রোজা দেহে ফ্রি রেডিকেল কমিয়ে (এটা থাকলে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে) শরীরের মধ্যে জ্বালা-পোড়া কমিয়ে দেয়। ফলে অসংখ্য রোগ-জীবাণু জন্মাতে বাধা প্রদান করে এবং বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
রোজা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘায়ু করে। আধুনিক বিজ্ঞানীদের নানা গবেষণায় এ তথ্য প্রমাণিত হয়েছে।
এ ছাড়া রোজা দেহকে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে এবং মানুষকে দীর্ঘজীবী করে। কারণ রোজা থাকলে একটি নির্দিষ্ট সময় শরীর প্রোটিন গ্রহণ থেকে বিরত থাকে বলে শরীরে হিউম্যান গ্রোথ হরমোন বেড়ে যায়। এই হরমোন কোষের বৃদ্ধি ঘটায় ও কোষকে রিপিয়ার করে। এই হরমোন শরীরে মেটাবোলিজম বা বিপাক ক্রিয়াকে বর্ধিত করে। বিবিসি গুডফুড বলছে, এই পরীক্ষাটি প্রাণীর ওপর করা হয়েছে। মানব শরীরে এই পরীক্ষাটি কতটুকু কার্যকর তা জানতে একটি বড় পরিসরে গবেষণা করা প্রয়োজন।
রোজায় হরমোন কোষ ও জিনে পরিবর্তন হয়। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে আরো কিছু ঘটনা শরীরে ঘটে। এতে ইনস্যুলিন লেবেলে পরিবর্তন ঘটে। ফলে শরীরে চর্বি পোড়ানো শুরু হয়। অনেক্ষণ না খেয়ে থাকলে রক্তে এইচজিএইচ নামক হরমোন নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। এই হরমোন বৃদ্ধি যত উচ্চমাত্রায় ঘটে শরীরে জমে থাকা চর্বি তত দ্রুত ও বেশি পুড়তে শুরু করে। একই সাথে পেশি গঠন বেড়ে যায়। রোগ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ও দীর্ঘায়ু আনয়নকারী জিনের বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে। ফলে শরীর নিরোগ থাকে এবং মানুষের আয়ু বেড়ে যায়।
রোজায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস কমে। কোনো কিছু দিয়ে ইনস্যুলিন রেজিস্ট্যান্স করতে পারলে তা রক্তে চিনি বা গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস কমে যায়। রোজা থাকলে এই কাজটি ঘটে শরীরে। অবিরাম রোজা থাকলে দেহে ইনস্যুলিন রেজিস্ট্যান্স ঘটায়। ইঁদুরের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন না খাইয়ে রাখলে ইঁদুরের বেঁচে থাকার হার বাড়ে এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি প্রতিরোধ করতে পারে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে অন্ধত্ব বাড়ায়।
রোজা হৃৎস্বাস্থ্যের উন্নয়ন করে। দিনের বেলা সব ধরনের পানাহার বন্ধ রাখলে ব্লাড সুগার কমিয়ে রাখার সাথে সাথে হার্ট হেলথ ভালো রাখে। একই সাথে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে রাখে। রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইডস, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে সহায়তা করে। রোজা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে মস্তিষ্কে নতুন নতুন নিউরন তৈরি হয়, ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ব্রেইন সুস্থ থাকে। এর ফলে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ আলঝেইমার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি হয়।
প্রতি এক দিন পর পর যে ইঁদুরকে গবেষকরা না খাইয়ে রেখেছিলেন এরা ৮৩ শতাংশ বেশি দিন বেঁচে ছিল তাদের তুলনায় যাদের নিয়মিত খেতে দেয়া হয়েছিল। দৈনিক না খাইয়ে রাখা ইঁদুরগুলোর মধ্যে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ দেরিতে ঘটে এবং হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা দেরিতে হয়। বৃদ্ধ ইঁদুরের মধ্যে এসব রোগ কমন।
যাযাদি/ এস