শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

চন্দ্রবর্ষ ও ইসলামের পবিত্র মাসসমূহ: আধ্যাত্মিকতা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১১
চন্দ্রবর্ষ ও ইসলামের পবিত্র মাসসমূহ: আধ্যাত্মিকতা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন
ফাইল ছবি

প্রাচীনকাল থেকেই চাঁদের সাথে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতি চন্দ্রচক্রের ওপর ভিত্তি করে সময়, উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠানের হিসাব করে। যেমন, ইসলাম ধর্মে চাঁদ দেখেই রমজান মাস শুরু হয় এবং ঈদ পালন করা হয়। আবার, চীনের লোকেরা তাদের চন্দ্রবর্ষ উদযাপন করে নতুন চাঁদের সাথে।

চীনা নববর্ষ, যা "চন্দ্র নববর্ষ" বা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত, তাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীন ও অন্যান্য দেশের মানুষ চন্দ্রচক্রের ওপর ভিত্তি করে নতুন বছরকে বিভিন্ন পশুর নামে চিহ্নিত করে থাকে। ২০১৯ সাল ছিল শুকর বছর, ২০২০ ছিল ইঁদুর, ২০২১ ষাঁড়, ২০২২ ব্যাঘ্র, আর এই বছর, ২০২৩ খরগোশ। এই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সাল ড্রাগনের এবং ২০২৫ হবে সর্পের বছর।

ইসলামের চন্দ্রবর্ষ ও রজব মাসের তাৎপর্য

ইসলামী চান্দ্রবর্ষের এক বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে পবিত্র মাস রজব। গত ২৩ জানুয়ারি ১৪৪৪ হিজরির সপ্তম মাস রজব শুরু হয়েছে। এই মাস, যা "অপসারণ" বা "বিরত থাকার" অর্থ বহন করে, আল্লাহ ঘোষিত চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে একটি। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন:

"মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময় থেকেই জারি করা বিধান অনুসারে আল্লাহর কাছে গণনার জন্য মাস ১২টি। এর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ। এটি স্থায়ী বিধান। অতএব এর মধ্যে তোমরা নিজেদের ওপর জুলুম কোরো না।"

(সূরা তওবা, আয়াত ৩৬)

এই পবিত্র মাসগুলো হলো মুহররম, রজব, যুল-কাদাহ এবং যুল-হিজ্জাহ। এ মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ। অন্যায় কাজ এ সময়ে বহুগুণ বেশি শাস্তিযোগ্য এবং ভালো কাজের প্রতিদানও বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

রজব মাস: প্রস্তুতির সময়

রজব মাস হলো রমজানের জন্য মানসিক প্রস্তুতির সময়। এ মাস থেকেই মুসলমানরা নেক কাজ বাড়ানো, পাপ থেকে বিরত থাকা এবং রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ ও সালাম পাঠ বৃদ্ধি করার অভ্যাস শুরু করে।

পবিত্র রমজান মাসের আগে শাবান মাস এবং তার আগের রজব মাস মুসলমানদের আত্মিক প্রস্তুতির এক অনন্য সুযোগ। এই মাসে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের জন্য সাদাকা প্রদান, অতিরিক্ত ইবাদত এবং নফল রোজার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

নিষিদ্ধ মাস ও ইসলাম

ইসলামের নির্ধারিত ১২টি মাসের মধ্যে চারটি মাস আল্লাহর বিশেষ বিধান দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে:

১. মুহররম

২. রজব

৩. যুল-কাদাহ

৪. যুল-হিজ্জাহ

এই চারটি মাসে মুসলমানদের যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে শত্রুপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করা হলে তা অনুমোদিত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এ মাসগুলোতে নিজেদের ওপর জুলুম করতে নিষেধ করা হয়েছে।

পবিত্র মাসগুলোর তাৎপর্য

- *মুহররম*: নতুন ইসলামী বছরের শুরু, যেখানে অনেক কিছু নিষিদ্ধ।

- *রজব*: অপসারণের মাস, রমজানের প্রস্তুতির সময়।

- *যুল-কাদাহ*: বসার মাস, যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ।

- *যুল-হিজ্জাহ*: হজের মাস, জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরজ পালন।

আধুনিক যুগে পবিত্র মাসের গুরুত্ব

ইসলামের নিষিদ্ধ মাসগুলোতে অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা, বিশেষত হত্যা ও গুমের মতো কাজ থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের বিশ্বে, যেখানে নৈতিকতা ও ন্যায়বিচারের অভাব প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়, সেখানে ইসলামের এই নির্দেশনা মানবসমাজে শান্তি ও সহাবস্থানের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

এই মাসগুলোতে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করা শুধু আমাদের ইহকাল নয়, পরকালেও সুপার প্লট এবং জান্নাতের মালিকানা লাভের পথ সুগম করে। তাই, প্রতিটি মুসলমানের উচিত এই মাসগুলোকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা।

চন্দ্রচক্রের উপর ভিত্তি করে চীন ও ইসলামিক সংস্কৃতির মধ্যে যে মিল, তা আমাদের শিখায় সময় ও জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করা। আল্লাহর হুকুম মেনে চলা, নৈতিক জীবনযাপন এবং আত্মিক উন্নতির জন্য পবিত্র মাসগুলো আমাদের একটি বিরাট সুযোগ দেয়।

পবিত্র রজব মাসে আমরা সবাই যেন আরও বেশি নেক আমল করি, অন্যায় থেকে দূরে থাকি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনোনিবেশ করি।

লেখক: চেয়ারম্যান, আলহাজ্ব কে,এম, আব্দুল কারীম রাহিমাহুল্লাহ ট্রাস্ট

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে