শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢিমেতালে চলছে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোনা
  ০৮ মে ২০২৩, ১১:৩৮
আপডেট  : ১০ মে ২০২৩, ১৪:১৪

নেত্রকোনায় জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সাংগঠনিক অবস্থা দিন দিন ঝিমিয়ে পড়েছে। আগামী ২৩ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণায় জেলা বিএনপির রাজনীতির হালচাল নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। জেলা শহরের ছোটবাজারস্থ জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এক বছরের অধিক সময় তালাবদ্ধ। অচিরেই মেয়াদউত্তীর্ন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ভেঙ্গে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের জন্য নেতাকর্মীরা জোর দাবি করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩-১৪ মাস ধরে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে দলের কর্মসূচিগুলো। জেলা শহরের ছোটবাজারস্থ দলীয় কার্যালয় এক বছরের অধিক সময় ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় এবং প্রধান কার্যালয়ের সামনের সাইনবোর্ডটুকো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ৩ মাস মেয়াদী জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির গত ৫ বছর অতিবাহিত হলেও সম্মেলনের মাধ্যমে পূণাঙ্গ কমিটি এখনো গঠন করতে পারেনি। জেলা শহরের আধুনিক সদর হাসপাতাল রোডস্থ জেলা বিএনপির আহবায়কের বাসভবনের নীচতলায় রাজনৈতিক কার্যালয়ে নামে মাত্র কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে ঢিমেতালে চলছে জেলা বিএনপির একটি গ্রুপের কর্মসূচিগুলো।

অন্যদিকে জেলা শহরের ছোটবাজারস্থ দলীয় কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো থেকে দুই বছরের অধিক সময় ধরে জেলা বিএনপির বিগত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নমীনি ও জেলা যুবদলের ১নং সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনির নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীও সকল বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করেই অংশগ্রহণ করছেন।

এছাড়াও জেলার বারহাট্রা, আটপাড়া, কেন্দুয়া উপজেলাসহ জেলা বিএনপির বেশ কয়েকটি ইউনিট কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীন কোন্দাল বিরাজ করছে। আহবায়ক এবং সদস্য সচিব উভয়েই এলাকাবিমুখ। জেলা বিএনপির প্রধান কার্যালয় তালাবন্ধ থাকায় সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও হতাশাগ্রস্থ।

জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল গাফফার ঠাকুর তুলন বলেন, জেলা শহরে ঝিমিয়ে পড়া বিএনপিকে চাঙ্গা করে তুলছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনি।

২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় নেত্রকোনা পৌরসভা নির্বাচনে জেলা বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে ধানের শীর্ষ প্রতীকে আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

গত পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জেলা শহরের ছোটবাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনিকে এবং পরবর্তীতে গাজীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে নেত্রকোনায় আনা হয়। আন্দোলনে নেতৃর্ত্বের কারণে রনির নামে প্রায় ৩৬-৩৭টি মামলা হয়েছে।

জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ জাহিদুল আলম বলেন, বিগত ২০১৮ সালে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আনোয়ারুল হককে আহবায়ক এবং কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে সদস্য সচিব করে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অনুমোদন করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটি।

জেলা শহরের ছোটবাজরস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার পূর্বমূহুতে জেলা বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনি গ্রুপের কর্মীদের সাথে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস.এম মনিরুজ্জামান দুদুর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর থেকে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি শহরের ছোটবাজারস্থ দলীয় কার্যালয় বিমূখ হয়ে পড়েছেন। দলের প্রধান কার্যালরের পরিবর্তে শহরের হাসপাতাল সড়কে ও শহরের কুড়পার এলাকার মাস্টারবাড়ি রোডে নামেমাত্র কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে জেলা বিএনপি।

জেলা বিএনপির আসন্ন ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. মো. আনোয়ারুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা এটিএম আব্দুল বারি ড্যানি, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবু তাহের তালুকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন খান টিটোসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী।

সাধারন সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এস. এম শফিকুল কাদের সুজা, জেলা কৃষকদলের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা সালাউদ্দিন খান মিলকী, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্রনেতা এস. এম মনিরুজ্জামান দুদুসহ বেশ কয়েকজন পরিছন্ন ইমেজের নেতা। প্রার্থীরা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। আসন্ন ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে কে আসছেন নতুনভাবে নেতৃত্বে এনিয়ে সর্বত্রই জোর আলোচনা শোনা যাচ্ছে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. মো. আনোয়ারুল হক এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, জেলা প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার পরও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের একাধিকবার হামলার কারণে ছোটবাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ে কিছুদিন ধরে আমরা বড় কোন সভা সমাবেশ করতে পাড়ছি না। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা এবং পুলিশের হয়রানি চলমান রয়েছে। বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সাংগঠনিকভাবে দলের অভ্যন্তরে নেতৃর্ত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। বাকী কয়েকটি উপজেলা বিএনপির সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন করে পরবর্তীতে জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। অচিরেই দলীয় কার্যালয়ের তালা খুলে কিছু সংস্কারের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে সকল অঙ্গ সংগঠনের কর্মসূচি দলীয় কার্যালয়ে পালন করা হবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে