শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হালাল সম্পর্কের সজীবতা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৬
প্রতীকী ছবি

হৃদ-পৃথিবীর অনেকটা জমি মুহাব্বাতের মানুষের দখলে থাকে। পিতা-মাতা, ভাইবোন ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ছাড়াও প্রাণের বন্ধনে আবদ্ধ প্রণয়ের পুষ্পপাড়ার একজন স্পেশাল মানুষের অস্তিত্ব প্রত্যেক হৃদয়ে স্থির, যে মুহাব্বাত জীবনসঙ্গীর জন্য। হালাল সম্পর্কের বারাকাহ দু’টি প্রাণকে সজীবতা আর শুদ্ধতার ছোঁয়ায় প্রফুল্লø চিত্তের অধিকারী করে। রবের পক্ষ থেকে এ সম্পর্ক যেমন রহমতস্বরূপ তেমনি দায়িত্বসচেতন একজন সঙ্গী রবের দেয়া নিয়ামতের অংশ। বৈধ জীবনসঙ্গী শারীরিক, মানসিক, কর্মে ও ভাবনায় সুপ্রভাব বিস্তার করে। জীবনের শুষ্ক মরুপ্রান্তরকে সজীব সতেজ করার ক্ষেত্রে দু’টি হৃদয়ের হালাল বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন কারিমে এ প্রসঙ্গে বলেন- ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা রুম-২১)

ইসলামী সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিবার, পরিবার থেকেই জন্মসূত্রে মুসলিম শিশুরা মু’মিন নারী-পুরুষে রূপ নেয় এবং দ্বীনের সম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাদের নির্দিষ্ট সামর্থ্য, সুযোগ ও সমতা দেখে বিয়ে করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ সুবহানাহু প্রতিটি প্রাণীকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন, সম্পর্কের মধুরতা ও জীবনের পূর্ণতা এবং বৈধভাবে চাহিদা পূরণের ক্ষেত্র হিসেবে দিয়েছেন বিয়ে ব্যবস্থাপনাকে।

আল্লাহ বলেন- ‘হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাচনা করে থাকো এবং আত্মীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।’ (সূরা নিসা-০১)

পরিতাপের বিষয়- হালাল প্রশান্তির মাধ্যম ভালোবাসার এ পবিত্র সম্পর্ককে অপবিত্র করছে ‘কাছে আসার গল্প’ নামে হারামের দিকে প্রসারিত করা একটি বৃহৎ চক্র। আমাদের সমাজে বিয়েপূর্ব যে অনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি করার প্রতিযোগিতা চলছে তা সম্পূর্ণরূপে জাতি ধ্বংসের মূল কারণ, আর ইসলামের শত্রুগোষ্ঠী এর আহ্বায়ক। ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ নামে এ কার্যকলাপ বিজাতীয়, নির্লজ্জ ও নগ্ন সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত, মূলত মুসলিম যুবসমাজকে ধ্বংস করার অতীত ষড়যন্ত্রেরই বর্তমান রূপ। ইসলামবিদ্বেষীদের দ্বারা সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি, সভ্যতার নামে অসভ্যতা, বেহায়াপনার মাধ্যমে পুরো মুসলিম যুবসমাজকে বিপথগামী ও চরিত্রহীন করার মরণপণ চেষ্টা চলছে। আর যুবসমাজকে বিপথগামী করার মাধ্যমে মুসলিম জাতির ধ্বংসের নীল নকশা এঁকে এর বাস্তব রূপে হইহুল্লোড় করার মানসে অপেক্ষা করছে ইসলামের শত্রুরা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাবধান করে বলেছেন- ‘তোমরা জেনা তথা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩২) ‘কাছে আসার গল্প’ রচিত হতে পারে হালাল পন্থায়, অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে সমাজকে রক্ষার ক্ষেত্রে বিয়ে একটি সুন্দর মাধ্যম, কেননা প্রতিটি হালালের মাধ্যমেই কেবল হারামের দরজা বন্ধ করা সম্ভব।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: আমাদের বলেছেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে দৃষ্টিকে অবনমিত করে এবং লজ্জাস্থানকে হিফাজত করে। আর যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজা পালন করে। কারণ রোজা যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত্ত করে।’ (বুখারি-২৬৮৫) আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- মু’মিনা নারীর জন্য পাত্র বাছাইয়ে দ্বীনদার ও চারিত্রিক পবিত্রতাকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি। এ সম্পর্কে ইমাম মালেক রা: বরের জন্য দ্বীনদারি ও চারিত্রিক পবিত্রতাকে যথাযথ উপযুক্ত গুণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। হজরত মোল্লা আলী কারি রহ: বলেন, ‘ধর্ম ও চরিত্র ব্যতীত পাত্রের যদি আর কোনো উপযুক্ত বিশেষণ না থাকে এবং কনে তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তবে বিয়ে বিশুদ্ধ হতে কোনো অসুবিধা নেই।’ সম্পদ কিংবা অধিক মোহর দেয়ার সক্ষমতা উপযুক্ত গুণ নয়; বরং কনের জন্য নিরাপদ ও উত্তম স্বামীর গুণ হচ্ছে দ্বীনদারি ও চারিত্রিক পবিত্রতা। কেননা স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক, বিশেষত স্বামী স্বীয় স্ত্রীর পরম নির্ভরতা ও ভালোবাসার ক্ষেত্র। সুবাসিত দাম্পত্যজীবনের চাবিকাঠি হচ্ছে চরিত্রের পবিত্রতা, পবিত্র জীবনসঙ্গীর উদাহারণ মেশকে আম্বরের মূল্যবান সুবাসের মতো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীরা) তাদের পোশাকস্বরূপ।’ (সূরা বাকারা-১৮৭)

‘বিয়ে’ প্রতিটি জীবনের জন্য বৃহৎ অধ্যায়, পরিশুদ্ধ এ প্রণয়ে আবদ্ধ হওয়ার পর প্রথম প্রভাত মনে হয় যেন সোনালি রোদের মিষ্টি স্পর্শের মতো শুদ্ধ, সঙ্গীর প্রতিটি মুভমেন্ট একটু একটু করে প্রতিনিয়ত ভোরের সূর্যের মতোই নিজেকে জানান দেয়। নতুন পরিণয় অথচ হৃদয় বলে অনন্তকালের এ সম্পর্ক, আসমানি রহমতপ্রাপ্ত এ সম্পর্কে আগাগোড়া সম্পূর্ণটাই অনুভবে সিক্ত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যে দম্পতির প্রতি খুশি, সে দম্পতির এ সম্পর্কের প্রতি মুগ্ধতা বাড়তেই থাকে শুধু। হারামের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগুক হৃদয়ে, হালালের এ পথে উম্মাহর তরুণ-তরুণীদর মনন স্থির হোক এবং পবিত্রতার আদলে জীবনে রচিত হোক বৈবাহিক মধুরতার পরিশুদ্ধ প্রণয়ে কাছে আসার গল্প।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে