শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

মুমিনের আখলাক যেমন হওয়া উচিত 

আব্দুল মুমিন
  ১৬ মে ২০২৪, ১২:৩৪
-ফাইল ছবি

আখলাক শব্দটি আরবি খুলুক শব্দের বহুবচন। অর্থ হলো আচার, আচরণ, অভ্যাস, শিষ্টাচার, নৈতিকতা,নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি। মানুষের আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র এগুলোর প্রতিফলন হয় কথা ও কাজের মাধ্যমে। সুতরাং কথা ও কাজ শরীয়ত মোতাবেক হলে তখন তাকে ইসলামি আখলাক বা ধর্মীয় আচরণ বলা হয়।

একজন মুসলমানের মূল বুনিয়াদ হল ঈমান। কার ঈমান কেমন, কতটুকু সে বিষয়ে আমাদের জ্ঞান নেই। এজন্য ধারনাবশত কারো ঈমান বা আমল নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, যে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করিও না; কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। [১৭-৩৬] যার ঈমান যত নির্মল, স্বচ্ছ আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক তত গভীর। সুদৃঢ়।

ঈমান আনয়নের পর আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো, সালাত আদায় করা। রমজান মাসে সিয়াম পালন করা। বিত্তশালী হলে হজ পালন করা এবং যাকাত প্রদান করা। এছাড়াও ঈমানদার হিসেবে আমাদের উপর রয়েছে শতশত দায়িত্ব। এক মুসলমান আরেক মুসলমানের উপর প্রাথমিক কর্তব্য হলো, সালাম দেওয়া ও হাসিমুখে সম্মানের সাথে কথা বলা। এগুলোই হলো মুসলমানের আখলাক বা আচরণের শুরু।

কোনরকম দায়সারা বা আনমনা হয়ে সালামের উত্তর দেওয়া ঠিক নয়। আন্তরিকতার সাথে মুখে মৃদু হাসি নিয়ে সালাম দেওয়ার দ্বারা পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। মনোমালিন্য দূর হয়। সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থকড়ি বিত্ত বৈভবের তারতম্য করা উচিত নয়। অফিসের সাহেবরা সাধারণ কর্মকর্তাদের সালাম দেয় না। সাধারণ কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব পালন হিসেবে সাহেবদের সালাম দেয়। সাহেবরাও দাম্ভিকতাবশত মাথা নাড়িয়ে অথবা হুহু করে উত্তর দেয়। এরূপ সালামের দ্বারা পরস্পর ভালো সম্পর্ক সৃষ্টি হয় না। অন্ধ আভিজাত্যের নিচু মনের স্বভাব থেকে যায়। অথচ সালাম দেওয়ার জন্য কোন প্রকার অর্থ-কড়ি, শক্তি- সামর্থের প্রয়োজন হয় না। শুধু আমাদের চেষ্টা, চিন্তাও চেতনার অভাব।

ইসলামে আখলাকের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো, সত্যবাদিতা। একজন অপরজনকে সালাম দেয়ার পর ভালো মন্দের খোঁজখবর নেয়া নৈতিক দায়িত্ব। প্রয়োজনে গল্পগুজব, কথাবার্তা বলা‌। কথাবার্তার প্রাথমিক লক্ষণীয় বিষয়, সত্য বলা। মিথ্যা সম্পূর্ণ এগিয়ে চলা। রাসূল (সাঃ) মক্কা ও মদিনাসহ গোটা আরব বিশ্বে সত্যবাদী, বিশ্বাসী বা আলামিন নামে ভূষিত ছিল। একবার একজন রাসূল (সাঃ) কে বললেন, মুমিন কি কখনো যেনা করতে পারে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ পারে! শয়তানের কুমন্ত্রণায় করতে পারে। এমন অনেকগুলো গুনাহের কথা জিজ্ঞেস করাতে রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন করতে পারে । কিন্তু রাসূল (সাঃ) যখন বলা হলো মুমিন কি কখনো মিথ্যা বলতে পারে? তিনি বলেছিলেন, মুমিন কখনোই মিথ্যা বলতে পারে না! এর দ্বারা অনুমিত হয় ইসলামে আখলাক বা ইসলামী আচরণের ক্ষেত্রে সত্যবাদীতার মূল্যায়ন কত উপরে।

ইসলামী আখলাকের তৃতীয় নম্বর বৈশিষ্ট্য হলো, আমানত রক্ষা করা‌। শুধু একজনের ধন-সম্পদ অন্যজনের কাছে গচ্ছিত রাখার নাম আমানত নয়। পরস্পর কথা হলে অন্যান্য নিকট সেটা প্রকাশের অনুমোদন না থাকলে সেটাও আমানত। শরীরের প্রতিটি অঙ্গপতঙ্গ আমাদের নিকট আমানত। ইচ্ছে করে নিজেকে ক্ষতি করার অধিকার আমাদের নেই। এমন অনেক আমানত আমাদের নিকট গচ্ছিত রয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মুনাফিকদের নিদর্শন তিনটি। তার মধ্যে একটি হলো আমানতের খেয়ানত করা।

ইসলামী আখলাকের চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হলো, ওয়াদা রক্ষা করা। ওয়াদা ভঙ্গের দ্বারা বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন হয়। পর্দা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের উত্তম আদর্শ ছিলেন, রাসূল (সাঃ)। তিনি বলেন মুনাফিকের আরেকটি নিদর্শন হলো, মুনাফিক যখন ওয়াদা করবে তখন তা ভঙ্গ করবে।

ইসলামে আখলাকের পঞ্চম বৈশিষ্ট্য হলো, প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি বিবেচনা করা। মানুষ আর পশুর মাঝে পার্থক্য, মানুষের বিবেক আছে পশুর বিবেক নেই। যে নিজ স্বার্থের জন্য অন্যকে ক্ষতি করতে পারে তার মধ্যে মনুষত্ব নেই বললেই চলে। মুসলমান হিসেবে বিবেচনার মন-মানসিকতা থাকা আবশ্যক। এমন অনেক ইসলামি আখলাক বা আচরণ রয়েছে যেগুলো জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে লক্ষ্য করা জরুরী। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক, আমিন।

শিক্ষার্থী : জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে