শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

রোজাদারের নিশ্বাস তাসবি সমতুল্য

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:৫৫
গাজায় শিশুরা নামাজ পড়ছে

আজ ৩ রমজান; রহমতের তৃতীয় দিন। মুসলিম বিশ্ব এখন একযোগে সিয়াম পালন করছে। অফুরন্ত রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের এ সময়টুকু কাজে লাগাতে মুসলিম নারী-পুরুষ সবাই মশগুল ইবাদত-বন্দেগিতে। রোজাদার মুমিনরা স্বার্থপরতা, জাগতিক মন্দ চিন্তা-ভাবনা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে প্রাণন্ত চেষ্টা চালাচ্ছেন।

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ অপর কোনো মুসলমানের গিবত না করে ততক্ষণ আল্লাহর ইবাদতে থাকে; যদিও সে নিদ্রিত হয়।’ অপর এক হাদিসে বলা হয়, রোজাদারের নিদ্রা ইবাদত এবং তার নিশ্বাস-প্রশ্বাস তাসবি।’

হজরত আলী (আ.) বলেছেন, রোজাদার ব্যক্তির নিদ্রা হচ্ছে ইবাদত, তার নীরবতা হচ্ছে তাসবি এবং তার দোয়া আল্লাহর দরবারে মনজুর হয়ে থাকে এবং তার আমল দ্বিগুণ হয়ে থাকে। আর নিশ্চয় রোজাদার ব্যক্তির জন্য ইফতারের সময় এমন একটি দোয়া রয়েছে যা প্রত্যাখ্যাত হয় না।’

হজরত ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জাতির কাছে সর্বাবস্থায় স্বল্প পরিমাণে আহার গ্রহণই পছন্দনীয় কাজ। কেননা এতে মানুষের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কল্যাণ রয়েছে। আর মুমিনের অন্তরের জন্য অতিরিক্ত আহারের মতো ক্ষতিকর জিনিস আর কিছুই হতে পারে না।’- (মিসবাহুশ শারিয়া)

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমানকে ঘৃণা করবে না এবং ছোট করে দেখবে না। কেননা হতে পারে কোনো মুসলমান তোমার দৃষ্টিতে ছোট ও ঘৃণিত, কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে সে অনেক বড়।’- (মাজমুয়াযে ওররাম)

হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লাহর সান্নিধ্য কামনা করে, সে যেন অন্য সময় কোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস। আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত। ‘মিশকাত’ রমজান গুনাহগুলোকে মুছে ফেলার এবং নেকিগুলোকে প্রস্ফুটিত করার মাস। রমজানের প্রথম রাতেই শয়তান এবং অবাধ্য জিনগুলোকে বন্দি করে রাখা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়, পুরো রমজান মাসে তা খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, বাকি রমজান তা আর বন্ধ হয় না।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ মাসে একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে এবং দোজখের আগুন থেকে সে মুক্তি পাবে। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। বুখারি ও মুসলিম

উপরিল্লিখিত হাদিস দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয়, ইবাদতের ক্ষেত্রে রোজার ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্ব দেওয়া ও কাজে লাগানো প্রত্যেক বুদ্ধিমান মুমিন বান্দার জন্য অবশ্যকর্তব্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে দিনে রোজা রাখতেন আর রাতে দীর্ঘক্ষণ ইবাদত-বন্দেগি করতেন। সাহাবায়ে কেরামও রমজান মাসকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। হাদিস শরিফে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং এর রাত্রিগুলোতে পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করে, সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যাবে।

রমজানের রোজা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়, মানুষের তামাম কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে-মুছে দেয় এবং আত্মাকে দহন করে ইমানের শাখা-প্রশাখা সঞ্জীবিত করে। সর্বোপরি আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। এর একটি হলো তার ইফতারের সময়, আর অপরটি আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়। বুখারি ও মুসলিম

বস্তুত রোজা আমাদের জন্য বরকত ও রহমতস্বরূপ। এর মধ্যে আল্লাহতায়ালার নিয়ামত, বরকত তথা মানুষের জন্য মুক্তি, শান্তি ও মঙ্গল নিহিত রয়েছে। রমজানের ফজিলত বেশি হওয়ায় এ মাসের হক যথাযথভাবে আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। এ মাসে প্রতিটি নেক আমলের জন্য ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত নেকি দেওয়া হয়। তবে রোজার সওয়াব আরও বেশি। কারণ রোজা একমাত্র আল্লাহর জন্য। তাই এর প্রতিফল আল্লাহতায়ালা নিজে প্রদান করবেন। তবে শর্ত হলো, নিজ অন্তরকে সব ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা ও কুটিলতামুক্ত করতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং অনর্থক শোরগোল না করে। যদি কেউ গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে তবে সে যেন বলে, ‘আমি রোজাদার’। বুখারি ও মুসলিম

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে