বপ্ন সব অভিনয়শিল্পীরই থাকে। আমি সে রকমই স্বপ্ন দেখি। ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে অবশ্যই সিনেমায় অভিনয় করতে চাই। নাটকের কাজেই বেশি ব্যস্ত। যেজন্য সিনেমায় নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা নেই। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যখন 'ইন্দুবালা' সিনেমাতে অভিনয় করি তখন আমি একেবারে নতুন ছিলাম। অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে, সিদ্ধান্ত ভুল ছিল তা বলব না। কারণ, কাজ করতে করতেই তো অভিজ্ঞতা বাড়ে। এখন যেমন অনেক কিছু বুঝি তখন বুঝতে পারিনি।'

কেয়া পায়েলের জন্ম ময়মনসিংহে। ছোটবেলা থেকে তিনি ছাত্রী হিসেবে ভালো ছিলেন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিষয়ের শিক্ষার্থী কেয়া। আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অভিনয়ে নিয়মিত থাকতে চান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে