শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

​শাজাহানপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই

আবদুল ওহাব, শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:২০

মুক্তিযুদ্ধের সময় বগুড়ার শাজাহানপুরে যেসব স্থানে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ হয়েছে এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধা জীবন বিসর্জন দিয়েছেন সেসব স্মৃতি রক্ষায় আজ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। চরম অবহেলায় আজ বিলুপ্তির পথে মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতি।

স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে জানা যায়, উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে আড়িয়া বাজারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেনা ক্যাম্প, টর্চার সেল, অস্ত্র ও গোলাবারুদের ডিপো ছিল। এখান থেকে গোটা উত্তরবঙ্গ সরবরাহ করা হতো গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র। বিষয়টি জানতে পেরে এই স্থানটিতে ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল রাতের আঁধারে চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চরম প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দীর্ঘ সময় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একপর্যায়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের হত্যা ও আটক করে গোলাবারুদসহ ক্যাম্পটি দখলে নেয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। পতন হয় আড়িয়া গ্যারিসনের। আর এ অপারেশনে নেতৃত্বদানকারী বগুড়ার টিএইচ আহমেদের ছেলে মাসুদসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

শহীদদের বুকের তাজা রক্তক্ষরণের এই স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়েই বগুড়া জেলা কমান্ডার (বৃহত্তর বগুড়ার পূর্বাঞ্চল) নজিবুর রহমান সরকার এবং স্থানীয়রা মিলে শহীদ মাসুদের রক্তে ভেজা আড়িয়াবাজার এলাকার নামকরণ করেন ‘মাসুদ নগর’ এবং একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতি সংরক্ষণ না করায় মুক্তিযোদ্ধাদেরই হাতে লেখা নাম ফলক ‘মাসুদ নগর’, স্মৃতিস্তম্ভ, সেনা ক্যাম্প ও ট্রেনিং গ্রাউন্ড দখলের আগ্রাসনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভ‚মিগুলোর মালিকানা দাবি করে ভেঙে ফেলা হয়েছে এসব স্মৃতি। আগামী প্রজন্ম জানতেও পারবে না মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস। বলতে পারবে না এ এলাকায় ঘটে যাওয়া ’৭১-এর স্মৃতি বিজড়িত ভয়াবহ দিনগুলোর কথা।

বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য মুক্তিযুদ্ধকালীন বগুড়া জেলা কমান্ডার (বৃহত্তর বগুড়ার পূর্বাঞ্চল) নজিবুর রহমান সরকার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শাজাহানপুর উপজেলা শাখার কমান্ডার আব্দুল মান্নান, শহীদ মাসুদের বড় ভাই মঞ্জু আহমেদ, ভাতিজা বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ঝুনু, শহীদ মনিরুজ্জামানের বড় মেয়ে সুলতানা রাজিয়া, নাতি ঢাকা তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরকার বাদল, মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ, ডা. সোলায়মান আলীসহ দলমতনির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বারবার সভা সমাবেশ ও মানববন্ধন করে মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানান। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। যা শুধু বেদনাদায়ক না বাঙালির ইতিহাসের প্রতিও চরম অবমাননাকর। এদিকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গৌর গোপাল ও ডেপুটি কমান্ডার হজরত আলী বলেন, এতদিনেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানটি সংরক্ষণ না হওয়াটা বড়ই দুঃখজনক। আর এ সম্পর্কে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ বলেন, পর্যায়ক্রমে মুক্তিযদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তাই আবারও মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে স্থানটি সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় সকল মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজ ও এলাকাবাসীর ।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে