শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড: যা ঘটেছিল সেদিন

নতুনধারা
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৩:১৫

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টিএসসির সামনে অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। সেই হামলায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান অভিজিৎ।

এ বছর একুশে বইমেলায় দুটি বই প্রকাশ হয় অভিজিতের। সে কারণেই স্ত্রী বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসেন তিনি। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলায় একটি অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে হামলার শিকার হন তারা।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সিটিটিসির এ অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে ১২ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেলেও তাদের মধ্যে পাঁচজনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। একজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ায় অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে মোট ছয়জনকে। আসামিরা জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য।

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আগের নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা জিয়ার ‘নির্দেশেই’ সেদিন অভিজিতের ওপর হামলা হয় বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।

সেখানে বলা হয়, আসামি মোজাম্মেল, আকরাম, হাসান ও আবু সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৯২/২ নম্বর বাসা ভাড়া নিয়ে অভিজিৎ রায়কে বিভিন্ন স্থানে অনুসরণসহ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন।

আসামি মোজাম্মেল রেকি টিমের নেতৃত্বে থেকে অপারেশন শাখার মুকুল রানা ওরফে শরিফুলকে অনুসরণসহ এ হত্যাকাণ্ডের সার্বিক সহযোগিতা এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশন শাখার সদস্য আসামি আরাফাত রহমান, আলী ওরফে খলিল, অনিক এবং অন্তু সাংগঠনিকভাবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করার।

অভিজিৎকে তারা চারজনই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগপত্র বলা হয়। এসময় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও চাপাতির আঘাতে একটি আঙুল হারান।

অপারেশন শাখার চারজন আসামি যাতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারেন তার জন্য চারপাশে বেষ্টনি করে রাখেন আসামি জিয়া, সেলিম, মুকুল রানা, মোজাম্মেল, আবু সিদ্দিক ও আকরাম।

ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় পরদিন শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে মঙ্গলবার। মামলাটির পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এক আসামিকে দিয়েছেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান ও বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক, জঙ্গি নেতা আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম।

আদালত সূত্র জানায়, মামলাটি মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রায়ের জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ছিল। রায় ঘোষণা উপলক্ষে কাশিমপুর কারাগারে থাকা চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। দুই আসামি শুরু থেকে পলাতক।

আসামিদের মধ্যে উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী ছাড়া বাকি সবাই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। এ মামলায় ফারাবির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। তবে জিয়া ও আকরাম পলাতক আছেন।

এর আগে দুই পক্ষের যুক্ততর্ক শুনানি শেষে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ মামলার রায়ের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাখেন।

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে