বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পাকিস্তানের নির্বাচন আজ, ইমরান না নওয়াজ?

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১২
পাকিস্তানের নির্বাচন আজ, ইমরান না নওয়াজ?

জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে রেখেই পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন, অথচ আগের নির্বাচনে তার দলই জয় পেয়েছিল। দেশটিতে অর্থনৈতিক সঙ্কট ও অন্যান্য আরো সমস্যা থাকলেও নির্বাচনের আগে এটিই প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার ২৪ কোটি ১০ লাখ জনগণের পারমাণবিক শক্তিধর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ইমরানের দল ও আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

এদিন দেশটির ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার তাদের পরবর্তী সরকার কারা গঠন করবে তা নির্ধারণ করবে। একইদিন দেশটির চারটি প্রদেশের আইনসভার নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। একজন ভোটার দুটি করে ভোট দেবেন, একটি জাতীয় আইনসভার জন্য অপরটি প্রাদেশিক আইনসভার জন্য। জাতীয় আইনসভার আসন সংখ্যা ২৬৬টি। এর মধ্যে পাঞ্জাব প্রদেশে আছে সবচেয়ে বেশি, ১৪১টি আসন। সিন্ধু প্রদেশে আছে ৬১টি, খাইবার পাখতুনখওয়ায় ৪৫টি, বেলুচিস্তানে ১৬টি ও রাজধানী ইসলামাবাদ অঞ্চলে ৩টি।

পাঞ্জাব প্রদেশে জয়ী দলই সাধারণত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে এবং একটানা চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সহিংসতা বা কোনো ঝামেলার কারণে ভোট বিঘ্নিত হলে কর্মকর্তারা ভোটের সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন। নির্বাচনের আগে থেকেই দেশটিতে কট্টরপন্থিদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে অন্যতম অস্থিরতা কবলিত প্রদেশ খাইবার পাখতুনখওয়ায় থানায় জঙ্গি হামলায় ১০ পুলিশ নিহত হয়। তিন প্রতিবেশী, ভারত, আফগানিস্তান ও ইরানের সাথে ইসলামাবাদের সম্পর্ক নাজুক হয়ে আছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে এসব ইস্যু নিয়ে কথা তেমন একটা হচ্ছে না। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মূল মনোযোগ ইমরান ও নওয়াজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়েই।

এ বিষয়ে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটের পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ হুসেইন হাক্কানি রয়টার্সকে বলেন, ‘এই নির্বাচনে বিভিন্ন ইস্যু কম আলোচিত হয়েছে, প্রচারাভিযান মূলত নেতাদের ব্যক্তিত্ব দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হয়েছে।’

কারাগারে থাকা ইমরানের পেছনে দাঁড়ানোর জন্য তার লাখ লাখ সমর্থক অপেক্ষা করে আছেন। তাদের বিশ্বাস, সামরিক বাহিনীর ইন্ধনে ইমরান ও তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (টিটিপি) বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে। সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না বলে দাবি করেছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে জেনারেলদের সমর্থন পাচ্ছেন নওয়াজ, এর আগে ২০১৮ সালে তারা ইমারনকে বেছে নিয়েছিলেন।

নওয়াজ ও ইমরান উভয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন, সামরিক বাহিনীর ইশারায় তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। কিন্তু সামরিক বাহিনী তা অস্বীকার করেছে।

হাক্কানি বলেন, ‘এই নির্বাচন দুই ভুক্তভোগীর লড়াই বলে মনে হচ্ছে। নওয়াজ শরিফ ২০১৭ থেকে ২০২২ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ভুক্তভোগী ছিলেন আর এরপর ভুক্তভোগী হওয়ার দাবি করছেন ইমরান খান।’

নওয়াজের দল মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) মঙ্গলবার প্রচারণা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধান প্রধান সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে পূর্ণ পৃষ্ঠাব্যাপী নির্বাচনী বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তাতে তাদের দলনেতাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলে ঘোষণা করেছে।

এই নির্বাচনী লড়াইয়ের আরেক প্রতিযোগী দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। সোমবার করাচিতে এক নির্বাচনী জনসভায় বিলাওয়াল বলেছেন, পাকিস্তানের এই বৃহত্তম শহর যদি তার দল পিপিপিকে (পাকিস্তান পিপলস পার্টি) ভোট দেয় তবে নিশ্চিতভাবে তিনিই হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কারাবন্দী করে ও বিভিন্ন মামলা দিয়ে টিটিপিকে প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হলেও এবং ইমরান ও তার দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা এখনও একটি বড় শক্তি হিসেবেই রয়ে গেছে।

ভোটের আগের দিন বিস্ফোরণে নিহত ২৬

এ দিকে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হতে যখন ২৪ ঘণ্টাও বাকি নেই, তখন বুধবার বেলুচিস্তান প্রদেশে দু’টি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডন। এ ঘটনা আজ বৃহস্পতিবার ভোটের দিনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে গত কয়েক মাসে পাকিস্তান জুড়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে।

বুধবার প্রথম হামলাটি হয় বেলুচিস্তান প্রদেশের পিশিন জেলায় একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি হয় আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী কিল্লা সাইফুল্লাহ শহরে প্রাদেশিক রাজনৈতিক দল জামিয়াত উলামায়ে ইসলাম (জেইউআই) এর একটি কার্যালয়ের কাছে। প্রথম হামলায় ১৪ জন নিহত এবং প্রায় ৩০ জন আহত হন বলে জানান পিশিন জেলার ডেপুটি কমিশনার জুম্মা দাদ খান। কিল্লা সাইফুল্লাহর বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শহরের ডেপুটি কমিশনার ইয়াসির বাজারি। এখন পর্যন্ত দু’টি হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি।

সূত্র : রয়টার্স, দ্য ডন, অন্যান্য

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে